ঘটনাস্থল পরিদর্শন সিআইডির : আটককৃত একজনের কাছ থেকে কোনো তথ্য মিলছে না

স্টাফ রিপোর্টার: গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় লোমহর্ষক হামলার ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। সংগ্রহ করেছে বিভিন্ন আলামত। অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকা সন্দেহভাজন ওই যুবকের কাছ থেকে কোনো তথ্য আদায় করতে পারেনি গোয়েন্দারা। পুলিশ বলছে, আটককৃত যুবক ভিনদেশি। তাদের ধারণা সে রোহিঙ্গা হবে। পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেছেন, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় মামলা হলে নবগঠিত কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইউনিট তদন্ত করবে।

জানা গেছে, বহুল আলোচিত এ ঘটনায় এরই মধ্যে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে সিটি ইউনিট, ৱ্যাব, পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) এবং সিআইডি। পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলার বিষয়ে কূটনীতিক পাড়া থেকে সিদ্ধান্ত আসবে। তবে মামলা নিতে আমরা প্রস্তুত। এদিকে, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় যায় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের পাঁচ সদস্যের একটি দল। প্রায় একই সময়ে ওই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে ডিবির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলও। এ সময় সিআইডির পরিদর্শক আবুল হাসান বলেন, আলামত সংগ্রহ করার জন্য তারা রেস্তোরাঁয় এসেছেন। ঘটনার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক ব্যক্তি ভিনদেশি। তাদের ধারণা সে রোহিঙ্গা। তার ভাষাও বুঝতে পারছেন না তারা।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে রেস্তোরাঁটিতে তলোয়ার-আগ্নেয়াস্ত্র উচিয়ে ঢুকে পড়ে কয়েকজন জঙ্গি। তারা দেশি-বিদেশিদের জিম্মি করে। ঘটনার পরপরই অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন। আহত হন ৪০ জনের মতো। জঙ্গিরা ওই রাতের বিভিন্ন সময় তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জন জিম্মিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। পরদিন শনিবার সকালে যৌথ বাহিনী ওই রেস্তোরাঁয় কমান্ডো অভিযান চালায়। এতে ৬ জঙ্গি নিহত হয়। আটক করা হয় একজনকে। তবে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করে কমান্ডোরা।

বাংলাদেশি কারও পরামর্শে এই হামলা: ‘বাংলাদেশি কারও পরামর্শে গুলশানের হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় অংশ নেয়া সবাই বাংলাদেশি। তাদের সাথে বিদেশি কারও যোগাযোগ নেই। এরা সবাই স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা জঙ্গি’ বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকাল বিকালে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখার পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঘটনার ৫ মিনিট পরই পুলিশ সদস্যরা সেখানে পৌঁছায়। পুলিশের তখন যা করণীয় তাই করেছে। জঙ্গিরা যেন না পালিয়ে যেতে পারে এ জন্য চতুর্দিকে ঘিরে ফেলা হয়। সেই ঘেরাওয়ের মুহূর্তে পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং সেনাবাহিনী এসে এর পরিসমাপ্তি ঘটান। ইউনাইটেড হাসপাতালে ২২ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তিনজন বীর পুলিশ সদস্য আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দেশ মাতৃকার জন্য বীরত্বের সাথে জঙ্গিদের মোকাবিলা করেছেন, তারা স্থান ত্যাগ করেন নাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কমান্ডো অভিযানে নিহত জঙ্গিরা কিভাবে এখানে এসেছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। এদের সবারই বাংলাদেশে একটা অবস্থান রয়েছে। সবারই বাংলাদেশে বাবা-মা আছে। এদের বাবা-মা হয়তো খোঁজাখুঁজি করেছিলো তারা যে জঙ্গি সংগঠনে জড়িত হয়েছে, তাদের বাবা-মা জানতেন না, এখন জানলেন। এই জঙ্গিদের উত্পত্তি বাংলাদেশেই। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট মামলা তদন্ত করবে। এ সময় ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, গুলশানের ডিসি মোস্তাক আহমেদ খান, গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাহউদ্দীন মিয়াসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।