গাংনীতে ইফতারিতে ডাব ও আখের রসের চাহিদা বেড়েছে

 

মাজেদুল হক মানিক: প্রকৃতির নিয়মে গত কয়েক বছর বর্ষা মরসুমে রোজা আদায় করছেন মুসলমানরা। এতে স্বাভাবিক ভাবেই শরীরে বেশি পরিমাণ পানিশূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। সারাদিন কর্মব্যস্ত রোজাদাররা প্রাণ জুড়াতে ইফতারিতে রাখছেন বিভিন্ন ধরনের সরবত। আর তাইতো বেড়েছে ডাব ও আখের রসের চাহিদা। মেহেরপুর গাংনীতে ইফতারের আগে ডাব ও আখের রস কিনতে রোজাদারদের ভিড় পড়ছে। চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। গাংনী উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কচি ডাব ও আখের রস। প্রতিদিন সকাল থেকে ইফতারির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কেনাবেচায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। গাংনী শহরে কয়েকজন সারা বছর আখের রস বিক্রি করলেও রোজা উপলক্ষে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

গাংনী শহরে আখের রস বিক্রেতা গাড়াডোব গ্রামের জাহারুল ইসলাম জানান, এর আগে প্রতিদিন আধা মণ থেকে এক মণ আখ থেকে রস তৈরি করে বিক্রি করা হতো। এখন পরিমাণ বেড়ে প্রায় দুই মণে ঠেকেছে। এ উপজেলার শিমুলতলা, হাড়াভাঙ্গা ও বালিয়াঘাট গ্রাম থেকে তারা আখ কেনেন। প্রতিমণ আখের মূল্য ২২০ টাকা। শ্যালোইঞ্জিন দিয়ে তৈরি বিশেষ এক ধরনের যন্ত্র দিয়ে আখ থেকে রস বের করা হয়। প্রতি গ্লাস রস ১০ টাকায় বিক্রি। ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় এখন দিনপ্রতি প্রতি ব্যবসায়ীর ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় হচ্ছে বলে জানা রস বিক্রেতারা।

বিক্রেতারা জানান, বিকেল ৪টা থেকে ইফতারির আগ পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় থাকছে। চাহিদা অনুযায়ী তারা সরবরাহ করতে পারছেন না। রস তৈরিতে সময় বেশি লাগায় ক্রেতারা ধৈর্য ধরতে পারছেন না। তবুও বেশি জনবলের মাধ্যমে চাহিদা পূরণে সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন বিক্রেতারা। রস ক্রেতা কয়েকজন জানান, ইফতারিতে শরীর ঠাণ্ডা করতে আখের রস ও ডাবের কোনো জুড়ি নেই। চরম পিপাসা দূর করার পাশাপাশি শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চার করে। তাই ইফতারিতে সাধ্যমতো ডাব ও আখে রস রাখার চেষ্টা করছেন অনেকেই। এদিকে রমজান মাস তাই স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে ডাবের কদর। গত মাসে প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে ডাবের চাহিদা বেড়ে যায়। গত মাসের শেষের দিকে আবহাওয়া কিছুটা স্বস্তি এনে দিলে ডাবের চাহিদা কমে যায়। তবে রোজার শুরুতেই ডাবের চাহিদার পাশাপাশি দামও বেড়েছে।

গাংনী শহরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি ডাব ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এর আগে ২৫-৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। গাংনী বাজারের স্থায়ী ডাব বিক্রেতা খোকন মিয়া জানান, ইফতারির চাহিদা মেটাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। স্থায়ী ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মরসুমি ডাব বিক্রেতারা ডাব আনলেও সন্ধ্যার মধ্যে সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এতে ডাব ব্যবসায়ীরা অন্য সময়ের চেয়ে এখন বেশি লাভ পাচ্ছেন।

চিকিৎসকদের মতে, ডাবের পানিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণাগুণ। সারাদিন রোজা রাখার পর শরীর সুস্থ স্বাভাবিক রাখার জন্য ডাবের পানি এক অতুলনীয় নিয়ামক। এছাড়াও ডাবের পানির প্রাকৃতিক মিনারেলস শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং সেই সাথে উচ্চরক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং এর পাশাপাশি অন্য কার্ডিওভাসকুলার রোগের সম্ভাবনা কমে। এছাড়া প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস ডাবের পানি পান বুকজ্বালা, হজম সমস্যা, অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপার সমস্যা থেকে দূরে থাকে। যেকোনো চিনিযুক্ত ফলের জুসের চেয়ে বেশি কার্যকরী ডাবের পানি। কারণ এ পানিতে বিন্দুমাত্র ফ্যাট নেই। এ পানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।