কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আর নয়

স্টাফ রিপোর্টার:আসছে বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেনঅর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, কালো টাকার জন্য কোনোসুযোগ থাকবে না। এটা একদম চলে যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটিহোটেলে শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের উপস্থিতিতে বাজেট পরামর্শক কমিটির সভায় একথা বলেন অর্থমন্ত্রী। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বাজেটপ্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকঋণের সুদের হারকমানো, নতুন কর আরোপ না করে করের আওতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।সেইসাথে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতারও দাবি তোলা হয়।আগামীমাসের শুরুতে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন।এর আগে ব্যবসায়ীদের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে এটিই ছিলো বড় সভা। এফবিসিসিআইসভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভাটি পরিচালনা করেন এনবিআরচেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায়ীসংগঠন ও চেম্বারের ৫০ জনের অধিক ব্যবসায়ী নেতা নিজ নিজ খাতের পক্ষে বিভিন্নবাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন।বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদেরকরমুক্ত আয়সীমা বিদ্যমান ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজারটাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই। এছাড়া কোম্পানির কর্পোরেট কর হারধীরে ধীরে কমিয়ে আনার প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমারক্ষেত্রে খুব বেশি আশা না করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।যুক্তরাষ্ট্রের আয়কর ব্যবস্থার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এ বছর করমুক্তআয়সীমা ঠিক করে দেয়ার পর দীর্ঘদিন তা অপরিবর্তিত থাকবে।এছাড়াবাজেটে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা, বাণিজ্যউদারীকরণ, তামাকজাত পণ্য বিশেষত বিড়ির ওপর শুল্ক-কর বাড়ানো, পুরনো ও নতুনগাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক কাঠামো সংস্কার এবং করপ্রত্যর্পণের (রিফান্ড) জটিলতা নিরসনে এনবিআরের অধীনে একটি তহবিল তৈরির কথাজানিয়েছেন তিনি। আগামী বছরের জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর)আইন বাস্তবায়ন এবং পাস হওয়ার অপেক্ষায় থাকা শুল্ক আইনে কিছু সংশোধনী আনারকথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী। জিডিপিতে রাজস্বের অবদান আরো ৫ শতাংশ বাড়ানোহবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, জিডিপিতে রাজস্বের অবদান ৩ শতাংশ বেড়েছে (১০ শতাংশ থেকে ১৩)। এজন্য সময় লেগেছে ২৭ বছর। এটাও নিম্নমানের। এটা বাড়াতেহবে।

প্রসঙ্গত, আগামী বাজেটের আকার আড়াই লাখ কোটি টাকা হতেযাচ্ছে বলে ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন। এর মধ্যে এনবিআরের রাজস্বেরলক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা।এফবিসিসিআইয়েরপক্ষ থেকে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বাজেটে বিশেষ নজর দেয়ার দাবি জানানো হয়।কালো টাকার উত্স চিহ্নিত করার প্রস্তাব দেয়া হলেও অবকাঠামোসহ কয়েকটিখাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূলধন সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। সংগঠনেরসভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংকের উচ্চসুদ, বিদ্যুত ও জ্বালানি সংকট, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিল্প প্লটেরঅপর্যাপ্ততা বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করেছে। বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংক সুদেরহার ১২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। এ প্রসঙ্গে ২০২১ সাল নাগাদ সরকারেরবিনিয়োগ পরিকল্পনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কাকেইঙ্গিত করে তিনি বলেন, নিশ্চয়তা ছাড়া অনেকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আসছেননা।আলোচনায় অংশ নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদসংবাদপত্র শিল্পে বিদ্যমান অত্যধিক শুল্ক-কর কমানোর দাবি জানান। সম্প্রতিনারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়রসহ ৭ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ৱ্যাবের তিনকর্মকর্তাকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা রোধে তিনি আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান।এফবিসিসিআইয়েরপ্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশি সহায়তা ব্যবহারের প্রস্তাবদিয়ে বলা হয়, এতে ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা কমবে এবং প্রকল্পবাস্তবায়নে স্বচ্ছতা বাড়বে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নির্ধারণেরআহ্বান জানানো হয়।

সভায় অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেনএফবিসিসিআইয়ের সাবেক ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, আবুল কাশেম আহমদ, এফবিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, সহ-সভাপতি হেলালউদ্দিন, সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, বিজিএমইএ সভাপতিআতিকুল ইসলাম, আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি মোকাররম হোসেন খান, ইএবির সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারের (ফিকি)প্রেসিডেন্ট রূপালী চৌধুরী, মোবাইলফোন কোম্পানির সংগঠন অ্যামটবেরসাধারণ সম্পাদক টিআইএম নূরুল কবীর, বাংলাদেশি চা সংসদের প্রতিনিধিশাহজাহান চৌধুরী প্রমুখ।