এবারের নির্বাচনেও এইচএম এরশাদ বন্দি

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ জেলে বন্দি অবস্থায় অতীতে তিনটির মধ্যে দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটছে না। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দি এরশাদের পরোক্ষ অনুমতিতেই আজ দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তার দল। যদিও এবারের নির্বাচনে এরশাদের অংশ নেয়ার ব্যাপারে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনো বিদ্যমান।

জানা গেছে, ১৯৮২ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসন পদে থাকা অবস্থায় মূলত এইচএম এরশাদ রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন মুসলিম লীগের বি এ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, আওয়ামী লীগের মিজান চৌধুরী, তৎকালীন ইউপিপি নেতা কাজী জাফর আহমদ ও শাহ মোয়াজ্জেমসহ আরো কয়েকজনের সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা করেন। ৮২ সালে ক্ষমতা দখলের এক বছরের মাথায় এরশাদ বিএনপির তৎকালীন প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয় ১৯ দফার বিকল্প হিসেবে ১৮ দফা দিয়ে নেপথ্যে জনদল গঠন করেন। দু বছর পর ৮৪ সালে তিনি গঠন করেন ন্যাশলালিস্ট ফ্রন্ট। কালের পরিক্রমায় যা আজকের জাতীয় পার্টি নামে পরিচিত। এরইমধ্যে ৮৬ সালে এরশাদ প্রথম জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত অংশ নেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এরশাদ ২ বছর দেশ শাসন করেন। পরে শুরু হয় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। যা চলে ১৯৯০ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। একদিন পর ৬ ডিসেম্বর পতন হয় সামরিক শাসক এরশাদের। এদিন সকাল থেকে কয়েকমাস তিনি কার্যত গৃহবন্দি থাকার পর ১৯৯১ সালের প্রথম দিকে আটক হন এরশাদ। পরে একই বছরের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন। এ সময় জেলে থাকা এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয়। তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের পাশাপাশি নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি ৩৫ আসন পায়। এ বছরই এরশাদ প্রথম ৫টি আসনে নির্বাচিত হন। প্যারোলে মুক্তি দিয়ে শপথের পর আবার তাকে জেলে ঢোকানো হয়। এ অবস্থায় টানা ৬ বছর জেলে কাটান তিনি। এরইমধ্যে ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলে ক্ষমতাসীন বিএনপির বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একদলীয় নির্বাচন করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু বেশি দিন টেকেনি সেই সংসদ। বাধ্য হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে একই বছর জুন মাসে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তখনো জেলে থাকাবস্থায় এরশাদের নির্দেশে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এরশাদ নিজের ৩টিসহ জাপা পায় ৩২ আসন। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জেল থেকে কিছুদিনের জন্য ছাড়া পান এরশাদ। পরে জনতা টাওয়ার মামলায় আবার তাকে জেলে নেয় হাসিনা সরকার। এ অবস্থায় ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এরশাদের অংশগ্রহণ অযোগ্য ঘোষণা করে আদালত। ফলে নিজে অংশ নিতে না পারলেও এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি সে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১৪টি আসন পায়। এরইমধ্যে নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিতে প্রথমে বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ও পরে চরমোনাই পীরের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাঁধেন সাবেক এ সেনাশাসক। কিন্তু আওয়ামী লীগের সরকারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে হঠাত করেই বিলেত পাড়ি দেন এরশাদ। অনেক জল ঘোলা করে সর্বশেষ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী জোটবদ্ধ হন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। এ বছর তার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ২৭ আসন পায়। যদিও পরে এরশাদের ৩টি আসনের মধ্যে ২টি কেড়ে নেয় তার ভোটের মিত্র আওয়ামী লীগ।