আলমডাঙ্গার কাজী কামালের ৩য় মৃত্যুবাষির্কী অনুষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলায় পরিণত

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বৃহত্তর কুষ্টিয়ার কিংবদন্তিতুল্য মুক্তিযোদ্ধা, আলমডাঙ্গা থানা মুজিববাহিনীর কমান্ডার কাজী কামালের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো গতকাল ৭ এপ্রিল। এবারে উপজেলার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হলো খ্যাতিমান এ মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ৭২ বছর বয়সে ২০১৫ সালে ৮ এপ্রিল ঢাকা ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ওই দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন দেশের খ্যাতিমান অর্থোপেডিক সার্জন ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদী, ব্যারিস্টার মনির তানভীর মাহবুব, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডাক্তার শাহাব উদ্দীন সাবু, মরহুমের ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী রবিউল হক, মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, মুক্তিযোদ্ধা সোয়েব উদ্দিন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুণ, মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলী, হাজি মজিবার রহমান, হাজি মোজাম্মেল হক, সহকারি প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন, গিয়াস উদ্দিন মাস্টার, মীর উজ্জল হোসেন, হাজি আব্দুর রশীদ মিয়া, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন খান, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি শাহ আলম মন্টু ও সম্পাদক হামিদুল ইসলাম আজম প্রমুখ। দোয়া পরিচালনা করেন হাফেজ মওলানা আব্দুল মোতালেব।
উল্লেখ্য, বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার কথা মনে হলে সর্বাগ্রে যার নাম স্মরণ করেন সাধারণ মানুষ, তিনি কাজী কামাল। আলমডাঙ্গা উপজেলার পার্শ্ববর্তী মিরপুর উপজেলার সুতাইল গ্রামের মৃত কাজী সিরাজুল ইসলামের ছেলে কাজী কামাল। ৭১’ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সুমহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তিনি আলমডাঙ্গা থানা মুজিব বাহিনীর কমান্ডারের গুরু দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ‘৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন একজন খাঁটি দেশ প্রেমিক হিসেবে। ‘৬৬ সালের গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ‘৭০ সালে নিজ উদ্যোগে এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গড়ে তোলেন বিশাল বাহিনী। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হান্নান, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আশু, মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান, অগ্নিসেনা মইন উদ্দীনসহ প্রথিতযশা বহু ছাত্রনেতা তার নেতৃত্বে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার শিষ্য বলে নিজের পরিচয় দিতে ভালোবাসেন এমন একাধিক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ৭১’ সালে আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে পুলিশের রাইফেল কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। নিজ বাড়িতে রাইফেল ট্রেনিঙ দিতেন। এসব যুদ্ধের প্রারম্ভের কথা। তারপর যখন যুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠলে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শাফায়েত-উল ইসলাম, ডা. শাহাবুদ্দিনসহ অনেককেই সাথে নিয়ে আলমডাঙ্গা কলেজে কন্ট্রোলরুম তৈরি করেছিলেন। তার অমিত বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বে আলমডাঙ্গা থানার সমস্ত রাইফেল লুট করে স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়। এ সময় কামালবাহিনীর শক্তি ও সাহস এতো বেশি হয়ে পড়ে যে, তারা মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও ইপিআর বাহিনীসহ কুষ্টিয়াকে পাক হানাদার মুক্ত করতে মরণপণ যুদ্ধ শুরু করেন। আরও ভালো প্রশিক্ষণের জন্য তিনি ভারতে চলে গেলেন সদলবলে। সেখানে ট্রেনিঙ শেষে দেরাদুনে যান তিনি উচ্চ প্রশিক্ষণে। পাহাড়ি অঞ্চলে জীবনবাজি রেখে উচ্চ প্রশিক্ষণ শেষ করেন। পরে দেশে ফিরে যে সকল মুক্তিযোদ্ধা যারা ভারতে যেতে সক্ষম হয়নি, তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করতেন। বিস্ময়কর কাকিলাদহের ভয়াবহ যুদ্ধে তিনি কমান্ডিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। ব্যক্তি জীবনে তিনি অত্যন্ত সহজ সরল জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তার ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ছিলো। বঙ্গবন্ধু কাজী কামালকে তৎকালীন থানা গভর্ণর করেছিলেন। স্বাধীনতার পর কুমারী ইউনিয়নের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। তবে সব মিলিয়ে মানুষ তাকে মনে রাখবেন একজন নির্লোভ ও অমিত তেজস্বী আত্মত্যাগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে।