গাংনীর বামন্দী পশুহাটে ব্যাপক গরু-ছাগল আমদানি : দর পড়ে যাওয়ায় দিশেহারা বিক্রেতারা

 

বামন্দী হাট থেকে ফিরে মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন পশু হাটে গত সপ্তাহে বেচা-কেনা জমে উঠলেও এবার বিক্রেতাদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। আশানুরূপ দামের আশায় তৃপ্তির ঢেকুর তুললেও গতকাল শুক্রবার বামন্দী-নিশিপুর পশুহাটে ব্যাপক দর পতন দেখা গেছে। জেলার সবচেয়ে বড় এই পশুহাটে ব্যাপক আমদানি হওয়ায় গরু প্রতি ১০-১৫ হাজার টাক পর্যন্ত দর নেমে যায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ঠরা। কোরবানির পশু বাজারের শেষ মুহূর্তে দর পড়ে যাওয়ায় পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারী ও স্থানীয় ব্যাপারীরা।

বামন্দী-নিশিপুর হাটে এ মরসুমের সর্বোচ্চ পশু আমদানি হয় গতকালের হাটে। বাজারের নির্দিষ্ট স্থানে পশু রাখার জায়গা সংকুলান না হওয়ায় হাট ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের সড়ক ও খোলা স্থানে। তবে আমদানির তুলনায় বিক্রি হয়নি। অন্যান্য হাটের মতো ব্যাপারীদের তেমন হাক-ডাক ছিলো না। ছিলো না কেনা-বেচার কোনো তাড়া। কেননা সাধারণ ক্রেতা ও বাইরের ব্যাপারীদের উপস্থিতিও ছিলো অনেক কম। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই দর পড়ে যায়। হাট ইজারাদাররা যে পরিমাণ আমদানি আশা করেছিলেন তা ছাপিয়ে কয়েকগুন বেশি গরু ও ছাগল আমাদিন হয়েছিলো। এতে স্থানীয় ব্যাপারী ও পশু পালনকারীদের মাঝে হতাশা দেখা দেয়।

কুষ্টিয়ার মিরপুর থানাপাড়ার গরুব্যাপারী পিকলু মিয়া গতকাল বামন্দী হাটে ৪টি মাঝারি আকারের গরু তোলেন। হাটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা উপায়ে চেষ্টা করেও আশানুরূপ দর না মেলায় গরুগুলো বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন।

পিকলু জানান, গত হাটের ৭০ হাজারের গরু ৫০ হাজার, ৫০ হাজার টাকার গরু ৪০ হাজার ও লাখ টাকা দরের গরু ৭০-৮০ হাজার টাকা দর উঠেছে। এত পরিমাণ দর কমে বিক্রি করতে হলে ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে যাবে। শেষ মুহূর্তে বেশি দরের আশায় তারা চড়া দরে গরু কিনে এখন চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

এদিকে গতকালের হাটে চোখে পড়ার মতো ৭টি গরু তুলেছিলেন মিরপুর এলাকার গরু ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান। তিনি প্রতিটি গরুর দাম হাকিয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা করে। কিন্তু ১ লাখ টাকার ওপরে দর ওঠেনি। তাই নিরাস মনেই ফিরে গেছেন। ঢাকার হাটে গরুগুলো বিক্রির চেষ্টা করবেন বলে জানালেন আজিজুর। তবে এখনো মেহেরপুরসহ আশেপাশের জেলায় প্রচুর পরিমাণে গরু-ছাগল রয়েছে। এগুলো হয়তো ঢাকার পশু হাটে বিক্রি হবে। এমন পরিস্থিতিতে যদি ভারতীয় গরু আমদানি হয়, তাহলে পশু পালনকারী ও ব্যবসায়ীদের দুর্দশার শেষ থাকবে না বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন কয়েকজন ব্যাপারী।

গরু-ছাগলের ব্যাপক আমদানিতে শুধু ব্যাপারীরা নয় পালনকারীরাও বিক্রি নিয়ে শংকিত। পশু পালনের খরচ বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় এ খাত আস্তে আস্তে লোকসানের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন অনেক খামারী।

বামন্দী-নিশিপুর পশুহাটে আসা দৌলতপুর উপজেলার কাপড়পোড়া গ্রামের আশরাফুল ইসলাম এখন অনুশোচনায় ভুগছেন। গত বুধবার ব্যাপারীরা তার বাড়িতে গিয়ে একটি গরুর দাম দিয়েছিলেন ৬৫ হাজার টাকা। গতকাল হাটে তুলে সে গরুর দর উঠেছে ৫২ হাজার টাকা।

এদিকে ছাগলের বাজারেরও একই অবস্থা। ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ছাগলের দাম এখন ১৫ হাজার টাকা। গতকালের দর নিয়ে ছাগল পালনকারী ও ব্যাপারীরা হতাশায় পড়লেও স্বল্প মূল্যে ছাগল কিনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন ক্রেতা।

তবে ঢাকার পশুহাটে গরু-ছাগল বিক্রি নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। পথে পথে চাঁদাবাজি ও অনেক সময় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সব হারানো মানুষের অবস্থা দেখে সেখানে যেতে ভয় পাচ্ছেন অনেকেই।

বামন্দী-নিশিপুর পশুহাট সংশ্লিষ্ঠরা জানান, বেশি দামের আশায় শেষ মুহূর্তে সবাই একই দিনে পশু বিক্রির জন্য হাটে তুলেছেন। তাই দর পড়েছে। কমেছে কেনা-বেচা। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পশু চালান হলে সামনের হাটগুলোতে দর বৃদ্ধির আশা করছেন তারা।