আন্তর্জাতিক জরিপ রিপোর্ট : বাংলাদেশে গাড়ি ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম হলেও দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বাংলাদেশে। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম গাড়ি ব্যবহার করেও সর্বাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ হতাহত হয় তা দেশের সবগুলো অপরাধী কর্মকাণ্ড মিলিয়েও হয় না। তারপরও বছরের পর বছর ধরে সড়ক দুর্ঘটনা কমার পরিবর্তে বেড়েই চলেছে। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাড়ি ব্যবহার করেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। আর সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে যুক্তরাজ্যে। প্রতিবছর বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় দেড় লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু হচ্ছে এবং আহত হচ্ছে আরও পাঁচ কোটি মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনায় আগে সর্বাধিক তালিকায় নাম ছিলো নেপালের। নেপাল সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এখন দ্বিতীয় স্থানে চলে আসায় বাংলাদেশই প্রথম স্থানে চলে গেছে। সড়ক দুর্ঘটনার ওপর ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিশন, ইউএনইসিই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ ধরনের তথ্যের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সড়কে মৃত্যুর নব্বই শতাংশই ঘটছে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, যদিও এসব দেশগুলোতে বিশ্বের মোট যানবাহনের মাত্র ৫৪ শতাংশ রয়েছে। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট সংস্থার দফতরগুলোতে বিশ্বের কোন দেশে কতো সড়ক দুর্ঘটনায় কতো লোক হতাহত হয় তার হিসেব সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের আদালতের শাস্তি দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অতি সম্প্রতি ধর্মঘটের ডাক দিয়ে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি ও ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে সেই আলোকেই বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা, প্রতিকারসহ নানা বিষয় সামনে আনা হয়েছে।

প্রতিবেদনের জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের উন্নত দেশ যথা ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, জাপানেও সড়ক দুর্ঘটনা হয়। কিন্তু তার সংখ্যা কম। ভারতেও এর সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। এর মূল কারণ, যেসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হয় সেগুলো নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা সম্পর্কে অন্যান্য দেশের সরকার উদাসীন নয়। তারা এ কাজকে নিজেদের দায়িত্বের বাইরের বিষয় মনে করে না।

প্রকাশিত এক জরিপে জানা গেছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গাড়ি ব্যবহার করেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। প্রতি ১ হাজার মার্কিন নাগরিকের মধ্যে গাড়ির সংখ্যা ৭৬৫টি। অথচ ওই দেশে বছরে প্রতি ১০ হাজার গাড়িতে মৃত্যুর হার মাত্র ২ জন। গাড়ির সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। সেখানে প্রতি ১ হাজার নাগরিকের মধ্যে গাড়ির সংখ্যা ৫৬০টি আর প্রতি ১০ হাজার গাড়িতে বছরে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ৩.৩ জন। বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম যুক্তরাজ্যে। সেখানে প্রতি ১০ হাজার গাড়িতে বছরে মারা যান মাত্র ১.৪ জন আর প্রতি হাজার নাগরিকের গাড়ির সংখ্যা ৪২৬টি। জাপানে প্রতি ১ হাজার নাগরিকের মধ্যে গাড়ির সংখ্যা ৫৪৩টি আর মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি ১০ হাজার গাড়িতে বছরে মাত্র ১.৭ জন। ভারতে প্রতি হাজার মানুষের বিপরীতে গাড়ির সংখ্যা ১২ আর সেখানে মৃত্যুর হার প্রতি ১০ হাজার গাড়িতে ২৫ জন। পাকিস্তানে প্রতি ১ হাজার মানুষের মধ্যে গাড়ির সংখ্যা ১৩ আর প্রতি ১০ হাজার গাড়িতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ১৯ জন। ক’বছর আগেও সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যেত নেপালে। এই সংখ্যা ছিলো প্রতি ১০ হাজার গাড়িতে বছরে প্রায় ৬৪ জন। কিন্তু সে দেশের সরকার সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নিয়ে এখন সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমিয়ে এনেছে। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম গাড়ি ব্যবহারকারীর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের প্রতি হাজার মানুষের বিপরীতে যান্ত্রিক যানের সংখ্যা মাত্র দু’টি। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

বাংলাদেশে বছরের পর বছর নিরীহ যাত্রীরা যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহত হচ্ছে, তার থেকে অধিক সংখ্যায় অন্য কোনভাবে জীবনের ক্ষতি হয় না, যদিও বিভিন্ন প্রকার ক্রিমিনাল সন্ত্রাসীর হাতে হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এ ক্ষেত্রে লক্ষ করার বিষয়, সন্ত্রাসীদের হাতে মৃত্যু-বোমা হামলায় মৃত্যু নিয়ে যথার্থ কারণেই হইচই মিটিং-মিছিল হলেও সড়ক দুর্ঘটনায় যে হাজার হাজার মানুষ বছরে হতাহত হচ্ছেন এ নিয়ে কোনো মহলেই কোনো উদ্বেগ দেখা যায় না। এর বিরুদ্ধে কোনো মহল থেকেই কোনো কার্যকর জোরাল প্রতিবাদ হয় না। হাজার হাজার নিরীহ লোকের এই মৃত্যু, পঙ্গুত্ব ও জীবনের সর্বনাশ একটি নীরব ব্যাপার হিসেবেই বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে ঘটে চলে। সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয় না এমন দুর্ঘটনার সংখ্যাও হাজার হাজার। সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু ব্যক্তির জীবনহানিই ঘটে না, বরং পারিবারিক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয় এবং সমাজ ও প্রতিষ্ঠান তার অবদান থেকে বঞ্চিত হয়। প্রতিবছরই সড়ক দুর্ঘটনা কমার পরিবর্তে বেড়েই চলেছে বলে পুলিশ সদর দফতর ও বিআরটিএ-এর পরিসংখ্যানে জানা গেছে।

