কেরুজ চিনিকলে ২০১৩-১৪ আখমাড়াই মরসুম শুরু হচ্ছে ৬ ডিসেম্বর

সকল প্রস্তুতি সম্পন্নের পথে : চলছে ওয়াটার ট্রাইল কার্যক্রম

 

হারুন রাজু/হানিফ মণ্ড: কেরুজ চিনিকলের ২০১৩-১৪ আখমাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে আগামী ৬ ডিসেম্বর। মিল চালু হওয়ার বাকি আর মাত্র ৪ দিন। চিনিকল কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত দিনক্ষণ পরিবর্তন করে করপোরেশন কর্তৃপক্ষ উদ্বোধনের জন্য এদিন বেধে দিয়েছে। মিল চালুর সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এরই মধ্যে ধোয়া-মুছা ও রং-চুনের কাজ শেষ করা হয়েছে। সেইসাথে সম্পন্ন করা হয়েছে বয়লারের স্লো-ফায়ারিং। মিল কর্তৃপক্ষ ওয়াটার ট্রাইল করছে। মেশিনারিজে কোনো প্রকার ত্রুটি দেখা দিলে তা দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষ্যে এ ট্রাইল। এ লক্ষ্যেই গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শুরু হয়ে চিনি কারখানায় ওয়াটার ট্রাইল। আজ সোমবার বিকেল ৫টায় ওয়াটার ট্রাইল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এতে কোনো প্রকার ত্রুটি দেখা দিলে তা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে মিল কর্তৃপক্ষ।

২০১৩-১৪ আখমাড়াই মরসুমে চিনিকল কর্তৃপক্ষ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা নিয়ে শুরু করেছে কার্যক্রম। খানেকটা আকস্মিকভাবে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের রদবদলে কিছুটা ভাবিয়ে তুললেও তা কাটিয়ে তুলে এখন বেশ জোরেশোরেই প্রস্তুতির শেষাংশে পৌঁছেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পৌঁছুতে পারবে কি-না তা নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা।

সূত্র বলেছে, ২০১৩-১৪ আখমাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে আগামী ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে। এবার মিল চালুর ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো আয়োজন করেনি। খরচ সংকলন করতে মিলের ক্যানকেরিয়া চত্বরে আয়োজন করা হয়েছে দোয়া মাহফিলের। ২৯ নভেম্বর মিল চালু করার লক্ষ্যে গত ২৩ অক্টোবর কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের কাছে চিঠি দেয়। করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তা সংশোধন করে মিল চালুর নির্ধারিত দিনক্ষণ ঠিক করে দেয় আগামী ৬ ডিসেম্বর। এ মরসুমে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষকে ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছে চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। সে হিসেব অনুযায়ী এ মরসুমে ৯২ মাড়াই দিবসে কেরুজ চিনিকলে ৮ হাজার ২শ মেট্রিক টন চিনি করতে হবে। চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫০। তবে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষের হিসেব মতে কৃষক ও চিনিকলের নিজস্ব ৯ হাজার ৫১০ একর জমিতে আখ রয়েছে। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব জমির পরিমান ১ হাজার ১৮২ একর। এতে বীজ আখ বাদে মিলে আখমাড়াই করা হতে পারে ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। যা ৯২ দিবসে মাড়াই করে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ২৭৫ মেট্রিক টন। চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫০। মিল উদ্বোধনকে সামনে রেখে চিনি কারখানায় জোরেশোরে যন্ত্রাংশ মেরামত, ঝালাই, ধুয়া-মুছা ও রং-চুনের কাজ শেষ করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে গত ২২ নভেম্বর শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে মিলের বয়লারে স্লোফায়ারিং কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ আখমাড়াই মরসুমকে ঘিরে মিলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দিন কাটছে মহাব্যস্ততায়।

এদিকে এ মরসুমের উৎপাদিত চিনি রাখা নিয়ে মহাচিন্তায় রয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ। গত পরপর তিন মাড়াই মরসুমের উৎপাদিত চিনি এখনো রয়েছে অবিক্রিত। মিলের ৫টি গোডাউনে এখনো অবিক্রিত চিনির পরিমাণ ৬ হাজার ৯১৫ দশমিক শূন্য ৫ মেট্রিকটন। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩৪ কোটি ৫৭ লাখ ৫২ হাজার ৫শ টাকা। মিলের ৫টি গোডউন চিনিতে কানায় কানায় ভর্তি থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অতিরিক্ত একটি গোডাউন নির্মাণের জন্য মিলকর্তৃপক্ষ লিখিত প্রস্তাব করেছে করপোরেশনে। তবে এ প্রস্তাব কার্যকরি হবে কি-না তা অনিশ্চিত।

২০১৩-১৪ আখমাড়াই মরসুম শুরু হওয়ার আগে যদি গত তিন মরসুমের উৎপাদিত চিনি বিক্রি না করা যায় সেক্ষেত্রেই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে চিনি রাখার গোডাউন নির্ধারণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি স্থান। স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে কেরুজ চিনিকলের বন্ধ হয়ে থাকা ওষুধ গোডাউন, পরিবহন বিভাগের ইঞ্জিন গোডাউন, সিজিনাল ব্র্যাকের ১৩টি কক্ষ, প্রাইমারি স্কুলের ৭টি কক্ষ, অফিসার্স ও সাধারণ ক্লাব, আবাসিক এলাকার খালি পড়ে থাকা কয়েকটি ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে। সে জন্যে মিল কর্তৃপক্ষকে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে। যা মিলের জন্য কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতো অবস্থায় পরিণত হবে। তবে এরই মধ্যে চিনি রক্ষিত ৫টি গোডাউনের ২ হাজার ৩শ মেট্রিক টন চিনি বিক্রি হওয়ায় একটি গোডাউনের কিছুটা খালি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, গত আখমাড়াই মরসুমে চিনি কারখানায় লোকসান গুনেছে প্রায় ২৬ কোটি টাকা। ৭৫ বছর বয়সী এ মিলটিকে টিকিয়ে রাখতে কৃষকরা বেশি বেশি আখচাষ না করলে আগামিতেও এ লোকসানের বোঝা টানতে হবে। এ মরসুমের ক্ষেত্রেও লোকসানের হিসেব কম হবে না বলেও উঠেছে গুঞ্জন।

চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুষিবীদ মো. আজিজুর রহমান বলেছেন, কেরুজ চিনিকল দেশের তথা এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী একটি ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি। এ চিনি শিল্পকে বাঁচাতে কৃষক, শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা নির্বিশেষে এগিয়ে আসতে হবে। নিজ নিজ দায়িত্বে কর্মদক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। চিনি শিল্প রক্ষার্থে বেশি বেশি আখ রোপণের জন্য কৃষকদের করা হচ্ছে আগ্রহী। নিশ্চিত করা হচ্ছে আখচাষিদের সুযোগ সুবিধা। তাহলেই একদিকে যেমন আখচাষ বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে সরকারের মূল্যবান সম্পদ চিনিশিল্পকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।