আ.লীগ বিএনপি ও জামায়াতের অস্তিত্বের লড়াই

জীবননগর উপজেলার রায়পুর বাঁকা ও হাসাদাহ ইউপি নির্বাচন

আন্দুলবাড়িয়া/হাসাদহ প্রতিনিধি: আগামী ২৯ মার্চ চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর, বাঁকা ও হাসাদাহ ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দিন যতো এগিয়ে আসছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ততো জমে উঠছে। নির্বাচনী প্রচারাভিয়ানে নিজ নিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদপ্রার্থীর বিজয় ছিনিয়ে আনতে দলীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নিকট ও দূর-দূরান্তের আত্মীয়স্বজনরা মাইক্রো, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনযোগে গণসংযোগ, ক্যাম্পিং ও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট ও দোয়া প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুধু ইউনিয়ন নয়, ইউনিয়নের বাইরে থেকে প্রতিদিন তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে শোডাউন দিয়ে ভোটারদের কাছে প্রার্থীর অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তবে সাধারণ সদস্য প্রার্থীর তুলনায় সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য পদপ্রার্থীরা ৩টি ওর্য়াডের নির্বাচনী প্রচারে ও ভোট প্রার্থনায় কাহিল হয়ে পড়েছেন। ৩টি ইউনিয়নের সাধারণ ভোটার ও অন্যান্য চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীরা নৌকা প্রতীককে প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করেছেন। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সর্মথক, নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে ও নির্বাচনী এলাকা ঘুরে এ রকমই তথ্য পাওয়া গেছে। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও কর্মী সমর্থকরা নির্বাচনী টার্গেট ও লক্ষ্য নিয়ে নৌকা ঠেকাতে নৌকা প্রার্থীর বর্তমান ও অতীত কর্মকা-, ইতিহাস ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন। এর সাথে ক্ষমতাসীন দলের সংক্ষুব্ধ কিছু নেতাকর্মীরাও যোগ দিয়েছেন। ভোটররা প্রার্থীর যোগ্যতা, প্রভাব ও ব্যক্তি আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার আগামীতে ইউনিয়নের উন্নয়ন কার দ্বারা সম্ভব হবে তা হিসাব নিকাশসহ বিশ্লেষণ করছেন। আর এর ওপর প্রার্থীর জয় পরাজয় অনেকটা নির্ভর করছে। প্রধান ৩টি রাজনৈতিক দলের ও ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা বিজয় সুনিশ্চিত করতে নানা কৌশল ও টার্গেট নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে নিঘুম রাত কাটাচ্ছেন। সেই সাথে স্ব স্ব প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ভোট প্রার্থনা করছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করছে, এ নির্বাচনে পরাজয় শুধু প্রার্থীর নয়, অস্তিত্বের লড়াই দলের, জেলা ও উপজেলা পর্যয়ের নেতৃবৃন্দের। হাইকমান্ডে জবাবদিহিসহ পরাজয়ের গ্লানি ও দায়ভার বহন করতে হবে তাদের। নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ধরে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বঞ্চিত প্রার্থীরা জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দকে ঘায়েল করতে এ মোক্ষম খড়গা তুলে ধরবে। ইতোমধ্যে পোস্টারে পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে, গ্রাম, পাড়া, মহল্লা, হাট-বাজার, চায়ের দোকানসহ নির্বাচনী গুরুত্বপূর্ণ স্থান। নির্বাচনী এলাকায় দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণ ভোটারদের গোপনে মানসিক চাপ সৃষ্টি, ভয়ভীতি ও নানা হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রায়পুর ইউনিয়নে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভোটারা নির্বাচনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে প্রার্থীরা মনে করছেন। ওয়াকিবহাল মনে করছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভোটাররা যে দিকে ঝুঁকবে সেই প্রার্থীর বিজয় অনেকটা সুনিশ্চিত হবে। জয় পরাজয়ের পর এ ভোটকে কেন্দ্র করে নির্বাচনত্তোর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত কেউ কেউ নির্যাতিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জনমত জরিপে দুটি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও একটিতে বিরোধী প্রার্থী এগিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। ৩টি ইউপি নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নিজেদের অস্তিত্বের লড়াই বলে মনে করছে। দলের প্রভাব ধরে রাখতে ও আগামীতে নেতৃত্বের অস্তিতকে টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ প্রতিদিন নিজ নিজ দলীয় প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকগণকে সাথে নিয়ে মাঠে ময়দানে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দিন যতো ঘনিয়ে আসছে নেতা, প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে উদ্ব্যেগ ও উৎকণ্ঠা ততোটায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন কৌশল ও টার্গেট নিয়ে নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ অব্যাহত রাখছেন স্ব স্ব দলেয় নেতা-কর্মীরা। প্রার্থীগণ জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দকে কাছে পেয়ে নির্বাচনী মাঠে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। বারবার খাতা কলম নিয়ে কষছেন ভোটের হিসাবনিকাশ। চলছে ভোট ভাঙাগড়ার খেলা। ভোট ভাঙাগড়ায় প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকদের চুলচেরা হিসাব নিকাশে পাল্টে যাচ্ছে ভোটের দৃশ্যপট। প্রতিদিনের হিসাব নিকাশ ওলটপালোট ঘটায় প্রার্থীগণ মনে করছেন, প্রতিপক্ষর চেয়ে আর কিছু ভোট সংগ্রহ করতে পারলে তার বিজয় সুনিশ্চিত হবে। এরকমই চিন্তা-ভাবনা ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রার্থীগণ বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে বিজয় সুনিশ্চিত করতে চলবে টাকার খেলা। সকল প্রার্থীরা ভোটারদের নিকট দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হবে তার হাওয়া অনেকটা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই দলের পক্ষে প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর যেমন তার প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন তেমনি বিএনপির জেলা আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, যুগ্মআহবায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু, টিপু তরফদারসহ জামায়াতে ইসলামীর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বাঘা বাঘা নেতৃবৃন্দ দলীয় প্রার্থীর বিজয় ছিনিয়ে আনতে, দলের সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে ও নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে নির্বাচনটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, স্ব স্ব রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রার্থীদের অবস্থান জানতে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। সেই সাথে দলের স্বতন্ত্র প্রাথীর নামে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর অবস্থান কি তা জানতে চাচ্ছেন। প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক দেয়ায় উপজেলা, জেলাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এ পরাজয় প্রার্থীর নয়, দলের বিপর্যয় বলে মনে করছেন। আর এ চিন্তা চেতনা নিয়েই কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রে নিজ নিজ অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও অনেকটা কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে না পারলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বির্তক সৃষ্টি করতে পারে এ আশঙ্কায় সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সাধারণ ভোটরা ও বিরোধীরা ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করে খড়গাস্থ তুলে ধরবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর ভোট ঠেকাতে জামায়াতে ইসলামী দলের প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত মাঠে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। চলছে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর নামে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর পরাজয় করার কৌশল। প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকদের ভোট প্রার্থনায় মুখোমুখি অবস্থান দেখে কেউ কেউ সংঘাত সংর্ঘষের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। সাধারণ ভোটাররা চান কোনো সংঘাত নয়, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে গত ১৬ মার্চ জীবননগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আয়োজিতসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ রায়পুর, বাঁকা ও হাসাদাহ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা পরিষদের ১৪ নং ওর্যাড সদস্য শফিকুল আলম নান্নু মাথাভাঙ্গা এ প্রতিবেদককে নির্বাচনী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আমার এলাকার ৩টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা নয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা যেন জনগণের প্রকৃত সেবার মনবৃত্তি নিয়ে পরিষদে আসেন। এ ব্যাপারে জীবননগর উপজেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তিনি সম্প্রতি উথলী, মনোহরপুর ও কেডিকে ইউনিয়নের ন্যায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পূর্ণ করা হবে জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখনও কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়নি। তবে কাজ চলছে। শেষ পর্যন্ত কে হাসবে বিজয়ের হাসি, কার গলায় পড়বে বিজয়ের মালা তার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্ব স্ব ইউনিয়নের সাধারণ ভোটারা।