কর বাড়াতে তৃণমূলে দৃষ্টি দেয়ার নির্দেশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী (২০১৬-১৭) অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট নিয়ে একগুচ্ছ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আগামী ৫ মে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব বিষয়ে মতামত ও সুপারিশ উত্থাপনের জন্য প্রস্তুতি নিতে তিনি এনবিআর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তৈরি পোশাক খাতে করপোরেট কর হার কমানো, অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে ব্যবস্থা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের করমুক্ত আয়সীমায় রদবদল, বিড়ি-সিগারেটের রাজস্ব হারে পরিবর্তন, ভ্রমণ কর কমানোসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে পর্যালোচনার তালিকায়। গতকাল শনিবার এসব বিষয় নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন বাজেট নিয়ে আলোচনার জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় এনবিআর কার্যালয়ে যান। এনবিআর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি তিন ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরে সন্ধ্যা অবধি গড়ানো বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীসহ কর্মকর্তারা। বৈঠকে ভ্যাট আইনসহ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে এনবিআর চেয়ারম্যান মতামত চাইলে অর্থমন্ত্রী এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন।

সূত্র জানায়, আসন্ন অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়াও অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, এনবিআর তিন শাখার (আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক) শাখার তিন সদস্য তাদের অভিমত প্রকাশ করেন। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, করমুক্ত আয়সীমা কিছু বাড়িয়ে অল্প আয়ের মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দেয়া উচিত। এতে খুব বেশি রাজস্ব হারাবে না সরকার। কর আদায়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের সম্পদশালীর খোঁজ করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, আপনার কথা সঠিক। তবে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যেভাবে বাড়ানো হচ্ছে তাতে অল্প অর্থও এখন বড় বিষয়। আপাতত করমুক্ত আয়সীমা না বাড়িয়ে অন্য কোনোভাবে জনগণকে স্বস্তি দেয়ার পথ খোঁজা উচিত। এ পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেন। করমুক্ত আয়সীমার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মতামত পাওয়ার চূড়ান্ত রাজস্ব বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এদিকে তৈরি পোশাক খাতে করপোরেট কর হার কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ জোরালো অবস্থান নিয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে এ হার কমানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। গতকাল এনবিআরের বৈঠকে এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। অর্থমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী তৈরি পোশাক খাতের করপোরেট কর হার ১০ শতাংশ নির্ধারণে মত দিলেও তা কবে থেকে কার্যকরী ধরা হবে সে বিষয় জানাননি। তবে এনবিআর কর্মকর্তারা করপোরেট কর হার ৩৫ শতাংশ থেকে একধাপে কমিয়ে ১০ শতাংশ না করে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর পক্ষে মত দেন। একই সাথে পরিবর্তিত করপোরেট কর হার বিগত অর্থবছরের জের টেনে না এনে আগামী অর্থবছর থেকে কার্যকরীর পক্ষে তারা। এ বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর মতামতের জন্য রাখা হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে করপোরেট কর হার ১০ শতাংশ নির্ধারিত ছিলো। পরের অর্থবছর এ হার বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়, যা চলতি অর্থবছরেও বহাল আছে।

ওদিকে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তনে রাজি হননি অর্থমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, করদাতার সংখ্যা না বাড়ালে রাজস্ব আদায় বাড়বে না। এ জন্য এনবিআর কর্মকর্তাদের শহর ছেড়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানকে আরো কঠোর হতে বলেন তিনি। আগামী রাজস্ব বাজেটে কী পরিমাণ নতুন করদাতার সন্ধান করবেন তার হিসাব অন্তর্ভুক্তির জন্য বলেন তিনি। বৈঠকে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বিড়ি-সিগারেটের রাজস্ব হারে পরিবর্তন, ভ্রমণ কর কমানোর বিষয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এনবিআর বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তারা একমত হন। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর চূড়ান্ত রাজস্ব বাজেটের প্রস্তাবে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।