উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতরা নজরদারিতে

 

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিশেষ গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য কৌশলগত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা যে কোনোভাবে দেশে সংকট তৈরির চেষ্টাও করছে। এই বিশেষ গোষ্ঠীকে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন তাদের দেশি এবং বিদেশিচক্রের লোকেরা। এরা চাচ্ছে বাংলাদেশে নতুন করে সংকট দেখা দিক। আর সংকটকে পুঁজি করে চক্রান্তকারীরা আবারো নীলনকশার অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে চায়। কিন্তু সরকার এসব বিষয়ে খুবই সতর্ক। এ জন্য যে কোনো ধরনের তৎরপতার ওপর নজর রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের ওপর রয়েছে গোয়েন্দাদের কঠোর নজরদারি। চিহ্নিত ব্যক্তিদের যে কোনো সময় আইনের আওতায় আনা হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দেশে নতুন করে সংকট তৈরির জন্য সরকারবিরোধীরা কৌশল নিয়েছে। তারা বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে রুষ্ট করার জন্য যা যা করা দরকার সে ধরনের ব্যর্থ চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে। এদের সঙ্গে বিদেশি গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। যে চক্রটি বাংলাদেশে কথিত আইএস আছে বলে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারাই নেপথ্যে থেকে সরকারবিরোধীদের মদত দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশি এবং বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। কিন্তু আমাদের গোয়েন্দারা আগাম তথ্যের মাধ্যমে সব ষড়যন্ত্র রুখতে সক্ষম হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা আন্দোলনের নামে অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলা করবে তাদের দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে।

দায়িত্বশীল এক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সরকারবিরোধী তথা রাষ্ট্রের স্বার্থহানিকর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছে একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবী, সাবেক আমলা এবং মৌলবাদী গোষ্ঠী। যারা দেশি ও বিদেশি চক্রের সাথে জোট হয়ে সংকট তৈরির পাঁয়তারা করছে। এর আগে ভিন্নধর্মের লোকদের ওপর হামলা, বাংলাদেশের ওপর কয়েকটি দেশের নাগরিকের চলাফেলার রহস্যজনক সতর্কবার্তা, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলা, সরকার পতনের জন্য ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সরকারবিরোধীদের কানেকশন এবং অব্যাহত ষড়যন্ত্র একইসূত্রে গাঁথা। এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকচক্র তাদের বুদ্ধিজীবী তথা প্রথম সারির লোকদের সামনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের বলা হচ্ছে, যে কোনো উপায়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। এমনকি এদের বিশেষ অ্যাসাইমেন্টও দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে বিশেষ বিশেষ স্থানে নানা অজুহাতে বিতর্কিত বিষয় নিয়ে সভা-সেমিনারের নামে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করা। মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হবে সে ধরনের চাঞ্চল্য তৈরি এবং পুলিশ যাতে তাদের কর্মকাণ্ডে মারমুখী অবস্থানের দিকে ধাবিত হয় এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে অব্যাহত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারী।

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সরকার উৎখাতের জন্য কোলকাতা, দিল্লি ও লন্ডনে তিনটি বৈঠক করেছে ইসলাইলী প্রভাবশালী নেতা ও মোসাদের দায়িত্বে থাকা মেন্দি এন সাফাদি। এই ব্যক্তির সঙ্গে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা এবং মোসাদের এক এজেন্ট বৈঠকগুলোতে অংশ নেন। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, লন্ডনের বৈঠক থেকে বিএনপির এক নেতার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা হয় মেন্দির। ওই বিএনপি নেতার ওপর এখন কঠোর নজরদারি চলছে। এই চক্রের লোকেরাই সিঙ্গাপুরে জঙ্গিবাদী তৎপরতায় জড়ায় বাংলাদেশি যুবকদের।

এছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াও, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা এবং ২০০১ সালের ডকুমেন্টারি নিয়ে সরকারবিরোধী প্রচারণা ধর্মীয় ইস্যু ব্যবহার করে সরকারকে বিতর্কে ফেলতে যারা সক্রিয় ছিল তারাই নানাভাবে উসকে দিচ্ছে আবার। এরই অংশ হিসেবে কয়েকদিন আগে রাজধানীতে একটি সংবাদ সম্মেলনে বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার ‘ভারতে গো রক্ষা আন্দোলনের নামে মুসলিম হত্যার প্রতিবাদ’ করেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশকে রুষ্ট করার চক্রান্ত চলছে।

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা জানান, দেশে যখন নির্বাচনমুখী একটা পরিবেশ তৈরি হচ্ছে তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এ মুহূর্তে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে দেশি-বিদেশি চক্র। আগের ঘটে যাওয়া পরিকল্পিতভাবে বিদেশি হত্যা, পুলিশ হত্যা, শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, খ্রিস্টান যাজকদের ওপর হামলা, হিন্দুদের ওপর হামলা এবং হুমকির যেসব ঘটনা ঘটেছে সে ধরনের তৎপরতা আবারো শুরু করতে মরিয়াগোষ্ঠী সক্রিয় হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, আইএসের উপস্থিতির অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র বানাতে গিয়ে যারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা নতুন কায়দায় তাদের লোকদের সক্রিয় করেছে। এ চক্রের মূল স্বার্থ হচ্ছে ভূ-রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ। এ কারণে তারা এ দেশে কতিপয় দুর্বৃত্তকে হাত করতে তাদের লেলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সরকারের সতর্ককতার কারণে দুর্বৃত্তরা মাথা চাড়া দিলেও কার্যত কোনো সুফল পায় না। তিনি বলেন, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে। এর মাধ্যমে কোনো কোনো গোষ্ঠী তাদের লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার অসাম্প্রদায়িক ও সহিষ্ণু সমাজকে ধরে রাখতে চেষ্টা করছে। সরকার সেটা পেরেছেও। কিন্তু সরকারবিরোধীরা বাংলাদেশকে অকার্যকর করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশে অবস্থান বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংযোগস্থলের কেন্দ্রবিন্দুই হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চায় বিদেশি গোষ্ঠী। যাদের লোকাল এজেন্টরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, যারা সরকারের ভালো চায় না তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরাই নেপথ্যে থেকে উসকে দিচ্ছে উগ্রপন্থিদের। কিন্তু আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করে যাচ্ছি। তবে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বলা হয়েছে, আত্মতুষ্টিতে থাকলে চলবে না। আরো সতর্ক থাকতে হবে। মনিরুল ইসলাম বলেন, কিছু ব্যক্তি উসকানিমূলক তৎপরতায় জড়িত। তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে।