কল্পকাহিনীর স্থানটি ছিলো ধর্ম বর্ণ পূণ্যার্থীদের মিলন মেলা : অনেকেই দিয়েছে মানত শোধ

আলমডাঙ্গা ঘোষবিলার গঙ্গাস্থানে মরমী সাধক কুবীর ঠাকুর স্মরণে ঐতিহ্যবাহী মেলা ও বারুণী উৎসব অনুষ্ঠিত

কেএ মান্নান: আলমডাঙ্গার ঘোষবিলা গ্রামের কুমারনদ সংলগ্ন গঙ্গাস্থানে মরমী সাধক কুবীর ঠাকুর স্মরণে বাৎসরিক মেলা ও বারুণী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলে দিনব্যাপী। বাৎসরিক এই মেলায় দূর-দূরান্তের হাজারও ভক্ত অনুরাগী ধর্ম বর্ণ তথা পূর্ণ্যার্থীদের পদভারে মুখরিত ও সরগরম হয়ে ওঠে।
ইংরেজি ১৭৫২ ও বঙ্গাব্দ ১১৯৪ সালে আলমডাঙ্গার জামজামি ইউনিয়নের ঘোষবিলা লাগোয়া রঘুনাথপুর গ্রামে মরমী সাধক কুবীর ঠাকুরের জন্ম হয়। তার পিতা ছিলেন মুসলমান সম্প্রদায়ের আর মা ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের। মায়ের নাম সাধিকা যোগী। আর বাবার নাম কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। কুবীরের পিতা তার মাতাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলে আশপাশ এলাকার মানুষ কুবীরকে জারজ সন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করতে থাকে। কুবীরের মা এ সময় শিশু সন্তানকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী মধুপুর গ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করে। শিশুকাল থেকেই কুবীর ছিলেন ধার্মিক ও উদাসীন স্বভাবের। এছাড়া সে উদার দয়ালু মানুষ ছিলেন। যে গুরুর কাছে সে দীক্ষা নেন সে গুরু কুবীরকে জারজ সন্তান ভেবে প্রথমে দীক্ষা দিতে চাননি। কুবীর নাছোড় গুরুর পিছু ছাড়তে নারাজ। গুরু বাধ্য হয়েই কুবীরকে শিষ্যত্ব হিসেবে মেনে নেন। ক্রমশই গুরুর সেবায় নিজেকে সমর্পণ শেষে পরম দীক্ষায় কুবীর গোসাই ও কুবীর ঠাকুর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার অপর ৩ গুরু ভায়ের নাম খেয়ালী গোসাই, আদারী মিঞা ও বাণী চ্যাটার্জী। জনশ্রুতি রয়েছে, একদিন কুবীরের মা গঙ্গাস্নানে যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করেন, এ সময় খেয়াল বসে কুবীর আমলে না নিলে মা কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়।
এর পরের বছর পূণরায় কুবীরের মা গঙ্গাস্নানে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন। কুবীর এবার মাকে কথা দেন নিয়ে যাবেন। উদাসীন কুবীর বেখেয়ালবশতঃ ভূলে যান। তাঁত চালনায় ব্যস্ত ও মনে মনে গান গাইতে থাকেন। মা আরও রাগন্বিত হয়ে ওঠেন। অন্য সকলে গঙ্গাস্নানে পাড়ি জমিয়েছে অথচ তার যাওয়া হলো না মা খুব কষ্ট পান। আকস্মিক কুবীর মাকে বলেন মা তৈরি হও গঙ্গাস্নানে যাবো। মাতো অবাক! একি এখনই বললেই চলে যাওয়া যায়। কুবীর মাকে নিয়ে এসে পার্শ্ববর্তী ঘোষবিলা গ্রামের কুমার নদের তীরে এসে দাঁড়ালেন। বললেন মা তোমাকে দেখতে চান, তুমি দর্শন দাও। মা দর্শন দিলো, দুজনে প্রণাম করে। কুবীরের মায়ের মনে হলো কুমারনদ মা গঙ্গা হয়ে সামনে সমাসীন। তিনি নেমে ডুব দিতেই যুবতি হয়ে উঠে আসেন। বিপত্তি বাঁধে মা ছেলে বাড়ি ফেরার পথে। সবাই হৈ চৈ করে বললো কুবীর মাকে হত্যা করে অন্য একজন যুবতীকে নিয়ে বাড়ি এসেছে। কুবীর সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে যুবতী মাকে নিয়ে পূণরায় ঘোষবিলার কুমারনদের পাড়ে ফিরে আসেন। মাকে কুমারনদের ডুব দিতে বললে মা ডুব দিলে পূর্বের বয়স নিয়ে জল থেকে উঠে আসেন। লোকমুখে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এ নজর দেখতে উৎসুক নারী-পুরুষের ভীড় জমে যায়। ওইদিন সকলেই কুমারনদে গঙ্গাস্নানে নেমে পড়ে। সেই থেকে প্রতিবছর এখানে মেলা বসে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ তথা পূর্ণ্যার্থীদের ভীড়ে ও পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে ঘোষবিলা গ্রামের কুমারনদের তীরবর্তী মহাপূর্ণস্থান গঙ্গাস্থান। রোগ শোকে পিড়িতরা তাদের মানত পরিশোধ করে পূর্ণ অর্জন শেষে ফিরে যান পরিবার স্বজনদের মাঝে।