গাংনীতে ফুঁসলিয়ে অপহরণের অভিযোগে পিতা-পুত্রকে গণধোলাই

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীতে নার্সারী ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ভিকু (৬০) ও তার ছেলে হযরত আলীকে (৩৫) গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। গাংনীর দুই ব্যক্তিকে পরিবারের অগোচরে রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার পর নানা অভিযোগে তাদের গণপিটুনি দেয়া হয়। তবে কী কারণে তাদের রাজশাহী নেয়া হয়েছিলো তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

সিরাজুল ইসলাম ভিকু গাড়াডোব হঠাৎপাড়ার বাসিন্দা। তার ছেলে হযরত আলী একজন মাদকসেবী বলেও জানা গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, গাংনী শহরের বাজারপাড়ার গোলাম হোসেন ও শিশিরপাড়ার আতিয়ার রহমানকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে সোমবার সকালে আলমডাঙ্গা নিয়ে যায় ভিকু ও তার ছেলে হযতর আলী। বিকেলেই মহানন্দা ট্রেনে চেপে তারা ৪ জন রাজশাহী পৌঁছায়। এর মধ্যে গোলাম ও আতিয়ার রহমানের বাড়ির লোকজন খবর পায় কিডনি বিক্রির জন্য তাদের সেখানে নেয়া হতে পারে। বিপদে আশঙ্কায় রাতেই গোলামের ভাই বাস চালক আব্দুল মালেক রাজশাহী পৌঁছান। রাজশাহী শহরের বর্ণালী মোড়ের একটি ঘরে আটকে রাখা অবস্থায় ওই ৪ জনকে উদ্ধার করে গতকাল সকালে গাংনীর উদ্দেশে রওনা দেন। এ খবর পেয়ে গাংনী শহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ উত্তরপাড়ায় জড়ো হয়। দুপুরে বাস থেকে ভিকু, হযরত, গোলাম ও আতিয়ারকে বের করে আনেন আব্দুল মালেক। এ সময় উত্তেজিত জনতা ভিকু ও হযতরকে মারধর শুরু করে। গণপিটুনির এক পর্যায়ে পুলিশের একটি দল তাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ভিকু ও তার ছেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ তুলে তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করেন স্থানীয়রা।

এদিকে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ হাসান ও সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোস্তাফিজু রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভুক্তভোগী ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গোলাম হোসেন ও আতিয়ার রহমান হালকা মানসিক ভারসম্যহীন। তাদেরকে আদৌ কী কিডনি বিক্রির জন্য নেয়া হয়েছিলো নাকি অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিলো সে প্রশ্নের সু-স্পৃষ্ট জবাব মেলেনি ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের কাছ থেকে।

গোলাম হোসেন ও আতিয়ার রহমান জানান, আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ায় একটি বাড়িতে কাজ দেয়ার কথা বলে তাদের দুজনকে নিয়ে যায় হযরত আলী। সাথে ছিলেন তার পিতা ভিকু। কিন্তু হাটবোয়ালিয়া থেকে ফুঁসলিয়ে আলমডাঙ্গা ট্রেন স্টেশনে নেয়ার পর রাজশাহী নেয়া হয়। সেখানে কাজ করলে চাল, লুঙ্গি-গেঞ্জি ও মাসিক টাকা দেয়ার লোভ দেখানো হয়। এর বেশি কিছুই বলতে পারেননি ভুক্তভোগী দুজন।

গোলাম হোসেনের ভাই আব্দুল মালেক জানান, আঘাতজনিত কারণে গোলাম হোসেন হালকা মানসিক ভারসম্যহীন। ফুঁসলিয়ে তাদের কিডনি বিক্রির জন্য রাজশাহী নেয়া হয়েছিলো বলে খবর পায়। কিন্তু সেখানে যেস্থানে তাদের রাখা হয়েছিলো সেখান থেকে কোনো তথ্য পায়নি। তবে ঘটনা তদন্ত পূর্বক সুষ্টু বিচারের দাবি জানান তিনি।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, ভুক্তভোগী কিংবা অভিযুক্তদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য মিলছে না। গতকালই আব্দুল মালেক বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলার আসামি হিসেবে ভিকু ও হযরত আলীকে আজ আদালতে সোপর্দ করা হবে। মামলার তদন্ত শেষ হলেই বোঝা যাবে প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে কী কারণে সেখানে নেয়া হয়েছিলো। তবে বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।