কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় ধামাচাপা পড়ছে চাঞ্চল্যকর গুপ্তহত্যার রহস্য

 

স্টাফ রিপোর্টার: একের পর এক সন্দেহভাজন খুনি ও জঙ্গিরা ৱ্যাব-পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় ধামাচাপা পড়ছে চাঞ্চল্যকর গুপ্তহত্যার রহস্য। মুখ থুবড়ে পড়ছে স্পর্শকাতর এসব মামলাসহ বেশ কিছু মামলার তদন্ত। এ সুযোগে কিলিং মিশনের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি নেপথ্য মদদদাতারাও বরাবরের মতো থেকে যাচ্ছে অধরা। এতে টার্গেট কিলিঙের পথ আরো প্রশস্ত হচ্ছে। ভেঙে পড়ছে মানবাধিকার ও আইনের শাসন; জনমনে তৈরি হচ্ছে প্রশাসন তথা সরকারের প্রতি অনাস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা ও দুর্বলতা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে এ ধরনের সন্দেহভাজন খুনিদের গ্রেফতারের পর ৱ্যাব-পুলিশের হেফাজতে ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় বইছে। বিশেষ করো স্বার্থে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে কি-না তা নিয়েও চলছে নানামুখী সমালোচনা। পাশাপাশি এ অপতৎপরতা বন্ধে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনগুলো নানা আন্দোলনে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। এসব মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, এমনিতেই এসব চাঞ্চল্যকর গুপ্তহত্যা মামলার রহস্যা খুঁজে পাওয়া এবং কিলিং মিশনে অংশ নেয়া দুর্ধর্ষ জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা অত্যন্ত দুরূহ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত এগিয়ে নেয়াও যথেষ্ট কঠিন। এ অবস্থায় এসব ঘাতকরা গ্রেপ্তারের পর ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ার মানেই হচ্ছে পুরো মামলার তদন্তই নিশ্চিত প- হয়ে যাওয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গুপ্তহত্যা মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ক’দিনে তদন্ত যতটুকু এগিয়ে নিয়েছিলাম, তার পুরোটাই ভেস্তে গেছে।’ এ মামলার সুষ্ঠু চার্জশিট আদৌও কোনোদিন দেয়া সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
উদ্বিগ্ন ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গুপ্তহত্যা মামলার গ্রেপ্তারকৃত একজন আসামিকে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে এ মামলায় যেভাবেই চার্জশিট দেয়া হোক না কেন চাঞ্চল্যকর এসব হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত অপরাপর আসামি এবং এর নেপথ্য মদদদাতাদের কখনই বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে না। স্পর্শকাতর এসব মামলার শীর্ষ আসামিরা কীভাবে কেন একের পর এক ক্রসফায়ারে মারা যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে অপর একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, কেন ক্রসফায়ারে দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা নিহত হচ্ছে তা অনেকটাই পরিষ্কার। এ জন্য তিনি বিচারহীনতাকে দায়ী করে বলেন, ৱ্যাব-পুলিশ মাসের পর মাস রাত জেগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব জঙ্গি গ্রেপ্তার করছে। অথচ বছর না ঘুরতেই তারা আবার জামিনে বেরিয়ে এসে কিলিং মিশনে নামছে। এতে বিচার ব্যবস্থায় আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। আর এ ফলশ্রুতিতেই বন্দুকযুদ্ধে গুপ্তঘাতকদের নিহত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে।
এদিকে অপরাধ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ৱ্যাব-পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে গুপ্তঘাতকরা নিহত হওয়ার মানে শুধু একটি মামলারই তদন্ত প- হয়ে যাওয়া নয়, এর সঙ্গে আরো অনেক মামলারও অপমৃত্যু ঘটছে। কেননা মুষ্ঠিমেয় জঙ্গি-সন্ত্রাসীই একাধিক টার্গেট কিলিংয়ের সঙ্গে জড়িত। এদের কেউ কেউ সশরীরে একাধিক হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে বলে পুলিশের তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে। তাই একজন জঙ্গির মৃত্যুর সঙ্গে অনেক মামলার তদন্তকাজ পুরোটাই থমকে যাচ্ছে_ যোগ করেন অপরাধ পর্যবেক্ষকরা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্মকমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার প্রধান আসামি ও সন্দেহভাজন ব্যক্তির মৃত্যুতে মামলা তদন্তে কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। যদিও এসব আসামি দিয়ে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয়াতে পারলে মামলার জন্য ভালো হতো বলেও তিনি স্বীকার করেন। পুলিশের সাবেক একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, গুপ্তহত্যার ঘাতকদের গ্রেপ্তারের চেয়ে এদের গডফাদারদের চিহ্নিত করে আইনের মুখোমুখি করা জরুরি। কেননা, মাঠপর্যায়ের একজন সদস্যের মৃত্যুর পর আরেকজন কর্মী অনায়াসেই সে স্থান দখল করবে। তাই এসব গুপ্তহত্যার নীলনকশা প্রণয়নকারীদের মুখোশ উন্মোচন না করা পর্যন্ত এ ধরনের নৃশংসতা বন্ধ করা অসম্ভব। অথচ গ্রেপ্তারকৃত ঘাতকরা একের পর এক ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ায় এর নেপথ্য ইন্ধনদাতা মূল হোতারা পুরোপুরি ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।

