গাংনীতে পরকীয়ার অপবাদে গৃহবধূ বাড়িছাড়া : কোলের শিশুপুত্র দত্তক

 

গাংনী প্রতিনিধি: পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে ফিরোজা খাতুন নামের এক গৃহবধূকে ঘরছাড়া করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের চাপে তাকে তালাক দিতে বাধ্য হয়েছে প্রবাসী স্বামী। নিরুপায় গৃহবধূ টাকার অভাবে কোলের শিশুপুত্রকে দত্তক দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বানিয়াপুকুর গ্রামে। গৃহবধূ ফিরোজা খাতুন বানিয়াপুকুর গ্রামের প্রবাসী মুক্তার আলীর স্ত্রী ও সহড়াবাড়িয়া গ্রামের আজিজুল হকের মেয়ে। বানিয়াপুকুর গ্রামের মৃত মাওলা বক্সের ছেলে বর্তমান সৌদি প্রবাসী মুক্তার হোসেনের সাথে প্রায় ২২ বছর আগে বিয়ে হয় সহড়াবাড়িয়া গ্রামের ফিরোজা খাতুনের সাথে। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুটি সন্তান। বড় ছেলে উকিল ১০ম শ্রেণির ছাত্র। নয় বছর আগে মুক্তার হোসেন সৌদি আরবে যান।

ফিরোজা খাতুনের অভিযোগ, ২০১৬ সালের ৯ মে মুক্তার হোসেন সৌদি থেকে ছুটিতে এসেছিলেন। ২৮ নভেম্বর তিনি আবারো সৌদি ফিরে যান। এর মাঝে তিনি গর্ভবতী হন। কিন্তু শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বিধায় সাড়ে সাত মাস গর্ভের সময় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। যা গাংনীর তাহের ক্লিনিকে রেকর্ডপত্র রয়েছে। ক্লিনিকের সমস্ত খরচ বহন করেন তার স্বামী। সন্তান নিয়ে পিতার বাড়িতে ফেরার পর শুরু হয় তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত। বড় ভাসুর আব্দুর রশিদ ও দেবর শুকুর আলী এবং তাদের স্ত্রীরা মিলে ফিরোজা খাতুনের নামে নানা অপবাদ দিতে থাকেন। ওই সন্তান মুক্তার হোসেনের নয় বলে অপপ্রচার চালায়। একপর্যায়ে তাকে তালাক দিতে বাধ্য করে। ভাসুর ও দেবরের সাথে কিসের শত্রুতা জানতে চাইলে ফিরোজা খাতুন বলেন, স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় দেবর শুকুর আলীকে দুই লাখ ও ভাসুর হাকিমকে এক লাখ টাকা ধার দেয়। এতে স্বামীর মত ছিলো না। তাই স্বামী দেশে ফিরে ভাইদের কাছে টাকা ফেরত না চেয়ে স্ত্রীকে চাপ দেয়। ওই টাকা আদায় নিয়ে ফিরোজার সাথে ভাসুর ও দেবরদের বিরোধ শুরু হয়। নিজের ভাইদের কাছে টাকা না চেয়ে মুক্তার হোসেন স্ত্রীকে চাপ দিতে থাকেন। এসব বিষয় নিয়ে জা’দের সাথে ফিরোজা খাতুনের ঝগড়া বিবাদ এবং এক পর্যায়ে ষড়যন্ত্রের শিকার হন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বামীর পাঠানো টাকা ও পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করা টাক দিয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন ফিরোজা খাতুন। ওই বাড়ির আশেপাশের লোকজন জানান, ফিরোজা খাতুন সহজ-সরল মানুষ। তার বাড়িতে কখনো পরপুরুষের আনাগোনা ছিলো না। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তিনি অনেক কষ্ট করে সংসার করছিলেন। কিন্তু পরিবারের ষড়যন্ত্রে পড়ে তার সব স্বপ্ন বিলিন হয়ে গেছে। ফিরোজা খাতুনের শিশুপুত্রকে দত্তক দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অপুষ্ট ছেলে জন্ম হওয়ায় তার অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকতো। প্রতিদিন তার খাওয়া ও চিকিৎসা খরচ যা ছিলো তা বহন করার সাধ্য তার ছিলো না। অপরদিকে স্বামী তালাক দেয়ায় তিনি অথই সাগরে পড়েছেন। তাই নিরুপায় হয়ে গোপালনগর গ্রামের এক নিঃসন্তান দম্পত্তির কাছে ছেলেকে দত্তক দিয়েছেন। ওই দম্পত্তি তার ছেলেকে ভালোভাবে মানুষ করছে। প্রয়োজনীয় দলিলপত্রের মাধ্যমে তিনি ছেলেকে হস্তান্তর করেছেন। ফিরোজা খাতুনের বড় ভাই সহড়াবাড়িয়া গ্রামের শেখ সাদি বলেন, আমরা সব ভাই পৃথক। তাছাড়া ফিরোজার পৈত্রিক সম্পত্তি সব বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে আমরা বোনকে আমাদের বাড়িতে রেখেছি। মোক্তার হোসেন সৌদি থেকে বাড়ি ফিরলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বামীর পরিবারের লোকজনের চক্রান্তের শিকার গৃহবধূ এখন পাগলপ্রায়। তার চোখে এখন শুধুই হতাশা। একজন মা কখন তার কোলের ছেলেকে অন্যত্র দিয়ে দেন? এর জন্য দায়ী কারা? অপরাধীদের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া দরকার। তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে বানিয়াপুকুর গ্রামে যাওয়া হয় ফিরোজার ভাসুর-দেবরদের বাড়িতে। বাড়িতে পুরুষ মানুষের দেখা মেলেনি। দুয়েক জন নারীর সাথে সাক্ষাত হলেও তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।