এবার ইন্দোনেশীয় উপকূলে ৫শ অভিবাসী উদ্ধার

থাইল্যান্ডের গহন জঙ্গল থেকে আরও ২ বাংলাদেশিকে উদ্ধার

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম উপকূলে রোববার ৫শ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃতরা সবাই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিক। তবে এর মধ্যে কতোজন বাংলাদেশি আর কতোজন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম সে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। প্রথমে আচেহ প্রদেশের মানতাং পুনতংয়ে তাদের রোববার সকালে আনা হয়। থাইল্যান্ডের গহিন জঙ্গল থেকে আরও ৩২ বাংলাদেশীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিকে দেশটিতে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চলায় তারা নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।

আচেহ প্রদেশের অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলের প্রধান বুদিওয়ান বলেন, জেলেরা মাছ ধরার সময় দেখতে পায় কিছু মানুষ উত্তর আচেহ উপকূলে নৌকার মধ্যে রয়েছে। আমরা খবর পেয়ে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করি। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। বর্তমানে তারা নিরাপদে রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি অভিবাসীরা সবাই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিক। বুদিয়ান বলেন, উত্তর আচেহ জেলার একটি শিবিরে তাদের রাখা হয়েছে। ইমিগ্রেশন ও পুলিশ সদস্যরা তাদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছে।

ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এজেন্সির কর্মকর্তা দারাসা বলেন, রোববার সকালে অভিবাসীরা উত্তর আচেহ জেলায় পৌঁছে। তিনি কয়েজনজন অভিবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এদের মধ্যে একজন জানান, মানব পাচারকারীরা ইন্দোনেশিয়া উপকূলে পৌঁছে বলে তোমরা মালয়েশিয়ায় পৌঁছে গেছ। কিন্তু নেমে দেখি আমরা ইন্দোনেশিয়ায়।

দারাসা বলেন, গত সপ্তাহে মিয়ানমারে জতিগত সহিংসতায় পড়ে ৫টি নৌকা নিয়ে দেশটি ত্যাগ করে। আমরা ধারণা করছি এদের মধ্যে ওই অভিবাসীরা রয়েছে। দারাসা বলেন, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৮৩ জন নারী ও ৪১টি শিশু রয়েছে। এদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারীও রয়েছেন। ১০ বছর বয়সের নিচেও শিশু রয়েছে। দারাসা আরও বলেন, তাদের উদ্ধারের সময় নৌকায় কিছু খাবার ও পানিও পাওয়া যায়। তবে অভিবাসীরা অসুস্থ। তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন।

জাকার্তার অভিবাসী সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার উপপ্রধান স্টিভ হ্যামিল্টন জানান, দুটি নৌকা থেকে রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করা হয়েছে। একটি নৌকায় প্রায় ৪৩০ জন, অন্যটিতে ৭০ জন ছিল। তিনি আরও জানান, ত্রাণকর্মীরা সেখানে পৌঁছেছেন। উদ্ধার হওয়াদের অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাদের দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।

থাইল্যান্ডের জঙ্গল থেকে ২ বাংলাদেশি উদ্ধার: থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গল থেকে ৩৯ বাংলাদেশী অভিবাসীকে উদ্ধার উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার শংখলা প্রদেশের হাতইয়াই ও রাত্তাফুম জেলা সংলগ্ন একটি পাহাড় থেকে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। সেখানকার একটি বনের পাশে হাঁটাহাঁটি করার সময় স্থানীয় পুলিশের নজরে আসে তারা।

ক্ষুধা আর ক্লান্তিতে তাদের শরীর ভেঙে পড়েছে। তাদের রাত্তাফুমের একটি আশ্রয়কেন্দ্র নেয়া হয়েছে। এর আগে রাত্তাফুম থেকে উদ্ধার হওয়া আরও ১১৭ অবৈধ অভিবাসীকে এ আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ৯১ জনই বাংলাদেশি।

কৌশল পরিবর্তন করেছে পাচারকারীরা: ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের পাচার করা হচ্ছিলো বলে উল্লেখ করেছেন মিয়ানমারের আরাকান প্রজেক্টের প্রধান ক্রিস লেওয়া। তিনি জানান, মানবপাচারকারীদের আশ্রয় নেয়ার প্রধান জায়গা ছিলো থাইল্যান্ড। সেখানকার গহিন অঞ্চলে বিদেশগামীদের আটকে রেখে নির্যাতন করে স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ নেয়া হতো। কিন্তু সম্প্রতি থাইল্যান্ড সরকারের তৎপরতার কারণে তারা ওখানে যাচ্ছে না।

বর্তমানে পাচারকারীরা বিদেশগামীদের নৌকার ভেতরেই আটকে রাখছে। সেখানে তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। লেওয়া আরও জানান, বর্তমানে মালাক্কা প্রণালিতে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিকে আটকে রেখেছে মানবপাচারকারীরা। গত সপ্তাহে মালয়েশিয়া সংলগ্ন শংখলা প্রদেশে জঙ্গলের গণকবর থেকে ৩৩টি মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর এ এলাকায় পাচারকারীদের ধরতে এবং অবৈধ পাচারের শিকার মানুষদের উদ্ধার করতে অভিযান চালাচ্ছে থাই কর্তৃপক্ষ।