কেঁপে উঠলো ধরিত্রী

৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিলো মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চল

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ। গত মঙ্গলবার সকালে মাঝারি পাল্লার ভূমিকম্পের পর বুধবার বিকেলে শক্তিশালী আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর মাত্রা ছিলো রিকটার স্কেলে ৬ দশমিক ৮। এর উৎপত্তিস্থল ছিলো মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্তি্বক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, বুধবার বিকেল ৪টা ৩৪ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে উত্তর-মধ্য মিয়ানমারের বন্দরনগরী (নদীবন্দর) চাউক থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিলো ভূপৃষ্ঠের ৮৪ কিলোমিটার গভীরে। ঢাকা থেকে এটির উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৩৩২ কিলোমিটার। ইতালিতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে ১২০ জনে মৃত্যু হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। সিভিল প্রোটেকশন ইউনিটের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এ কথা বলা হয়েছে।

ঢাকা ছাড়াও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, যশোর নেত্রকোনা, ফরিদপুর, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর দেন আমাদের প্রতিবেদকরা। তবে দেশের কোথাও কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাননি বলেও জানান তারা। বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যম জানায়, ভূমিকম্পে ভারতের বিহার, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা কেঁপে ওঠে। কেঁপে ওঠে জাপান, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা, ফিজি, ফিলিপাইন, ভানুয়াতু, লাওস, চীন ও থাইল্যান্ডের ব্যাংককসহ সংলগ্ন অনেক অঞ্চল। কম্পনের ফলে কর্মস্থল থেকে খোলা ময়দান বা রাস্তায় নেমে আসে আতঙ্কিত মানুষ। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম জানায়, ভূমিকম্পে দেশটির একটি প্রাচীন মন্দিরের অনেকখানি ধসে পড়ে। চাউক এলাকায় মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। মিয়ানমারে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে কয়েক ডজন মানুষ এবং ৬৮টি বৌদ্ধমন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু বাড়িঘর ও পুরনো ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ৫ দশমিক ৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয় মিয়ানমারে। ঢাকা থেকে ৪০৯ কিলোমিটার পূর্বে দেশটির মাওলায়েকের ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে আঘাত হানা ওই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে। সেখানে অন্তত ১২০ জন মারা গেছে। জাপানে ৪ দশমিক ৮ মাত্রার, আফগানিস্তান ৪ দশমিক ৫, ইতালিতে ৬ দশমিক ২, ফিজিতে ৪ দশমিক ৪, ফিলিপাইনে ৪ দশমিক ৬, ভানুয়াতুতে ৪ দশমিক ৭, পাপুয়া নিউগিনিতে ৫ দশমিক ২, ইন্দোনেশিয়ায় ৬ দশমিক ২, চিলিতে ৪ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্তিবক জরিপ জানিয়েছে ইতালির রাজধানী রোমের ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে উমব্রিয়া প্রদেশের পেরুজিয়া শহরের নোরসিকা টাউনে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল ছিলো ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পটি অনুভূত হওয়ার ঘণ্টা পর একই এলাকায় কয়েকটি আফটার শক হয়। যার মধ্যে তীব্রতর শকটি ছিলো ৫ দশমিক ৫ মাত্রার। ইতালির ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র লুকা কারির বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অ্যাকুমোলি, আমাত্রিসি, পোস্তা এবং আরকুয়াটা দেল টরোনটো এলাকা। এসব এলাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে প্রাথমিকভাবে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আমাত্রিসি টাউনের মেয়র সের্গিও পিরোজ্জি রাষ্ট্রীয় আরএআই টেলিভিশনকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে বলেন, টাউনের অর্ধেকই ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শনও ধ্বংস হয়ে গেছে। ভূমিকম্পে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে এবং সম্ভব একটি সেতু ধসে পড়েছে। অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। শহরের বিদ্যুৎ সংযোগ ধসে পড়ায় জরুরি উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান মেয়র পিরোজ্জি। ইতালির সংবাদপত্র লা রিপাবলিকার বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, শক্তিশালী ভূমিকম্পটির তীব্রতায় রাজধানী রোমের কিছু ভবন ২০ সেকেন্ড ধরে কেঁপেছিলো। বিবিসি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে এ পর্যন্ত অন্তত ১২০ জন মারা গেছে। এর মধ্যে একই অ্যাকুমোলি শহরে পরিবারের চার সদস্য একটি দেয়ালের নিচে চাপা পড়েছিলো বলে জানিয়েছেন শহরটির মেয়র স্টেফানো পেত্রোসি। অন্যদিকে পেসকারা দেল টরেন্টো গ্রামের কাছে দুজন মারা গেছেন।

আমেট্রিস শহরের মেয়র সের্গিও পেরোজ্জি জানিয়েছেন, শেষ রাতের দিকে পুরো শহরটা দুলতে শুরু করে। বাসিন্দারা ভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। চেখের সামনেই বাড়িগুলো গুড়িয়ে যাচ্ছিল। ওই অন্ধকারেই একটি বাড়ির মধ্যে এক পরিবারের চারজনের দেহ দেখতে পেয়েছি। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং শহরের অর্ধেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। এই শহরের তিন-চতুর্থাংশ বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে বলেও তিনি জানান। এখনো ধ্বংসস্তূপের নীচে প্রচুর মানুষ আটকে রয়েছেন। নরসিয়া এবং আমব্রিয়াতেও বেশ কয়েকটি বড় বাড়ি ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেসামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৯ সালে আকুইলায় এরকম একটি ভূমিকম্পে ৩০৯ জন নিহত হয়েছিলেন।