উঠে যাচ্ছে সরকার নির্ধারিত জমির মূল্য প্রথা : অর্থমন্ত্রী

 

স্টাফ রিপোর্টার: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বিদেশে টাকা পাচাররোধে জমি কেনাবেচায় সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্য পদ্ধতি তুলে দেয়া হবে। আগামী অর্থবছর (২০১৭-১৮) থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর কোনো মাশুল নেয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। গতকাল শনিবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যে দামে জমির মূল্য ঠিক করে দেই, বাস্তবে তার দাম অনেক বেশি। তাই বেশি দামে জমি বিক্রি হয়। জমি কেনাবেচায় অপ্রদর্শিত অর্থই কালো টাকার অন্যতম উত্স। পরবর্তীতে এ কালো টাকা তারা বিদেশে পাচার করে। তাই পাচার বন্ধে আগামী বাজেটে জমির সর্বনিম্ন নির্ধারিত মূল্য পদ্ধতি তুলে দেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রসঙ্গত, জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে সরকার অঞ্চলভেদে বিভিন্ন রকম দাম নির্ধারণ করে দেয়। তবে এ দামের চেয়ে বিক্রয় মূল্য অনেক বেশি। খোদ রাজধানীতে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মূল্য নির্ধারণেও বৈষম্য রয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মূল্য প্রতি বছর বহুগুণ বাড়লেও সেই তুলনায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জমির মূল্য বাড়ছে না। সরকারি জমি সেই আগের মতোই নামমাত্র মূল্যে বরাদ্দ দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। ফলে প্রতিবছর সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এদিকে জমির মূল্য নির্ধারণ করা না হলে এর সুফল সরকার পাবে কি-না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তাদের মতে, প্রকৃত মূল্য এখনো ঘোষণা হয় না। সর্বনিম্ন মূল্য উঠে গেলেও বাস্তবে কেনাবেচা যে দামে হবে তা নিরুপণ করা কঠিন হবে। সরকারের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। ভূমি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, সরকার জমির মূল্য নির্ধারণ করে না দিলে কালো টাকা শাদা করার সুযোগ প্রসারিত হবে। পক্ষান্তরে সরকার রাজস্ব হারাবে।

রেমিট্যান্সে কোনো মাসুল থাকবে না: রেমিট্যান্স বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটাকে বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন থেকে রেমিট্যান্সের ওপর চার্জ আর করবো না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা এটা করবো। প্রবাসীদের আর টাকা পাঠানোর জন্য পয়সা দিতে হবে না। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের কিছুটা আয় কমবে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে কিছুটা মন্দাভাব চলছে। শ্রমিকদের বেতনও কিছু কমানো হয়েছে। আরেকটা কারণ হচ্ছে, প্রবাসীরা আগের মতো তাদের সব টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন না, তাদের হাতে কিছু টাকা রাখছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৈঠকে ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের পুঁজিবাজার এখন আর ফাটকাবাজার নয়, দেশে ব্যবসা পরিচালনাকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার সময় এসেছে। এ বিষয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি, দিয়েও যাবো। আমরা চাই আমাদের প্রতিটি গ্রাম বিদ্যুতায়ন হবে। এখন ৮০ ভাগ গ্রামে বিদ্যুত আছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাখাতকে আমরা সম্প্রসারণের চেষ্টা করেছি। আমরা প্রাইমারি পর্যায়ে অনেকটা সফলও হয়েছি। মাধ্যমিক পর্যায়েও সফলতা অনেক বেড়েছে। প্রত্যকটিতে ভর্তির হার বেড়েছে। তবে মান মোটেই বাড়েনি। তাই এখন মানের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। শিক্ষার মানের দিকে নজরের দাবিটা এখন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকেও আসছে। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন।