আলমডাঙ্গায় স্কুলছাত্রের অপহরণ নাটক : পুলিশ করলো উদ্ধার

 

পুলিশের ধারণা এটা অপহরণের নাটক

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ কৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে উদ্ধার করেছে রোয়াকুলি গ্রামের ৯ম শ্রেণির অপহৃত ছাত্র রনিকে। পুলিশের ধারণা রনি নিজেই গাঢাকা দিয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়েছে। ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল ঘটনা বের হয়ে আসবে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গার রোয়াকুলি গ্রামের নতুন মসজিদের মোয়াজ্জিন হতদরিদ্র আব্বাস আলীর ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে রনি ৩ দিন আগে মুন্সিগঞ্জ বাজারের ফটিকের দোকানে বাইসাইকেল মেরামত করাতে গিয়ে বাইসাইকেল সেখানে রেখে আসে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সে বাড়ি থেকে বের হয়। বলে যায়-  প্রাইভেট পড়ে মুন্সিগঞ্জ বাজারে গিয়ে ফটিকের দোকান থেকে বাইসাইকেল নিয়ে আসবে। অথচ বিকেল পর্যন্ত সে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। বিকেলে রনির ফুফাতো ভাই কুমারী গ্রামের আমেকুলের ছেলে সোয়ানের নিকট অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি বাংলালিংক নম্বর থেকে ফোন করে জানায়, ‘রনি এখন তাদের জিম্মায়। ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। তা না হলে রনিকে জীবিত পাওয়া যাবে না। টাকা জোগাড় করে বিকাশের দোকানে গিয়ে ফোন দিবি। এক ঘণ্টা সময় দিলাম।’ এ কথোপকথন চলাকালীন সোয়ান জিজ্ঞেস করেন- আপনাদের দলের নাম কী? উত্তরে অজ্ঞাত চাঁদাবাজ জানায়, আমাদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা। গতকাল রাত পর্যন্ত রনির পিতা ৫ লাখ টাকা জোগাড় করতে পারেননি। এক পর্যায়ে থানা পুলিশের দ্বারস্ত হন।

এদিকে অপহরণ ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ গতকাল রোয়াকুলি গ্রাম থেকে মাদারহুদা ও মুন্সিগঞ্জের গ্রামের দু যুবককে আটক করেছে। এরা হলো- মাদারহুদা গ্রামের খলিলের ছেলে মিলন ও মুন্সিগঞ্জ ক্লিনিকপাড়ার মুনসুর আলীর ছেলে আশা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোয়াকুলি গ্রামের অনেকে রনি অপহরণ নিয়ে আলোচনাকালে আটক দু যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। তাদের হাতে ছিলো সফট ড্রিংকস ক্যান। সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ তাদের মোবাইলফোন চেয়ে নেয়। কললিস্ট পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন সমস্ত কললিস্ট ডিলিট করা। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে আটক যুবকরা জানায়, ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে তারা কললিস্ট ডিলিট করেছে। এমন জবাবে পুলিশের সন্দেহ আরও দানা বাঁধে। যুবকদ্বয়কে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পরে গভীর রাতে কৃষ্ণপুর গ্রামে রনির এক খালু তাদের বাড়িতে মোবাইলফোনে জানান, রনি তাদের বাড়ি আছে। অপহরণকারীদের নিকট থেকে পালিয়ে সে তাদের বাড়িতে উঠেছে। এ তথ্য আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ জানতে পেরে রাত পৌনে ১টার দিকে কৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে রনিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এসআই মহাব্বত আলী তাকে উদ্ধার করে আনতে গিয়ে দেখেন, রনি মোবাইলফোনে কথা বলছে। তিনি পেছন দিক থেকে ফোনের নিকট কান পাতেন। শুনতে পান অপর প্রান্ত থেকে জনৈক ব্যক্তি রনিকে পরামর্শ দিচ্ছে ‘থানার ওসি খুব কড়া। খবরদার মুখ খুলবি নে। যা যা শিখালাম তাই বলবি।’ পরবর্তীতে পুলিশ রনিকে পরামর্শ দেয়া ব্যক্তিটির পরিচয় উদ্ধার করেছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে চাকরিচ্যুত তৎকালীন বিডিআর সদস্য রোয়াকুলি গ্রামের মাহবুব। রনিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, সে নিজেই চুয়াডাঙ্গা শহরে তার সোহাগ নামের এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যায়। সেখানে গিয়ে ইতঃপূর্বে সে যে ব্যক্তির নিকট থেকে একটি সেকেন্ডহ্যান্ড মোবাইলফোন কিনেছিলো, তার সাথে দেখা। তার সাথে সে চুয়াডাঙ্গার নূরনগর এলাকা পর্যন্ত যায়। সেখানে কৌশলে তাকে আটকে রাখে কয়েকজন। তারা রনির মোবাইলফোন সেটে চাঁদা দাবি করে। তবে রনির দেয়া স্বীকারোক্তি পুলিশ মোটেও বিশ্বাস করতে পারছে না। পুলিশের ধারণা রনি নিজেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কয়েকজনকে সাথে নিয়ে এ নাটক সাজিয়েছে। ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল তথ্য বের হয়ে আসবে।