আলমডাঙ্গা ওয়াপদার একই জমি একাধিক ব্যক্তির নিকট লিজ প্রদানের ঘটনায় মামলা

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা এলাকায় জমি লিজের নামে ওয়াপদা কর্তৃপক্ষ তুঘলকি কাণ্ড শুরু করেছে। অভিযোগ উঠেছে নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই অর্থবাণিজ্যের মাধ্যমে লিজ দেয়া হচ্ছে। এমনকি একই জমি একাধিক ব্যক্তির নিকট লিজ প্রদানের ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি লিজের নামে তুঘলকি কাণ্ড শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, লিজ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো আইন কিংবা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আলমডাঙ্গা কুমার নদের অর্থাৎ জিকে মেন ক্যানেলের দু তীরের উভয়পাড় লিজ দেয়া হয়েছে। ক্যানেলপাড়ের ভেতরের সাইড লিজ দেয়ার কোনো নিয়ম না থাকলেও উভয়পাড়ের ভেতরের সাইড দখল করে প্রায় শতাধিক ব্যক্তি ব্যবসা করছেন। এদের সকলকেই পানি উন্নয়ন বোর্ড অবৈধভাবে লিজের কাগজপত্র তৈরি করে হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ সকল অবৈধ লিজভোগীদের আবার অধিকাংশই নদী বা ক্যানেলের বিরাট অংশ দখল করেই পাকা ইমারত গড়ে তুলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ মদদে। এমনকি খোদ আলমডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস চত্বরের কয়েকশ কোটি টাকার জমি মোটা অঙ্কের টাকার উৎকোচ নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে লিজ দিয়েছে। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধুনালুপ্ত আলমডাঙ্গা ডিভিশনের সকল অফিস, কর্মকর্তাদের বাড়ি পর্যন্ত লিজ দেয়া হয়েছে। এখানেই থেমে নেই এ লিজ বাণিজ্য। এক খণ্ড জমি এক ব্যক্তিকে লিজ দেয়ার কয়েক বছর পূর্বে নতুন করে উৎকোচ নিয়ে সে জমি আবার অন্যত্র লিজ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোর্টপাড়ার আশরাফুল ইসলাম ওয়াপদা চত্বরে ১৬ শতক জমি লিজ নিয়েছিলেন প্রায় ২০ বছর আগে বলে দাবি করেছেন তিনি। ২০১৩ সাল পর্যন্ত লিজ মানি পরিশোধ করেই তিনি এ যাবত ওই জমি ভোগ দখল করে আসছিলেন। গত এক বছর লিজের টাকা বাকি রয়েছে তার। এরই মধ্যে আশরাফুলের দীর্ঘ বছর ভোগদখলে থাকা সত্ত্বেও সে জমি সাধন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে পুনরায় লিজ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আদালত নালিশি জমিতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শোকোজসহ প্রসিডিঙের আদেশ দিয়েছেন। পরে একই বিষয়ে আশরাফুল ইসলামের ছেলে মনিরুজ্জামান সাজু পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে গতপরশু বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল), আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) ও এসআই অচিন্ত্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় শুধু আশরাফুল ইসলামই ভোগান্তির মধ্যে পড়েনি। সাধন মণ্ডলও পড়েছে। সাধন মণ্ডল দরিদ্র চা দোকানি। তিনিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি লিজ নিয়ে বসবাস করতেন। তার লিজকৃত দখলি জমি পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রেজাউল নামে এক ব্যক্তির নিকট পুনঃলিজ দিয়েছে। ফলে বিপদগ্রস্ত সাধন মণ্ডল পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিকট বারবার আহাজারি ও লোকজন ধরাধরি করলে কর্তৃপক্ষ তাকে নতুন করে আশরাফুলের লিজের দাবিকৃত জমি তাকে লিজ দিয়েছে। অনেকেই অভিযোগ করেছে এমন ঘটনা ২-১ নয়, অসংখ্য রয়েছে।