খালেদাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে : আশরাফ

স্টাফ রিপোর্টার: ২০ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর অভিযানের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া বক্তব্য ‘ভুল’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। এজন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, যদি এর মধ্যে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর অভিযানের বিষয়ে ইনকিলাব পত্রিকা প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে। সেখানে খালেদা জিয়া কি করে কোনো তথ্য- প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেন? জনসভায় তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন। নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। বিদেশি কিংবা জনগণের চাপে হোক তিনি অনেক কিছুই লুকিয়েছেন। খালেদা জিয়া মিথ্যা বলতে ওস্তাদ।

সৈয়দ আশরাফ বলেন, বিএনপিতে এখন হ-য-ব-র-ল অবস্থা। দলটির জন্মই হয়েছে মিথ্যাচারের মাধ্যমে। এখনও তাদের দু মাথাওয়ালা রাজনীতিবিদ রয়েছে। কার কথাকে গুরুত্ব দিতে হবে তা আওয়ামী লীগ বুঝতে পারছে না। তার ছেলে তারেক রহমান বলেন, এ অবৈধ সরকারের সাথে কোনো আলোচনা নয়। আবার খালেদা জিয়া বলেন, অবৈধ হলেও সরকারের সাথে আলোচনা করবেন। এই অবস্থায় কার কথাকে গুরুত্ব দিতে হবে সেটা পরিষ্কার নয়। মনে হচ্ছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য) ‘আগে কুকুর লেজ নাড়াতো, এখন লেজ কুকুর নাড়ায়’ মন্তব্যটিই সঠিক। কে তাদের নীতি-নির্ধারক কেন্দ্র থেকে কে কথা বলবেন সেটিই তারা এখনও নির্ধারণ করতে পারেননি। খালেদা জিয়া বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা ও প্রধান  সেনাপতি উল্লেখ করে তিনি বলেন- তিনি বলেছেন তার আমলে কোনো জঙ্গিবাদ হয়নি, সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি। তাহলে আ.স.ম কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মমতাজ উদ্দিন হত্যা কীভাবে ঘটলো?  সে সময়ে সারাদেশে একযোগে পাঁচশ স্থানে বোমা হামলা হয়েছে। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আইভী রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা এবং অন্য নেতাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি একথা বলবো না যে, আওয়ামী লীগ শতভাগ খাঁটি। কিন্তু এ সরকারের আমলে বিএনপির একজন সংসদ সদস্য, বিচারক নিহত হয়নি। দেশের কোথাও গ্রেনেড বা বোমা হামলা হয়নি।

সৈয়দ আশরাফ বলেন, অনেকেই বলছেন বেগম জিয়া কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছেন এটি সঠিক নয়। বিএনপি নেতা কূটনীতিতে যেমন ব্যর্থ হয়েছেন, তেমনি আন্দোলনেও ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি কূটনীতিবিদদের কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করেছিলেন শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু ক্ষমতা পাননি, নিজের মান-ইজ্জতও হারিয়েছেন। দেশের সম্মান অন্যের হাতে তুলে দিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন রানীর মতো বসে থাকবেন আর কূটনীতিবিদরা রসগোল্লার মতো ক্ষমতাকে তার হাতে তুলে দেবেন- সেটি আর হবে না। বিএনপিকে বাস্তবতা বুঝতে হবে। কূটনীতিকদের প্রতি অতি নির্ভরশীলতার কারণেই বিএনপির এ দশা হয়েছে। আমি আশা করি এ থেকে ভবিষ্যতে তারা শিক্ষা  নেবে। তিনি বলেন, কোনো রাষ্ট্রদূতের ক্ষমতা নেই রাজনৈতিক পট পরিবর্তন করার। খালেদা জিয়ার হাতে দেশের মানুষসহ কেউই নিরাপদ নয়, উল্লেখ করে  এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, নির্বাচন  ঠেকাতে খালেদা জিয়ার কর্মকাণ্ড মানুষ দেখেছে। কীভাবে তিনি নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছেন, মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়া হয়েছে, জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ভোটের পর হিন্দুদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। কেবল মানুষ না, তার দলের লোকেরা গাছ, স্কুলের বেঞ্চ-টেবিলের নজিরবিহীন আক্রমণ চালিয়েছে। গরু-ছাগল, গাছও বাদ যায়নি তাদের আক্রমণ থেকে। সবকিছুর প্রতি খালেদা জিয়ার সাংঘাতিক ক্ষোভ। তারা কী দোষ করেছিলো? তারা কি ভোটার নাকি প্রার্থী?

আওয়ামী লীগ একটি মধ্যপন্থি দল দাবি করে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশ্বের সকল দেশের সাথে আওয়ামী লীগের ভাল সম্পর্ক আছে। আমরা কোনো একক রাষ্ট্রদূত বা যৌথ রাষ্ট্রদূতের হাতে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ক্ষমতা তুলে দিতে রাজি নই। বিশ্ব পরিবর্তন হয়েছে। ৫০/৬০ দশকের বাইপোলার বিশ্ব এখন নেই। বাংলাদেশ এখন কিসিঞ্জারের তথাকথিত তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। কোনো মুরব্বী নিয়ে এলে আর কাজ হবে না। আমরা বহির্বিশ্বের কাছে নিজেদের আত্মসমর্পণ করবো না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে তার আপন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সুসম্পর্ক বজায় থাকবে উল্লেখ করে আশরাফ বলেন, আপনি (খালেদা জিয়া) প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্ক নষ্ট করবেন না। সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হেয় প্রতিপন্ন করবেন না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।