খুব সহজে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে এসএফ ভাইরাস

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে খুব সহজেই মানবদেহে সিমিয়ান ফোমি (এসএফ) ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের শহরগুলোতে ভাইরাসটি বেশি বিস্তার লাভ করছে। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটি প্রাণঘাতী কোনো রোগের জন্য দায়ী কি-না জানা যায়নি। কিন্তু এইডস রোগের জন্য দায়ী এইচআইভি খুবই ঘনিষ্ঠ একটি ভাইরাস এটি। তবে বিজ্ঞানীদের এ আবিষ্কারে ভীতির চেয়ে আশার বাণীই বেশি রয়েছে। তারা জানিয়েছেন, এসএফভির কারণে স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে কী ঘটছে এর বিশ্লেষণ চূড়ান্ত করতে পারলে এইচআইভির মতো ভয়ঙ্কর রোগের বিস্তার রোধ করা যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ আন্তর্জাতিক গবেষণাদলটিতে অংশগ্রহণ রয়েছে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদেরও। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন এবং সিয়াটলে অবস্থিত বিশ্বের শীর্ষ ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার এবং বাংলাদেশের জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী এ গবেষণা করেন। গত বুধবার তাদের এ-সংক্রান্ত গবেষণা প্রবন্ধ জুনেটিক সিমিওন ফোমি ভাইরাস ইন বাংলাদেশ রিফ্লেক্টস ডাইভার্স প্যাটার্ন অব ট্রান্সমিশন অ্যান্ড কো-ইনফেকশন শিরোনামে এমার্জিং মাইক্রোবস অ্যান্ড ইনফেকশনস (ইএমআই) সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকরা বলেন, এশিয়াজুড়েই শহরগুলোতে মানুষ ও বানর পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরের কিছু মানুষ অবলীলায় সিমিয়ান ফোমি ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে এটি নানা উপায়ে বিস্তার লাভ করলেও এর উৎস একটি এবং সেটি হচ্ছে বানর। বিজ্ঞানীরা জানান, মানুষ ছাড়া সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যেই সিমিয়ান ফোমি ভাইরাসের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। এটি এইচআইভির মতো একটি রেট্রোভাইরাস। আর রেট্রোভাইরাস হলো বিপরীত রূপান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেসব ভাইরাস দ্রুত বিস্তার লাভ করে। তবে মানবদেহে এ ভাইরাসের প্রতিক্রিয়া এখনো জানা যায়নি। গবেষকরা প্রত্যাশা করছেন, এখন মানবদেহে এ ভাইরাস কী ঘটাচ্ছে এর বিশ্লেষণের মাধ্যমে এইচআইভির মতো প্রাদুর্ভাব রোধ করা যাবে। তাদের গবেষণার দৃষ্টি আপাতত এশিয়ায়। কারণ এটি এমন একটি মহাদেশ যেখানে গত এক দশকে বহু সংক্রামক রোগ প্রত্যক্ষ করেছে মানুষ। এশিয়া মহাদেশের আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এখানে পশুর সঙ্গে মানুষের বসবাস খুব সাধারণ ঘটনা এবং এ কারণে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা ভেঙে পড়া মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গবেষকরা যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন, তা হলো কিভাবে প্রজাতি বাধা অতিক্রম করে অন্যান্য স্তন্যপায়ী (প্রাইমেট) থেকে মানুষের শরীরে এসএফভি ভাইরাস সংক্রামিত হলো। এ ব্যাপারে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল প্রাইমেট রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী ও প্রধান গবেষক প্রাইম্যাটলজিস্ট লিসা জোনস এনজেল বলেন, আমরা যদি কিভাবে, কোথায় এবং কেন ওই সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে ভাইরাসটি সংক্রামিত হয় তা বের করতে চাই তাহলে আমাদের এশিয়ার দিকে নজর দিতে হবে। কারণ সেখানে লাখ লাখ মানুষ এবং হাজার হাজার বানর প্রতিদিনই নানা মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হচ্ছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি এই মহাদেশে কয়েক হাজার মানুষ এসএফভিতে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এশীয় রেসাস ম্যাকেক প্রজাতির বানরকে ডারউইনিয়ান সুপারস্টার (টিকে থাকতে ওস্তাদ এ জন্য) বলা হয়। তারা খুব দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী না পারলেও এই প্রজাতির বানর মানুষের বসতির পরিবর্তনের সঙ্গে নিজের জীবন যাপনেও পরিবর্তন আনতে পারে। জোনস এনজেলের মতে, ৫০ বছর আগে যদি গবেষকরা দেখতে পেতেন কিভাবে সিমিয়ান ইমিউনোডিফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এসআইভি) প্রজাতি বাধা  অতিক্রম করেছিলো। তাহলে এইচআইভি বিস্তারের কারণও উদঘাটন করা যেত। দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই এ গবেষণাটি করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। এ জন্য বাংলাদেশের পাঁচটি শহরের কয়েক’শ মানুষ ও বানরের জৈবিক নমুনা (বায়োলজিক্যাল স্যাম্পল) সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া এশিয়ার কয়েক হাজার শহর ও গ্রামকে গবেষণা এলাকা হিসেবে ধরা হয়েছে। গবেষকদের মতে, প্রধানত কামড়ানোর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে এসএফভির সংক্রমণ ঘটছে। ভাইরাসটি খুব দ্রুত মুখের টিস্যুগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এবং লালার মধ্যে এরা লুকিয়ে থাকে। তবে যৌন ফ্লুইডের মাধ্যমেও এটি ছড়ায় যেটা ঘটে থাকে এইচআইভির ক্ষেত্রে।