গাংনীতে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারীদের অপতৎপরতা

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনীতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইকে কেন্দ্র করে বিরাজ করছে ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভ। যাচাই-বাছাই কমিটির দুরদর্শিতায় এ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে গুটি কয়েক উচ্ছশৃঙ্খল ব্যক্তির বিচ্ছশৃঙ্খল অপতৎপরতা গাংনীর যাচাই-বাছাই কার্যক্রমকে বির্তকের মুখোমুখিতে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের প্রতিহিংসামূলক চক্রান্তে উপজেলার বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা হয়রানির শিকার হয়েছেন। আর এ কারণে সৃষ্ট অসন্তোষ ও ক্ষোভ আরো বিস্তার লাভ করছে।

জানা যায়, একটি দুটি চক্র যাচাই-বাছাই কার্যক্রমকে তাদের শক্র নিধনের মোক্ষম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত শক্রতার জের ধরে প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছেন গুটি কয়েক ব্যক্তি। আক্রোশ মেটানোর পাশাপাশি অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অসৎ উদ্দেশে এরা অবাধে মনগড়া অভিযোগ দাখিল করেছেন বিভিন্ন দফতরে। সুনির্দিষ্ট কারণ ও প্রমাণসহ অভিযোগের নীতিমালা থাকলেও এরা এসব তোয়াক্কা না করে ঢালাওভাবে অভিযোগ দাখিল করেছেন। বামন্দীর আব্দুস ছাত্তার একাই প্রথমে ৩০ জন এবং পরবর্তীতে ১৪৪ জন মুক্তিযোদ্ধা সর্ম্পকে অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগ পত্রে তিনি অবশ্য নিয়মানুযায়ী কোনো প্রমাণ দাখিল করেননি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন আব্দুস ছাত্তার এমন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন, যাদেরকে আমরা এবং আব্দুস ছাত্তার ৪৬ বৎসর যাবৎ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জানি। এই দীর্ঘকাল যাবৎ যাদের সাথে আমরা এবং আব্দুস ছাত্তার মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। যে সকল মুক্তিযোদ্ধা ইতোমধ্যে ৫-৬ বার বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই হয়ে সকল তালিকায় অর্ন্তভুক্ত আছেন। দীর্ঘকাল যাবৎ আমাদের পাশাপাশি আব্দুস ছাত্তার সজ্ঞানে, স্বইচ্ছায় এ সকল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে জেনে বুঝে এবং মেনে এসেছেন, লিখিতভাবে সনাক্ত করে এসেছেন। আব্দুস ছাত্তারের স্বাক্ষরিত এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণাদি সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট বিদ্যমান আছে। তারা আরও জানান, শুধুমাত্র শক্রতাবশত এবং অবৈধ অর্থ লোভে স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে আব্দুস ছাত্তার মনগড়া-মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেছেন। উদ্দেশ্যমূলক এবং ভিত্তিহীন এ অভিযোগের যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সচেতন মহলে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। অন্যদিকে সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এখন-ও বাঁকা পথে অবৈধ অভিযোগ দাখিলের মহড়া অব্যাহত আছে। অথচ অভিযোগ দাখিলের সময়সীমা ৩০ ডিসেম্বর-২০১৬ তারিখে পার হয়ে গেছে।

জানা যায়, পূর্ববর্তী সময়ে মন্ত্রী বরাবর অভিযোগ জানানোর রীতি ছিলো। কিন্তু ২০১৬ সালে যাচাই-বাছাই কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে পূর্ববর্তী রীতি রহিত হয়ে যায়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি অথবা তামাদি হয়ে গেছে বলে জানা যায়। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ এর মধ্যে যাচাই-বাছাই কর্মসূচির আওতায় স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট দাখিলের নির্দেশ আছে। সকল অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্ব ও ক্ষমতা একমাত্র উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির। অথচ সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সিন্দুরকৌটার নজরুল ইসলাম গত ২৯ মে একটি অবৈধ অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছেন। সকলকে বোকা বানিয়ে সুকৌশলে জমাকৃত আবেদন পত্রটি ২০১৪ সালের। তামাদি হয়ে যাওয়া আবেদন পত্রটি মূলত, মন্ত্রী বরাবর লিখিত। তবে পত্রটিতে মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের কোনো সীলমোহর নেই, নেই পত্র গ্রহণ ও প্রেরণ সংক্রান্ত অফিসিয়াল সীল, স্বাক্ষর বা ডকেট নং। প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে নজরুল ইসলাম জালিয়াতির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করেছেন বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

গত ২৭ মে উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির কার্যক্রম মাননীয় সংসদ সদস্যের সভাপতিত্বে সম্পন্ন হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ কার্যদিবসে যে সকল মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয় তাদেরই একজন সম্পর্কে ২৯ মে নজরুল তার আবেদন জমা দেয়। যাচাই-বাছাই কমিটিকে উপেক্ষা করে পৃথক কোনো তদন্ত বা শুনানী করিয়ে নেয়ার অপকৌশল হিসেবেই এটা করা হয়। যাচাই-বাছাই কমিটির নির্ধারিত তারিখ ২৭ মে এক দিন পর ২৯ মে এটা দাখিলের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। মূল কমিটি থাকতে অন্য কাউকে দিয়ে ইচ্ছে মাফিক রিপোর্ট করিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা ও বেআইনি।

বামন্দী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধারা আরও জানালেন, নজরুল এই একই মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে একই মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে একটি মিথ্যা মামলা করেছিলেন। মেহেরপুর কোর্টে দায়েরকৃত তার এ মামলার নং ছিলো ০-১১১১/০৭ তারিখ ০৩/১০/২০০৭। মিথ্যা মামলা করার কারণে সে সময় গাংনী উপজেলার সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা নজরুলের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিলেন। সম্মিলিতভাবে মুক্তিযোদ্ধারা লিখিতভাবে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গাংনী উপজেলা কমান্ডের উদ্যোগে নজরুল বিরোধী প্রতিবাদসভা হয়েছিলো। নিন্দা প্রস্তাবসহ প্রতিবাদ-প্রতিকারের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছিলো। পরিবেশ পরিস্থিতি দেখেশুনে এবং পরাজয় নিশ্চিত জেনে পরবর্তীতে নজরুল মামলাটি উঠিয়ে নিয়েছিলো। মামলাটি ভূলবশত এবং মিথ্যা এ স্বীকারোক্তিসহ নজরুলের বক্তব্য নিয়ে সে সময় পত্র পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছিলো। দীর্ঘ ৭ বৎসর পর আবারো বিভ্রান্তি-বিশৃংখলা সৃষ্টি এবং জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাকে হয়রানির চক্রান্তকারী নজরুলের বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাগণ।