চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জে অপারেশন ঈগ্লহান্ট : জঙ্গি আস্তানায় মুহুর্মুহু গুলিবিনিময়

স্টাফ রিপোর্টার: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহনী শিবনগর গ্রামের জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় অপারেশন ঈগলহান্ট শুরু করেছে সোয়াট টিম। অভিযান শুরু হওয়ার পর ওই এলাকায় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা গেছে। আস্তানার ভেতরে বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া গেছে। পুলিশের সোয়াট সদস্যরা ওই বাড়ির দেয়াল ভেঙে অভিযান শুরু করেছে। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সোয়াট সদস্যরা। অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বুধবার দুপুরেই দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি এনে রাখা হয় কাছাকাছি। চারদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সকালেই এলাকার বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। রাতে অভিযান চালানোর জন্য এনে রাখা হয়েছিলো জেনারেটর। গতকাল সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল মান্নান অভিযান শুরুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম জানান, জঙ্গিদের অবস্থানের খবর পেয়ে বুধবার ভোরে উপজেলার শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাসের মালিকানাধীন ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলে পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম বলেন, ওই বাসা ঘিরে ফেলার পর ভেতর থেকে গুলি ছোড়া হয়। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। তবে ওই বাড়িতে কি পরিমাণ বিস্ফোরক বা গোলাবারুদ আছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর সার্কেলের এএসপি মাইনুল ইসলাম জানান, একতলা ওই বাড়িতে রফিকুল আলম আবু (৩০) নামের এক ব্যক্তি এবং তার স্ত্রী-সন্তানসহ চারজন থাকেন বলে তাদের কাছে প্রাথমিক তথ্য রয়েছে। সকাল থেকে কয়েক দফা মাইকে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে। আশপাশের চারটি বাড়ির লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় অভিযান শুরু আগ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেনি।

কাউন্টার টেররিজমের আবদুল মান্নান বলেন, ওই বাড়ির ভেতরে নারী ও শিশুসহ চারজন আছে বলে আমরা ধারণা করছি। আমরা চেষ্টা করব শিশুটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে।

কে এই আবু? শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে আমবাগানের মধ্যে একতলা ওই বাড়ির মালিক ৭৫ বছর বয়সী সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাস। তিনি এলাকায় ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। নিজের পরিবার নিয়ে পাশেই আরেকটি বাড়িতে তিনি থাকেন। স্থানীয়রা জানান, মাস তিনেক আগে চাচরা গ্রামের দিনমজুর আফসার আলীর ছেলে রফিকুল আলম আবুকে ভাড়া ছাড়াই ওই বাসায় থাকতে দেন জেন্টু বিশ্বাস। একসময় আলিয়া মাদ্রাসায় পড়া আবু একজন ভ্রাম্যমাণ মসলা বিক্রেতা ছিলেন। তার ৮ ও ৬ বছর বয়সী দুটি মেয়ে রয়েছে। ত্রিমোহনীর ওই বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে চাচরা গ্রামে আবুর বাবা-মা থাকেন। সকালে সাংবাদিকরা সেখানে গেলে আবুর মা ফুলছানা বেগম বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে সুমাইয়া খাতুনের সাথে বিয়ের পর একই উপজেলার আব্বাস বাজারে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন আবু। মাস তিনেক আগে তিনি জেন্টুর বাড়িতে ওঠেন। সকালে পুলিশ আবুর বাসা ঘিরে ফেলার আগেই কানসাঁট ইউনিয়নের আব্বাস বাজার এলাকার তিনটি বাড়ি ঘেরাও অভিযান চালানো হয়। তবে সেখানে কাউকে গ্রেফতারের কথা পুলিশ স্বীকার করেনি। মাহফুজুর রহমান ওরফে মোহন (২৮) ও আবদুস সালাম (৩৫) নামের দুজনকে গত মঙ্গলবার রাতে শিবনগর এলাকা থেকে আটক করেছে পুলিশ। আটক করার বিষয়ে পুলিশ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে কিছু জানায়নি।