চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ দেশজুড়ে

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীসহ সারাদেশে বৃদ্ধি পেয়েছে মশার উপদ্রব। আর এই অতিরিক্ত মশার কারণে হঠাত করেই বেড়েছে চিকনগুনিয়া জ্বরের প্রকোপ। এই জ্বর নিয়ে প্রতিদিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে আসছে অসংখ্য রোগী। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, সমপ্রতি চিকনগুনিয়া নামে একটি ভাইরাসজনিত রোগ মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস যে এডিস মশা বহন করে, সেই মশাই চিকনগুনিয়া ভাইরাসও বহন করে। চিকনগুনিয়া ভাইরাসবাহী মশার কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির তিন থেকে চার দিনের মতো শরীরের জ্বর থাকে। প্রখ্যাত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, মশা নিধন ছাড়া চিকনগুনিয়ার প্রতিকার সম্ভব নয়। বৃষ্টি হওয়ার কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত অতিরিক্ত মশার কারণেই চিকনগুনিয়া জ্বরের প্রকোপ কমছে না। তিনি বলেন, চিকনগুনিয়া জ্বর ৫/৬ দিনের মধ্যে ভাল হলেও শরীরে গিরায় গিরায় ব্যথা এক মাসেরও বেশি সময় পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে তিন দিনের জ্বর ও ব্যথা থাকলে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে কোন ভাবেই এন্টিবায়োটিক সেবন না করার পরামর্শ চিকিত্সকদের। তবে রক্তক্ষরণ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। জ্বরের সময় ডাবের পানি, স্যালাইনসহ তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন বলেন, প্রতিদিন শিশুরা চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে। তবে এই জ্বরের চিকিত্সায় প্যারাসিট্যামল ছাড়া আর কোনো জ্বর কমানোর ওষুধ সেবন করা যাবে না। চিকনগুনিয়া রোগে প্যারাসিট্যাসল ছাড়া অন্যসব ওষুধ সেবনে রক্তক্ষরণ হতে পারে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, মেয়রের বাড়িতেও মশা আক্রমণ করে। তাই মশা নিয়ে মেয়রও কাহিল। তবে মশক নিধনের জন্য আমরা তত্পরতা আরও বাড়িয়েছি। এবার বাজেটে ২৫ কোটি টাকা রেখেছি মশক নিধনের জন্য। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার  ছড়িয়ে পড়া বন্ধে বাড়ির আশেপাশে যেনো পানি জমতে না পারে সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একই সঙ্গে বাড়ির আঙিনা, ফুলের টব, ভাঙা অব্যবহূত পাত্রে, এসিতে জমে থাকা পানি অপসারণের মাধ্যমে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সবাই সহযোগিতা করবেন। এদিকে চিকনগুনিয়ার জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঢাকার ২৩টি এলাকাকে চিহ্নিত করেছে রোগ পর্যবেক্ষণকারী সরকারের সংস্থা আইইডিসিআর। এলাকাগুলো হলো- ধানমণ্ডি ৩২, ধানমণ্ডি ৯/এ, উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর, মধ্যবাড্ডা, গুলশান-১, লালমাটিয়া, পল্লবী, মগবাজার, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, রামপুরা, তেজগাঁও, বনানী, নয়াটোলা, কুড়িল, পীরেরবাগ, রায়ের বাজার, শ্যামলী, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর, মণিপুরিপাড়া, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, মিরপুর-১ ও কড়াইল বস্তি। গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর এই ২৩টি এলাকায় চিকনগুনিয়ার বাহক মশার ঘনত্ব বেশি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, চিকনগুনিয়া চিকিত্সার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। তবে মশক নিধনের দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের নয়। তিনি বলেন, বাড়িঘরের মধ্যে অনেক সময়ে দীর্ঘ দিন পানি জমে থাকে ফলে সেখানে এডিস মশার উত্পত্তি হতে পারে। তাই বাড়ির ভিতরে, বাড়ির ছাদে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে জনগণকে খেয়াল রাখতে হবে।