ক্ষমতাসীনদলের দুপক্ষের পাল্টা পাল্টি অবস্থানের নগ্ন বহির্প্রকাশ : টান টান উত্তেজনা আতঙ্ক

জনির ওপর হামলা রাজুর বাড়িতে পাল্টা হামলার জের ধরে গতকালও হামলা পাল্টা হামলা ভাংচুরসহ উভয়পক্ষের মহড়া

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: ছাত্রলীগের দু পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় চুয়াডাঙ্গা শহর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গতপরশু রাতে জনিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখমের পর রাজুর বাড়িতে হামলার পর গতকাল শনিবার আরামপাড়ার হাসানের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। পরে মাছপট্টির মাছ শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে তছনছ করার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া পাল্টাপাল্টি অবস্থান আর লাঠিসোঁঠাসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে দিনভর মহড়ায় শহরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করে। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শামসুল আবেদীনের পথসভাকে ঘিরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় শহরে ভিতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পলাশপাড়ার গোলাম সরোয়ারের ছেলে জনি (২৭) গতপরশু জেলা শহরের পান্না সিনেমহালের অদুরে অবস্থান করছিলো। রাত ৮টার দিকে একদল যুবক তার ওপর হামলা চালায়। তাড়িয়ে ধরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে ছাত্রলীগের একাংশের নেতা কর্মী সমর্থকেরা হাসপাতালে হাজির হয়। জনির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এরপর উত্তেজিতরা কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে শহরে মহড়া শুরু করে। চুয়াডাঙ্গা ইমার্জেন্সি  সড়কস্থ ছাত্রলীগ নেতা রাজুর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। অগ্নিসংযোগসহ জালানা দরজায় কোপ মারার ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে গতকাল সকাল থেকেই ছাত্রলীগের দু পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার বহির্প্রকাশ ঘটতে থাকে। দু পক্ষেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। বেলা দেড়টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি হাসানের চুয়াডাঙ্গা আরামপাড়াস্থ বাড়িতে হামলা চালায় তার প্রতিপক্ষ গ্রুপ। দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরসহ আসবাবপত্র তছনছ করা হয়। হাসান অভিযোগ করে বলেছেন, বাড়িতে থাকা আমার বোন আয়েশা ও স্ত্রী নাহীদ পারভিন জুইকে লাঞ্ছিত করে। হামলাকারীদের মধ্যে রাজু, তারেকসহ তাদের লোকজন ছিলো বলে হাসান অভিযোগ করেন। অপরদিকে এ ঘটনার পরপরই চুয়াডাঙ্গা মাছের আড়তপট্টিতে থাকা মৎস্য শ্রমিক ইউনিয়নে পাল্টা হামলা চালানো হয়। মৎস্য শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইদুর শেখ ও সাধারণ সম্পাদক রানা অভিযোগ করে বলেন, আমরা ওসব হামলার সাথে জড়িত নই। অনেকটা আকস্মিক আরামপাড়ার হাবিবুর রহমান হাবিব, হাসান, ফয়সাল, রেলকলনীর সুমন ও মন্টুসহ তাদের লোকজন আমাদের অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। হাবিব এক সময় মদের ব্যবসা করতো বলেই আমরা তাকে উৎখাত করে আমাদের ইউনিয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। তারই জের ধরে হামলা চারিয়ে থাকতে পারে। অপরদিকে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান বলেছে, আমরা আমাদের নামে বরাদ্দকৃত দোকানঘর বেদখল মুক্ত করতে সেখানে গিয়েছিলাম। আমাদের দোকানঘর দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর মদদে বেদখল করে রাখা হয়েছে বলেই আমরা এখন দখলমুক্ত করতে চাই।

