এমসি দিতে পক্ষপাতিত্ব ॥ গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক স্বাধীনের বিরুদ্ধে তদন্ত

গাংনী প্রতিনিধি: সংঘর্ষে আহত রোগীর মেডিকেল রিপোর্ট (এমসি) দিতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে মেহেরপুর গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সজিব উদ্দীন স্বাধীনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। সিভিল সার্জন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল বৃহস্পতিবার গাংনী হাসপাতালে তদন্ত করেছেন। এ সময় অভিযোগকারীসহ আরো কয়েকজন ভুক্তভোগী উপস্থিত হয়ে ডাক্তার স্বাধীনের দৃষ্টান্তমূলক সাজা ও মেডিকেল রিপোর্ট সংশোধনের দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাবু মিয়া নামের এক ভুক্তভোগী সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি প্রধান সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. অলোক কুমারসহ অন্য সদস্যরা দুপুরে গাংনী হাসপাতালে পৌঁছান। অভিযোগকারী পরিবারের পক্ষ থেকে বাবু মিয়ার চাচা উসমান হোসেনসহ কয়েকজন অভিযোগ পেশ করেন। এছাড়াও ডাক্তার স্বাধীন কর্তৃক মেডিকেল রিপোর্ট পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে বেতবাড়িয়া গ্রামের ভিক্ষুক পরিবার ও তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের আরো একটি পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাবু মিয়ার অভিযোগ, আমার পরিবারের সাথে প্রতিবেশী আব্দুল মালেকের শাশুড়ির জমিজমা নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। গত এপ্রিল মাসে দু পক্ষের মারামারি হয়। এতে আমার পরিবারের গুরুতর আহত কয়েকজন গাংনী হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্রত্যেকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের গভীর ক্ষত ছিলো। কিন্তু ডাক্তারি প্রতিবেদনে তা হালকা ক্ষত বলে উল্লেখ করা হয়। পক্ষান্তরে আব্দুল মালেকসহ তার পরিবারের তিন সদস্যর শরীরে তেমন কোনো ক্ষত ছিলো না। মেডিকেল অফিসার সজিব উদ্দীন স্বাধীন ডাক্তারি প্রতিবেদনে প্রকৃত তথ্য গোপন করেছেন। ফলে মামলা তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা এমসি অনুযায়ী আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। এতে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন আব্দুল মালেকের পরিবার। ডাক্তার স্বাধীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও এমসি পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগী বাবু বলেন, মেডিকেল রিপোর্টে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। রিপোর্ট সংশোধন না হলে মামলাও বিচার পাবো না।
এদিকে ভবানীপুর গ্রামের মিনারুল ইসলামকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে গ্রামের প্রতিপক্ষ। তার মাথায় ২৬টি সেলাই দেয়া হয়। মিনারুল ইসলামের মা ভিক্ষা করে সংসার চালান। ডাক্তারি প্রতিবেদনে সত্য আড়াল করা হয়েছে। ফলে পুলিশ প্রতিবেদনেও একই ঘটনা ঘটেছে। মাথায় আঘাত নিয়ে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি মিনারুল। প্রকৃত এমসি না পাওয়ায় মামলাও বিচার পাবেন না বলে আশঙ্কা করছেন মিনারুলের পরিবার। একই ঘটনা ঘটেছে তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে। প্রতিপক্ষের হামলায় একই পরিবারের কয়েকজন আহত হলেও মেলেনি প্রকৃত এমসি। এদিকে তদন্ত চলাকালে স্থানীয় লোকজনও হাজির হন সেখানে। ডাক্তার সজীব উদ্দীন স্বাধীনের বিরুদ্ধে তারা বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন।
তদন্ত কমিটি প্রধান ডা. অলোক কুমার বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ চলছে। ভুক্তভোগীরা তাদের অভিযোগের বিষয়ে যুক্তি/প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ ছাড়াও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন। এখন থেকে ডাক্তার স্বাধীনকে এমসিতে সম্পৃক্ত করা হবে কি-না তা বিবেচনার বিষয়। দোষী প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ডাক্তার স্বাধীনের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।