ঈদ বিনোদনে ভাটপাড়া ডিসি ইকো পার্ক ও মুজিবনগরে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়

মাজেদুল হক মানিক/শেখ শফি: ঈদ উৎসবে মেহেরপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত। পরিবার-স্বজনদের নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। প্রথম সরকারের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্স, আমঝুপি নীলকুঠির পাশাপাশি দর্শনার্থীদের কাছে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে নির্মাণাধীন ভাটপাড়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইকো পার্ক।
ঈদের পরদিন শনিবার সকাল থেকেই দর্শনীয় কেন্দ্রগুলোতে জেলা ও পাশর্^বর্তী জেলার মানুষের উপস্থিতি শুরু হয়। পরিবারের বিভিন্ন বয়সী সদস্যদের নিয়ে সময় পার করছেন তারা। সারা বছরের কর্মমুখর পরিবেশ থেকে ভিন্ন পরিবেশ উপভোগ করাই একমাত্র উদ্দেশ্য। পাশাপাশি ইতিহাস সংবলিত বিভিন্ন স্থাপনা দেখে বেজায় খুশি শিশুরা। এখানে যান্ত্রিক কোলাহল আর শহর জীবনের ব্যস্ততা না থাকায় মনের পালে হাওয়া লেগেছে তরুণ-তরুণীদের।
ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্ক: বিট্রিশ আমলে গাংনী শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে কাজলা নদীর তীর ঘেঁষে ভাটপাড়া নীলকুঠি স্থাপিত হয়। সেখানে রয়েছে ইংরেজদের কাচারিবাড়ি। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে তা বিলিনের পথে। গত বছর জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ সেখানে পার্ক তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের বিভিন্ন দফতরের স্বল্প সহযোগিতা নিয়ে শুরু হয় পার্কটির দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণের কাজ। নির্মাণাধীন পার্কটিতে রয়েছে পশু-পাখির ভাস্কর্য। দৃষ্টিনন্দন বাগান, পুকুর, শাপলা, ফুটওয়্যার, ফুলের বাগান ও দেশীয় গাছ সম্মৃদ্ধ বাগান। ইংরেজদের শোষণের স্মৃতিচিহ্ন বিজড়িত নীলকুঠির বিভিন্ন স্থাপনা সংস্কারের কাজও চলছে। পশ্চিমে বয়ে চলা এক সময়ের প্রাণ চঞ্চল কাজলা নদী। পুনর্খনন ও দখলদারদের দৌরাত্ম্যে মৃতপ্রায় নদীটি। এর কিছু অংশ পুনর্খনন করা হয়েছে। এতেই চলছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। যা দর্শনার্থীদের বিনোদনের অন্যমাত্রা নিয়ে এসেছে। নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন গেট, পানির ফোয়ারা, লেকের ওভার ব্রিজ, শিশুপার্ক, লেক। আগামী পরিকল্পনায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধু ও ইংরেজ শাসনামলের স্মৃতিসৌধ, বসার স্থান, আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এমনটিই জানালেন জেলা প্রশাসক। ডিসি ইকোপার্কের নকশাকার গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দিলিপ কুমার সেন বলেন, ১০০ বিঘা জমির ওপর পার্কটি স্থাপিত হচ্ছে। কাজলা নদীর দু পাড়ে দৃষ্টিনন্দন বাগানের মধ্যে বসার স্থান ও পায়ে হাঁটার পথ নির্মাণ করা হবে। গত পয়লা বোশেখ থেকে ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্কটিতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় শুরু হয়। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীরা আসছেন।
দর্শনার্থী সদর উপজেলার বর্শিবাড়িয়া গ্রামের আব্বাস আলী বলেন, ভাটপাড়া নীলকুঠিতে ১০-১২ বছর আগে দেখতে আসতাম। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে দর্শনার্থী বিমুখ পড়ে পড়েন। এখন পার্ক নির্মাণের ফলে নির্মল পরিবেশে ঘুরতে পারছি। পরিবার নিয়ে বেড়ানোর মতো একটি ভালো জায়গা পেয়েছি। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা শহর থেকে আসা ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, পার্কটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হবে। যেটুকু নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে তা অবশ্যই আশা জাগাচ্ছে।
মুজিবনগর কমপ্লেক্স: বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্যোদয় ভূমি হিসেবে ঐতিহাসিক খ্যাতি রয়েছে মুজিবনগর কমপ্লেক্সের। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রথম সরকারের শপথের স্থানটিকে ঘিরে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিসৌধ। ছায়া সুনিবিড় মনোমুদ্ধকর বিশাল আমবাগান। পূর্বদিকে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরভিক্তিক বিশাল মানচিত্র ও মানচিত্রের সামনে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মুর‌্যাল।
চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়ার শিবলি হোসেন ও তার বন্ধু আনোয়ার হোসেন বলেন, মুজিবনগরের সাথে বাঙালির নাড়ির টান রয়েছে। এখানো বেড়ানোর মতো ভালো পরিবেশ পেয়েছি। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্থাপনা দেখে একাত্তর সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। একাত্তরের বাংলাদেশ দেখতে ছাত্রছাত্রীদের এখানো আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। এদিকে নির্বিঘেœ ঈদ বিনোদনের জন্য পুলিশ টহল বৃদ্ধি করেছে জেলা পুলিশ। দর্শনীয় স্থানগুলো ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পুলিশ প্রহরা রয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে আরও কয়েকদিন পুলিশের বাড়তি এ নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।