ইয়াসির আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে হত্যার প্রমাণ

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ফিলিস্তিনিদের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে হত্যার সন্দেহ যারা করছিলেন এতোদিন ধরে, এখন তার ভিত্তি পাওয়ার দাবি করতে পারেন তারা। হাবশেষ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সব নথি পরীক্ষার পর সুইজারল্যান্ডের গবেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনি নেতার দেহে উচ্চ মাত্রার তেজষ্ক্রিয় পদার্থ পোলোনিয়ামের অস্তিত্ব ছিলো। প্রতিবেদনটি হাতে পেয়ে ইয়াসির আরাফাতের স্ত্রী সুহা প্যারিসে বলেছেন, এখন আর সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রমাণ হলো, এটা ছিলো হত্যাকাণ্ড। ইয়াসির আরাফাতের দেহে পাওয়া পোলোনিয়াম-২১০ সাধারণ খাবারের মধ্যে স্বল্পমাত্রায় থাকে, মানবদেহেও প্রাকৃতিকভাবে এর অস্তিত্ব থাকতে পারে। তবে অতিমাত্রায় দেহে প্রবেশ করালে তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ২০০৮ সালে ফ্রান্স মিলিটারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। স্ট্রোকের সাথে রক্ত সঞ্চালনে জটিলতাকে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছিলো।  তবে শুরু থেকেই অনেক ফিলিস্তিনিদের সন্দেহ ছিলো, তাদের নেতাকে  বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় এবং এর পেছনে ইসরায়েলের হাত রয়েছে। তবে এর আগে হত্যার কয়েকটি ষড়যন্ত্রের তথ্য ছাড়া এ সন্দেহের পক্ষে কোনো জোরালো প্রমাণ ছিলো না। আর ইসরায়েলও এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল। তবে আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে বলে আল জাজিরার এক প্রামাণ্যচিত্রে দাবি করা হলে নতুন করে তা নিয়ে আলোচনা ওঠে। এর রেশ ধরে গত বছর ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ইয়াসিরের দেহাবশেষ কবর থেকে তুলে আবার পরীক্ষা চালানোর কাজ শুরু হয়। এ পরীক্ষায় অংশ নেয়া সুইস বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনে বলা হয়, তার শবদেহে অপ্রত্যাশিতভাবে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা প্রকারান্তরে বিষপ্রয়োগের ইঙ্গিত দেয়। তবে মৃত্যুর প্রায় আট বছর পর অনুসন্ধান কাজ শুরু করার কারণে অনেক আলামত চিহ্নিত করা দুরূহ ছিলো- তা স্বীকার করে সঠিক চিত্র তুলে ধরতে অনেক সমস্যার সম্মুখিন হয়েছেন বলেও জানান গবেষকরা।  ইয়াসিরের দেহাবশেষ তোলার পর রাশিয়া ও ফ্রান্স এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়। তবে রুশ গবেষক দল গত মাসে জানান, তারা পোলোনিয়ামের কোনো অস্তিত্ব পাননি। সুহা আরাফাত সুইস গবেষকদের প্রতিবেদন পেয়ে আরো বলেন, এটি একটি সাচ্চা অপরাধ, একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এ প্রতিবেদন আমাদের সব সন্দেহ দূর করেছে।
বৈজ্ঞানিকভাবে এটা প্রমাণ হয়েছে যে, তার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিলো না। তাকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিলো- সেই বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নাম সরাসরি উল্লেখ করেননি সুহা। তবে বলেছেন, তার স্বামীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে অনেক শত্রু  ছিলো। আরাফাত ৩৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় দলগুলোর মূল সংগঠন ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও’র নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি, এসেছিলেন বাংলাদেশেও। ১৯৯৬ সালে ঢাকায় বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি দিয়েছিলেন তিনি, সেটাই ছিলো তার সর্বশেষ বাংলাদেশে আসা। ২০০৪ সালে পশ্চিমতীরে নিজের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৭৫ বছর বয়সী আরাফাত। এর দু সপ্তার মাথায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফ্রান্স নেয়া হয়। ওই বছর ১১ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়।