উত্তরের বন্যার পানি নামছে : মধ্যাঞ্চলে নতুন এলাকা প্লাবিত

স্টাফ রিপোর্টার: উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে যমুনা ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বন্যার পানি কমা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে তারা। তারা জানায়, পদ্মা নদীর পানিও আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থিতিশীল অবস্থায় চলে আসবে। এরপর থেকে কমতে শুরু করবে। এদিকে উত্তরের বন্যার পানি নামলেও মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। শনিবার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া উত্তরের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি এখন অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে নদী থেকে পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ বাড়ছে আরও বেশি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ২৪ তারিখ পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত না হলে বন্যা নিয়ে আর কোন আশঙ্কা থাকবে না। এ সময়ের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে ভারি বৃষ্টিপাত হলে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সাধারণত দেশের ভেতরে এবং বাইরে বৃষ্টিপাতের কারণে সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ পর্যন্ত বন্যার ঝুঁকি থাকে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা জানান, এবারের দ্বিতীয় দফায় উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিলেও বন্যার ব্যাপ্তি এবং স্থায়িত্ব ৮৮ বা ৯৮ সালের চেয়ে অনেক কম। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুয়ায়ী দেশের ৩০ ভাগ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তারা জানায়, ইতোমধ্যে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন উত্তরাঞ্চলে এবারের বন্যা পরিস্থিতি অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশিও হলে ব্যাপ্তি এবং স্থায়িত্ব কম ছিলো। বিশেষ করে ৮৮ সালের বন্যায় সারাদেশে ৬১ ভাগ এলাকায় প্লাবিত হয়ে পড়ে। ওই বন্যার স্থায়িত্ব ছিলো অনেক বেশি। আবার ৯৮ সালের বন্যায় ব্যাপ্তি ছিলো ৬৮ ভাগ এলাকায়। পুরো আগস্ট মাসজুড়ে বন্যার স্থায়িত্ব ছিলো। সে তুলনায় এবার বন্যায় ১ সপ্তাহের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে।

বন্যার রেকর্ড ঘেটে দেখা গেছে ১৯৮৭ জুলাই-আগস্ট মাসে সারাদেশে বন্যায় বিপর্যয় দেখা দেয়। ওই বছর ৫৭ হাজার ৩শ বর্গ কিমি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই হিসেবে দেশের ৪০ ভাগের বেশি এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ ধরনের বন্যা সাধারণত ৩০-৭০ বছরে একবার ঘটে। দেশের ভেতরে এবং বাইরে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতই বন্যার প্রধান কারণ ছিলো। ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিমাঞ্চল, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র একীভূত হওয়ায় নিম্নাঞ্চল, খুলনার উত্তরাংশ মেঘালয় পাহাড় সংলগ্ন অঞ্চল বন্যাকবলিত হয়।

এর পরের বছর দেশ আরেক দফায় ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। ১৯৮৮ আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বন্যায় আসা ওই বন্যায় ভয়ঙ্কর বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। প্রায় ৮২ হাজার বর্গকিমি এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শতকরা হিসাবে দেশের ৬১ ভাগ এলাকা বন্যায় কবলিত হয়ে পড়ে। এ ধরনের বন্যা ৫০-১শ বছরে একবার ঘটে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। তারা বলেন, বৃষ্টিপাত এবং একই সময়ে দেশের তিনটি প্রধান নদীর পানি এক সাথে বেড়ে যাওয়ায় বন্যার আরও ব্যাপ্তি ঘটে। রাজধানী ঢাকা শহরও ওই বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়ে। প্রায় ২০ দিন পর্যন্ত বন্যার স্থায়িত্ব ছিলো। ১৯৮৯ সিলেট, সিরাজগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এলাকায় বন্যায় ৬ লাখ লোক পানিবন্দী। ১৯৯৩ সারা দেশে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ২৮ জেলা বন্যাকবলিত হয়। ১৯৯৮ সালে আরেক দফা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে দেশ। এখন পর্যন্ত ওই বন্যার ব্যাপ্তি এবং স্থায়িত্ব ছিলো সবচেয়ে বেশি। আগস্টজুড়ে পুরো দেশে ৬৮ ভাগ এলাকার বন্যার পানিতে তলিয়ে ছিলো। দেশে ১ লাখ ২৫০ বর্গকিমি এলাকা প্লাবিত হয়।

এছাড়াও ২০০৪ সালের জুলাই মাসের বন্যায় দেশের ৩৮ শতাংশ এলাকার ৫৫ হাজার বর্গকিমি এলাকা প্লাবিত হয়। ২০০৭ এই বন্যাকে অনেকে ‘মহাবন্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ওই বছর সেপ্টেম্বর মাসে বন্যা দেখা দেয়। এতে দেশের ৪২ শতাংশ এলাকার ৬২ হাজার ৩শ’ বর্গকিমি এলাকা প্লাবিত হয়। ২০১৩ সরকারী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার তথ্য অনুযায়ী ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৭টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়। ভারত থেকে আসা প্রবল বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বন্যা সংঘটিত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন ২০১৬ বন্যায় উত্তর পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ২৮ জুলাই যমুনার পানি বিপদসীমার ১২১ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের জেলায়গুলোর বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়।