জঙ্গি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে বলেন, নিকট ও দূরবর্তী অতীতের যেসব ঘটনার কিলাররা ক্রসফায়ারে মারা গেছে, ওইসব ঘটনার তদন্ত কীভাবে প- হয়েছে তা ঘেঁটে দেখলেই সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ময়মনসিংহের ত্রিশালে জেএমবির ৩ সদস্যকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত এক জঙ্গি পুলিশের কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর পুরো মামলার তদন্ত থমকে গেছে। দীর্ঘদিনেও নানা প্রচেষ্টায় পুলিশ তা আর বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। এমনকি এ মিশনে অংশ নেয়া বাকি দু সদস্য কোথায়, কী অবস্থায় আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দীর্ঘদিনেও তা উদ্ঘাটন করতে পারেনি। তাই এসব বন্দুকযুদ্ধের নেপথ্যে নিশ্চিত বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেন এ জঙ্গি বিশেষজ্ঞ।

প্রসঙ্গত, গত দু মাসে গুপ্তহত্যা মামলার অন্তত ৭ আসামি ক্রসফায়ারে নিহত হয়। এর মধ্যে গত ৬ জুন রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে কথিত ক্রসফায়ারে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য জামাল উদ্দিন নিহত হন। এর একদিন পর ৭ জুন ঢাকায় পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জাময়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সদস্য তারেক হোসেন মিলু ওরফে ইসমাইল এবং সুলতান মাহমুদ ওরফে রানা ওরফে কামাল ওরফে মিলুর বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিমকে কুপিয়ে হত্যা ও দিনাজপুরে ইসকন মন্দিরে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। আর সুলতান মাহমুদ ওরফে রানা বগুড়া শিয়া মসজিদে গুপ্তহত্যার অন্যতম আসামি। এক ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত জেএমবির আরেক সদস্য মো. কায়সার ৮ জুন বগুড়ায় ক্রসফায়ারে নিহত হন।
গত ১৩ জুন পাবনার ঈশ্বরদীতে সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) সুজাউল হত্যা মামলার প্রধান আসামি রুবেল হোসেন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। ১৮ জুন রিমান্ডে থাকা অবস্থায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন মাদারীপুরে শিক্ষকের ওপর হামলায় গ্রেপ্তারকৃত গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম। সর্বশেষ ১৯ জুন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ লেখক ও বস্নগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার প্রধান আসামি শরিফ ওরফে হাদী নিহত হন।

এদিকে গুপ্তহত্যার কিলার গ্রুপ নিহত হলেই যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না এ বিষয়টি এখন দেশের সাধারণ মানুষও জেনে গেছে। তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার বিচার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা জোরালো কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছে, ‘ক্রসফায়ার নয়, দেশের প্রচলিত আইনে সুষ্ঠু বিচার চাই।’ মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন দুজন ব্যক্তি মনে করেন, বিরোধী দলকে সামাল দিতে সরকার অতি তৎপর। যার ফলে একই সঙ্গে বেড়েছে ঘোষিত (ক্রসফায়ার) ও অঘোষিত (গুপ্তহত্যা-গুম) বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-।
এদিকে আইনজ্ঞরা বলছেন, ক্রসফায়ারের মাধ্যমে সরকার অপরাধ দমন করছে না, আসলে সমাজকে হিংস্র ও বর্বর করে তুলছে। তাদের ভাষ্য, ক্রসফায়ারের অর্থ হলো আইন ও বিচারব্যবস্থার ওপর সরকারেরই নিজের আস্থা না থাকা। ক্রসফায়ারের মাধ্যমে সরকার যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তার অর্থ দাঁড়াবে যেকোনো সাধারণ মানুষও বিচার নিজের হাতে তুলে নেবে। ভয়াবহ সহিংসতা সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়াবে।

পুলিশের একজন সাবেক আইজি এ প্রসঙ্গে বলেন, পুলিশ প্রবিধান (পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল পিআরবি) অনুযায়ী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের তদন্তের বাধ্যবাধকতা আছে। এসব তদন্তে দেখা হয়, কোন পরিস্থিতিতে গুলি ছোড়া হয়েছিলো এবং গুলি ছোড়ার মতো আদৌ কোনো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিলো কি-না। কোনো ঘটনার ক্ষেত্রে গুলি ছোড়া যুক্তিযুক্ত না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি ঘটনার তদন্তও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ক্রসফায়ারের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে রাতের অন্ধকারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিটি ঘটনার একই বর্ণনা দেয়। বলা হয়, বন্দুকযুদ্ধের কথা। কিন্তু হতাহত হয় এক পক্ষে। ফলে এসব বর্ণনার সত্যতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়। মানুষ এসব বর্ণনা বিশ্বাস করে না। ফলে প্রশাসনের ওপর তৈরি হয় জনঅনাস্থা। যা কমিউনিটি পুলিশিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ক্রসফায়ার কিংবা গুপ্তহত্যার নামে দেশজুড়ে যা চলছে, সেটা কোনো সভ্য সমাজের রূপরেখা নয়। এগুলো অগণতান্ত্রিক, অসভ্য ও বর্বর সমাজের চিত্র। যেখানে হিংসা আর প্রতিহিংসাই রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য।

দেশের মানবাধিকার পেছনের দিকে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে মানবাধিকার বলতে কিছু আছে বলে তো মনে হয় না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার হুমকির বার্তা দেয়া সত্ত্ব্বেও সরকার কর্ণপাত করছে না। শুধু বিরোধী দল নয়, সরকারবিরোধীদের ওপর যেভাবে দমন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে তাতে আগামীর বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটি বলা কঠিন।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বলেন, বিরোধীদের দমনের নামে দেশের প্রতিটি স্থানের নির্যাতনের চিত্রই পত্রপত্রিকায় উঠে আসছে। কিন্তু তারপরও কেন দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, সেটি বোধগম্য নয়। সবমিলিয়ে দেশ এখন অসভ্য ও বর্বরদের হাতে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, প্রথমত, ক্রসফায়ার, গুম পুরোপুরি অবৈধ। আইনগত দিক থেকে এর ভিত্তি নেই। কেউ অপরাধী হলে তার তদন্ত হবে, আইনের আশ্রয়ে বিচার হবে, কিন্তু ক্রসফায়ার কিংবা গুমের মতো নীতিহীন শাস্তি গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়ত, দেশের বিচার ব্যবস্থা ডিস-ফাংশনাল বা প্রায় অকার্যকর। এখানে একশ’ জন আসামিকে আটক করা হলে ৮০ ভাগই ছাড়া পেয়ে যায়। বাকি ১৫-২০ জনকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়। পুলিশি তদন্তে গাফিলতি, অপরাধ প্রমাণের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে এসব অপরাধীর বিচার হয় না। তাই সর্বপ্রথম বিচার ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হবে। যেকোনো অপরাধের যথাযথ তদন্ত সম্পন্ন করে দোষীকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা হারাবে। এক সরকারের পর আরেক সরকার ক্ষমতায় আসবে, আর বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- বাড়তেই থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার বলেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- সব সময়ই নিন্দনীয়। এ হত্যাকা- অগণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। তিনি বলেন, মানুষ এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাইছে। কেউ যদি অন্যায় করে থাকে, তবে তার জন্য আইন-আদালত আছে। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে গুম ও ক্রসফায়ারের নামে হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, দেশ পরিচালনায় যখন জনগণের অংশগ্রহণ হ্রাস পায়, অর্থাৎ গণতন্ত্র শুধু নামেই থাকে, তখন সব ধরনের অপরাধ এবং অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যায়। দুর্নীতি বাড়ে, নির্বাচনে সহিংসতা বাড়ে। কালোবাজারি-সিন্ডিকেটও বেড়ে যায়। হত্যা-ডাকাতিও বাড়বেই। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অভাব দেখা দিলে দেশ ঠিকমতো পরিচালিত হয় না। আর তখনই বহিঃপ্রকাশ ঘটে পরস্পর দোষারোপের অপসংস্কৃতি। বিশেষ করে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে অপবাদ দিতে শুরু করে, যা এখন চলছে।
শাহদীন মালিক আরো বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রহীনতা এবং দেশের মধ্যে স্বল্প গণতন্ত্র চলছে। যার কারণে অপবাদের অপসংস্কৃতি থামছে না। তিনি মনে করেন, এ সংস্কৃতি শুধু চলতেই থাকবে না, বাড়তেও থাকবে। কারণ দলগুলো শিগগিরই গণতান্ত্রিক হবে না। আর সেই কারণে দেশের গণতন্ত্রও দুর্বল থাকবে। তিনি বলেন, একের পর এক হত্যাকা- সংঘটিত হচ্ছে। পুলিশ এসব অপরাধে ক্রসফায়ার ছাড়া অন্য কোনো সুরাহা করতে পারছে না। তাদের পারার সম্ভাবনা কম। কারণ পুলিশ এখন জনগণের নিরাপত্তা দেয়ার চেয়ে সরকারি দলের নেতাসহ ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সুবিধা এবং নিরাপত্তা বিধানে বেশি ব্যস্ত।