ইবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এফ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মাববন্ধন ও প্রশাসন ভবন অবরোধ করে আন্দোলন করেছে ওই ইউনিটের শিক্ষার্থীরা। গতকার মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে প্রশাসনের সামনে তারা অবস্থান নেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সরিয়ে দেয়। এফ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ওই ইউনিটের ভর্তি বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ১৬ মার্চ এফ ইউনিটের নতুন করে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত এফ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস বিয়য়টি প্রমাণিত হওয়ায় গত সোমবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটে ওই ইউনিটের ভর্তি বাতিল ও নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করে এফ ইউনিটের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে তারা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থায় নেয়। বেলা একটার দিকে প্রশাসন ভবন অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনে প্রবেশ ও বের হতে বাধা সৃষ্টি করে। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান প্রমুখ প্রশাসন ভবনে অবস্থান করছিলেন। দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি প্রশাসন ভবন থেকে তাদের সরিয়ে দেয়। এসময় কুষ্টিয়া র্যাব-১২ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত র্যাব, পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
আগামী ১৬ মার্চ এফ ইউনিটের নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন করে ভর্তি পরীক্ষার সংবাদ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এফ ইউনিটভুক্ত গণিত বিভাগের ছাত্র গোলাম কিবরিয়া (ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকা ৪০ তম) বলেন, ‘যারা দুর্নীতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছে তারা শাস্তি পেতে পারে। কিন্তু আমরা কী অন্যায় করলাম, যেকারণে আমাদেরকেও নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে। এ সিদ্ধান্ত শুধু অযৌক্তিকই নই, চরম অমানবিক। অন্যায় করলো শিক্ষকরা, আর কপাল পুড়ছে আমাদের বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। গণিত বিভাগের ছাত্রী দিলরুবা খাতুন। তিনি বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ডি ও এফ ইউনিটে মেধা তালিকায় ৩১ তম। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, যারা অনিয়ম করে ভর্তি হয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের ভর্তি বাতিল করা হোক। আমরা তো অন্যায় করিনি। তাহলে আমাদেরকেও কেন একই সাজা দেয়া হচ্ছে। ভর্তির প্রস্তুতি অনেক আগেই শেষ হয়েছে। গত তিন চার মাস পড়াশোনা নেই। এখন পরীক্ষা দিলে চান্স পাবো তার কী গ্যারান্টি আছে? আর চান্স না পেলে আমরা কোথায় যাবো?
প্রতিবেদক আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেন। এসময় তারা তাদের নাম ও ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় তাদের অবস্থান জানাতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে ধারণা করা হচ্ছে, যেসব শিক্ষার্থীরা দুর্নীতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন তাদের একটি অংশও এই আন্দোলনে উপস্থিত ছিলো।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, আসলে কারা দোষী আর কারা দোষী না তা নির্ণয় করা খুব কঠিন। যেহেতু ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাই এ পরীক্ষা বেঁচে থাকতে পারে না। এ পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় বাঞ্চনীয়। সবখানে এটাই হয়ে থাকে। আর যারা প্রকৃতই মেধাবী তাদের দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে দোষ কোথায়? মেধাবীরা অবশ্যই চান্স পাবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
প্রসঙ্গত, এফ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ইউনিট সমন্বয়কারীসহ তিন শিক্ষক, একজন ছাত্র, দুজন কর্মচারী ও একজন বহিরাগতসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযুক্ত ছাত্রের (গণিত বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মনোজিত কুমার) ছাত্রত্ব ও সনদ বাতিল, সংশ্লিষ্ট ইউনিট সমন্বয়কারীকে (গণিত বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক নুরুল ইসলাম) ও দুজন কর্মচারীকে (হিসাব শাখার সিনিয়র অডিটর সাইফুল ইসলাম ও গ্রন্থাগারের ফটোকপি অপারেটর আলাউদ্দিন আলাল) সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ভর্তি কমিটির অপর দুজন সদস্যকে (পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসেন, গণিত সহযোগী অধ্যাপক মিজানুর রহমান) সতর্কীকরণ করা হয়েছে। বহিরাগত স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক লাল্টুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।