এদিকে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে দেশের ৯০টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে শনিবার ৩৪ কেন্দ্রের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্রাস পেয়েছে ৫১ কেন্দ্রের পানি। তবে এর মধ্যে ২৮টি স্টেশনের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উত্তরাঞ্চলসহ অনেক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। মধ্যাঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ: কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও বুক সমান পানি। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে কুমারভোগ ইউনিয়নের খড়িয়া, রানীগাঁও, কোরহাটি, লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের কোরহাটি, ঝাউটিয়া, তেউটিয়া, পাইকারা, সাইনহাটি, ব্রাহ্মণগাঁও, কনকসার ইউনিয়নের সিংহেরহাটি, বেজগাঁও ইউনিয়নের বেজগাঁও চর, ছত্রিশ, সুন্দিসার চর, গাঁওদিয়া ইউনিয়নের গাঁওদিয়া, শামুরবাড়ি, হাড়িদিয়া, রানাদিয়া, পাখিদিয়া, কলমা-ধাইদা ইউনিয়নের ডহরী, পূর্ব ভরাকর, পশ্চিম ভরাকর, কলমা বিধুয়াইল চর।

পদ্মা নদীতে প্রতিদিন সকাল-বিকেলে হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দী মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। পদ্মার বর্তমান পানির বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোত আরও দু দিন অব্যাহত থাকলে আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর থাকবে না। আমন ধানের জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সাথে তলিয়ে গেছে আবাদ করা সবজি ক্ষেত। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন বানভাসি মানুষ।

গত এক সপ্তাহে পদ্মার পানি বেড়ে লৌহজং উপজেলার ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বিশেষ করে চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে প্রায় শতভাগ। ঝাউটিয়া গ্রামে জাপান-বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত ‘ইলসান শিমিজু আব্দুল মজিদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ বন্যার পানি উঠার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ঝাউটিয়া গ্রামের আমন ধান তলিয়ে গেছে। গ্রামটির ছিটু ব্যাপারী, খলিল ফকির, ইলিয়াস হাওলাদার ও ইমান মাদবর জানান, বানের ফসলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই ধান তলিয়ে যাওয়া ভবিষ্যত নিয়েও শঙ্কিত। ইলিয়াস হাওলাদার জানান, পানি যেভাবে বাড়ছে, আর একদিন এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে তার ঘরের চালার সাথে পানি ঠেকে যাবে। তাই আর মাচা উঁচু করা সম্ভব হবে না। তাই কোথায় যাবেন সেই চিন্তায় এখন অস্থির। কারণ প্রতিদিনই পানি বেড়ে চলেছে। আশপাশের ২৫ গ্রামের শুকনো জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

মানিকগঞ্জ: জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ধলেশ্বরী, ইছামতি, কালিগঙ্গার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মানিকঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে জেলার শিবালয়, হরিরামপুর, ঘিওর, সাটুরিয়া, দৌলতপুর মানিকগঞ্জসহ ৬ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পনিবন্দী রয়েছে। এদিকে স্থানীয় কালীগঙ্গা নদীর পানি তরা পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার বেড়ে তা বিপদসীমার ৮২ সেমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মাদারীপুর: পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী ভাঙ্গনের ব্যাপকতা বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বেড়ে বিপদসীমার ৩৪ সেমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মাদারীপুরের শিবচরে আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর নির্মাণাধীন ২য় সেতুর স্টকইয়ার্ড নদী ভাঙ্গনে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আড়িয়াল নদের ভাঙ্গনের ব্যাপকতা বেড়েছে। নদী ভাঙ্গনে আক্রান্ত হয়েছে জেলার শিবচরের ৫ ইউনিয়ন। এরই মধ্যে কাউলিপাড়া কওমী মাদ্রাসাসহ ২ মাদ্রাসা, চরবহেরাতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২ শতাধিক ঘর বাড়ি এবং শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

শরীয়তপুর: জেলার নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার অন্তত ৩০ গ্রাম প্লাবিত। জাজিরা উপজেলার জাজিরা, বড়কান্দি, ডুবলদিয়া, বিকেনগর, বিলাশপুর ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামে বন্যার পনি ঢুকে পড়েছে। নড়িয়া-জাজিরা সড়কটির ঈশ্বরকাঠি এলাকায় ২ কিলোমিটার জুড়ে হাঁটুপানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এই সড়কে চলাচল বন্ধ রয়েছে। নড়িয়া উপজেলার ঈশ^রকাঠি ও চেরাগ আলী বেপারীকান্দি, নশাসন ইউনিয়নের ককেটি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত। গবাদিপশু ও শিশুদের নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। সরকারের প্রতি সাহায্যের জন্য দাবি জানিয়েছে এসব বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ।