একাধিকসূত্র বলেছে, ছাত্রলীগ নেতা হাসানের বাড়িতে হামলার পর হামালাকারীরা কলেজ ক্যাম্পাসে প্রথমে অবস্থান নেয়। পুলিশি টহল জোরদার করা হয়। অপরদিকে হাসান পক্ষের ছাত্রলীগে নেতাকর্মীসহ অনেকেই জেলা শহরের রাস্তায় রাখা চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়রের বেশ কয়েকটি বিলবোর্ড ভাঙচুর করে। তারাই মাছের আড়তপট্টির মাছ শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙচুর করে কলেজ ক্যাম্পাসের দিকে অবস্থান নেয়। এর কিছুক্ষণ পর জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কের ধারের বেশ কয়েকটি স্থানে রাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর বিলবোর্ডও ভাঙচুর করা হয়। দৃশ্য দেখে অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলতে থাকে, এ যেন ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াই চলছে। দিনভর এ নিয়ে আলোচনা হতে না হতে বিকেল হতেই আলোচনার মোড় নেয় যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমডাঙ্গার শামসুল আবেদীন খোকনের চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরে পথসভা নিয়ে। বিকেলে শহীদ হাসান চত্বরে পথসভায় শামসুল আবেদীন খোকন আসার খবর পেয়ে ওবাইদুর রহমান জিপুসহ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মী সমর্থকেরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাম্পাদক হাবিবুর রহমান লাভলুর বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। শামসুল আবেদীন খোকন আসছেন শুনে অপরপক্ষের ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীদের অনেকেই অবস্থান নেন পৌরসভা মোড়ে। ছাগলফার্মের অদুরে বেরিকেড গড়ে তোলারও খবর রটে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি মিছিল পৌরসভা মোড় থেকে রওনা হলে পথিমধ্যে পুলিশ বাধা দেয়। এ মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু। মিছিল আসছে শুনে হাবিবুর রহমান লাভলুর বাড়ির সামনে অবস্থানরত ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ পৌর মোড়ের দিকে ছুটতে গেলে নিউ মার্কেটের সামনেই বাধার মুখে পড়ে। এরই এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় শামসুল আবেদীন খোকন চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরের অদূরবর্তী হাবিবুর রহমান লাভলুর বাড়ির সামনের পথসভায় হাজির হন। তিনি বক্তব্য দিতে শুরু করেন। উত্তেজনা তীব্রতর হতে থাকে। বড় বাজার পুরাতন গলির ভেতর দিয়ে কয়েকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে দৌড়াদৌঁড়ি করতে থাকেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে শামসুল আবেদীন খোকন বক্তব্য শেষ করে গাড়িতে ওঠেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আলী আহম্মেদ, হাবিবুর রহমান লাভলু,  জেলা আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফি, আলমডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান কাদির গনু, সাবেক কাউন্সিলর ইকরামুল হক মুক্তা, সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সেক্রেটারি জিপু চৌধুরী, যুবলীগের আব্দুর রাজ্জাক, মিলন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফ উদ্দীন দুদু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদ আহম্মেদ, মতিয়ার রহমান মতি, হাফিজুর রহমান লাল্টু প্রমুখ। শামসুল আবেদীন খোকনকে একাডেমী মোড় হয়ে আলমডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হলেও তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ভালাইপুর মোড় হয়েই আলমডাঙ্গায় ফেরেন তিনি। শহীদ হাসান চত্বরে অবস্থান নেয়া নেতৃবৃন্দ ভি.জে স্কুল সড়কে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তখন শহীদ হাসান চত্বরে পুলিশের অবস্থান। রাস্তা ফাঁকা করতে এ সময় শহীদ হাসান চত্বরে অবস্থান নেয়া পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। পুলিশ মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থানকালে রাস্তা ফাঁকা হয়। জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র আতঙ্ক। অনেকেই দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদে বাড়ি ফেরার পথ খুঁজতে থাকে। কিছুক্ষণের মাথায় তারা মিছিলসহকারে কোট মোড়ের দিকে যেতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পরই চুয়াডাঙ্গা পৌর মোড় থেকে একটি মিছিল নিয়ে শহীদ হাসান চত্বরে হাজির হয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের অপরাংশ। তখনো আতঙ্ক ছড়ায়। এ সময় শহীদ হাসান চত্বরের আশে পাশে থাকা ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর বিলবোর্ড ভাঙচুর করে।