পাবনা: পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে জেলার ৫ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। জেলায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। এর মধ্যে ১০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চলনবিলের পানি অব্যাহত বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যমুনা তীরবর্তী রঘুনাথপুর, মধুপুর, যদুপুর, খানপুরা, প্রতাপপুর এবং যমুনার ওপারে সব চর পানিতে ভাসছে। ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারি নগর, ডেমরা, বিএলবাড়ি, পুঙ্গলী ইউয়িনের পুরো এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে। এ উপজেলায় ১৯টি প্রাথমিক, ৪টি মাদ্রাসা, ২টি হাই স্কুল বন্যাকবলিত। ইতোমধ্যে ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুজানগরে পদ্মা নদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নদীর পার্শ্ববর্তী চারটি ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ফসলি জমি। পাশাপাশি বন্যার পানির তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নতুন করে পাকা করা নারুহাটি-রাইপুর ডিসি সড়ক।

কুড়িগ্রাম: সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কমেনি জনদুর্ভোগ। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬ নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে দুর্ভোগ কমেনি বানভাসিদের। এখনও তলিয়ে আছে চরাঞ্চলের বেশিরভাগ ঘর-বাড়ি। ফলে ঘরে ফিরতে পারছেন না বানভাসিরা। বন্যার পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে তিন শতাধিক ঘর-বাড়ি। বন্যার পানি নেমে গেলেও ঘরে ফিরতে পারবে না ঘর হারানো বানভাসিরা। এখনও উঁচু বাঁধ, পাকা সড়ক ও নৌকায় বসবাস করছেন দুর্গম চরাঞ্চলের পরিবারগুলো। গবাদিপুশুসহ গাদাগাদি করে বসবাস করলেও নিজেদের খাবারের পাশাপাশি সঙ্কটে পড়েছেন গবাদিপশুর খাদ্য সঙ্কট নিয়েও। টানা ৭ দিন ধরে পানিবন্দী থাকায় খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে বন্যাদুর্গত মানুষ। চারণভূমি তলিয়ে থাকায় টিউবয়েল তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গোখাদ্যের তীব্র সঙ্কট। পানিতে বেশি সময় থাকার ফলে হাত-পায়ে ঘা, জ্বর, কাশিসহ ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ। বন্যাদুর্গত এলাকায় চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। নৌকা দেখলেই ত্রাণের আশায় ছুটছে বানভাসিরা। সরকারী, বেসরকারী ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতায় দুর্গম চরাঞ্চলের বন্যাদুর্গতের ভাগ্যে জুটছে না কিছুই। মানুষজন কাছাকাছি এলাকায় ত্রাণ দিয়ে চলে আসছে।

জয়পুরহাট: বন্যার স্রোতে আক্কেলপুর শহর রক্ষাবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পৌর এলাকায় পানি দ্রুত প্রবেশ করছে। ইতোমধ্যে ডাকবাংলোসহ কিছু রাস্তা ডুবে গেছে পানিতে। ছোট যমুনা নদীর পানির তীব্রতায় জয়পুরহাট পৌর এলাকার খঞ্জনপুর স্লুইচ গেটের পশ্চিম অংশে শুক্রবার রাতে ভাঙ্গণ দেখা দিলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বন্যার কারণে জেলায় হাজার হাজার হেক্টর রোপা আমন ফসল পানিরতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। জেলায় গোখাদ্যের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

গাইবান্ধা: পানি সামান্য কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। করতোয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ১শ মিটার জায়গা ভেঙে যাওয়ায় গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা এবং ফুলবাড়ি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। এছাড়া মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের চরপাড়া বালুয়া এলাকায় বাঙ্গালী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিস্তীর্ণ এলাকা ভেঙ্গে যাওয়ায় কোচাশহর, শালমারা, শিবপুর, মহিমাগঞ্জ, রাখালবুরুজ, কামারদহ ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের রঘুনাথপুরে করতোয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ধস দেখা দিলে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিকল্প বাঁধ তৈরি করে ভাঙ্গন পরিস্থিতি রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকার শত শত একর ফসলি জমি ও অসংখ্য ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।

নওগাঁ: বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। শনিবার বেলা ১টার দিকে নওগাঁর আত্রাইয়ে বন্যার পানিতে ডুবে ইয়াম (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশু ইয়াম উপজেলার হিঙ্গলকান্দী গ্রামের মিন্টুর ছেলে। ছোট যমুনা নদীর বাঁধভাঙ্গা পানি তুলসীগঙ্গা নদীতে পড়ে নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে প্লাবিত করেছে।

বগুড়া: পানি নেমে যাওয়ার সাথে এলাকাবাসীর মধ্যে ভাঙ্গনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যাক্রান্ত এলাকায় ২২টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। গোখাদ্যের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে এবারের বন্যায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমি তলিয়ে যাওয়ায় ওই পরিমাণ জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি জোরদার করা হবে। কৃষি বিভাগ দেরিতে রোপণের বীজ থেকে চারা তৈরির কাজ শুরু করেছে।

ঈশ্বরদী: পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী ও লালমনিরহাট বিভাগের কয়েকটি সেকশনে চলতি বন্যার পানির স্রোতে রেলওয়ে ট্র্যাকসাববেজ ও ব্যাংকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।