পুলিশ প্রশাসন, বিআরটিএ, মানবাধিকার সংগঠন, অন্যান্য দেশি-বিদেশি সংগঠন কাজ করছে তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয় নিয়ে যেসব চালকের দায়িত্বহীনতা, অনভিজ্ঞতাই হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করতে হবে, যাতে অন্যরা সাবধান ও সতর্ক হতে পারে। আর সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে প্রথমেই যা করণীয় তা হচ্ছে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করতে হবে। এছাড়া যোগ্য এবং অভিজ্ঞ চালকদেরই কেবল লাইসেন্স দিতে হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে যেসব সুপারিশ আসে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, দেশের সকল মহানগরীতে ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও জোরদার করা, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওভারব্রিজ স্থাপন, হাইওয়েতে বাজার বসতে না দেয়া, রিকশা বা অযান্ত্রিক বাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি। সড়ক দুর্ঘটনায় চালকরাই বেশিরভাগ দায়ী। কারণ, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলফোনে বা অন্য কারও সাথে কথা বলা, ট্রাফিক আইন যথাযথ অনুসরণ না করা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গাড়ি চালানো, অতিদ্রুত বা বেপরোয়া গাড়ি চালানো, নির্দিষ্ট গতিসীমা অনুসরণ না করা, মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বা পণ্য পরিবহন, রোড সাইন, মার্কিং ও ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে ধারণা না থাকা বা ধারণা থাকলেও সেগুলো মেনে না চলা, সড়ক ব্যবহারের নিয়মকানুন সম্পর্কে অজ্ঞতার পাশাপাশি সড়ক ব্যবহারবিধি ও আইনের প্রতি উদাসীনতা ও শ্রদ্ধাবোধের অভাব, বিপজ্জনকভাবে ঝুঁকি নিয়ে ওভারটেক করা, প্রতিযোগিতা করা, সামনের গাড়ির সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রাখা, গাড়ি চালানোর সময় মনোযোগ না দেয়া, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চালানো, চালকের পরিবর্তে হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে অসচেতনভাবে গাড়ি চালানো, যথাসময়ে যথোপযুক্ত সঙ্কেত দিতে ব্যর্থতা, যথাযথ লেনে গাড়ি না চালানো, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না নিয়ে অবসাদগ্রস্ত অবস্থায় একটানা গাড়ি চালানো, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, মানসিক অস্থিরতা নিয়ে গাড়ি চালানো, দৈহিক অযোগ্যতা নিয়ে গাড়ি চালানো ইত্যাদি। এছাড়া টাকার বিনিময়ে অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ চালকদের হাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স তুলে দেয়া হচ্ছে। এমনকি অপ্রাপ্ত বয়সের কিশোরদের হাতেও ড্রাইভিং লাইসেন্স তুলে দেয়া হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ জেনেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনভিজ্ঞ ও দায়িত্বহীন ব্যক্তির হাতে মানুষ হত্যার লাইসেন্স তুলে দিচ্ছেন। শতকরা ৭০ ভাগ ড্রাইভিং লাইসেন্স অবৈধ। এটাকে বলা হয় ‘দুই নম্বর’ লাইসেন্স। অবশ্য এই লাইসেন্স ইস্যু করা হয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ‘বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি’র পক্ষ থেকে। অর্থাৎ সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মানুষ হত্যার লাইসেন্স দিচ্ছে।

যেসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না তার মধ্যে দায়ের করা মামলায় বাদী হয়ে থাকে পুলিশ। ট্রাফিক আইনানুযায়ী আসামি করা হয় গাড়ি ও তার চালককে। মামলায় পরোক্ষভাবে গাড়ির মালিককেও জড়ানো হয়। ফলে পুলিশ ও আসামিদের সমঝোতার ভিত্তিতেই থানায়ই অধিকাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যায়। আদালত পর্যন্ত কিছু মামলা গড়ালেও পুলিশ একে ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দেয়। ফলে আসামিরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়ে যায়।

সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি ও মামলায় আসামিদের শাস্তি না হওয়ার কারণ চিহ্নিত করেছে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এতে বলা হয়েছে, বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের চালকদের ইউনিফমের (স্বতন্ত্র পোশাক) ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চালকরা জনগণের পাকড়াওয়ের হাত থেকে অনায়াসেই রেহাই পেয়ে যায়। চালকদের মেডিক্যাল চেকআপের ব্যবস্থা ও বাধ্যবাধকতা না থাকায় শারীরিক ও মানসিকভাবে অযোগ্য অনেক গড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। চালকদের আইডি কার্ড (পরিচয়পত্র) না থাকায় দুর্ঘটনার পর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালকরা ড্রাইভিং লাইসেন্সে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে থাকে। ফলে ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে তাদের আর হদিস পাওয়া যায় না।

সড়ক দুর্ঘটনার নেপথ্যে মালিক পক্ষও বেশকিছু কারণে দায়ী। সেগুলো হলো নিয়মিত গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ না করা, যোগ্য ও অদক্ষ চালক নিয়োগ দেয়া এবং চালক ও কন্টাক্টর নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত বিধি অনুসরণ না করা, পরিবহন শ্রমিকদের ওপর মালিকের নিয়ন্ত্রণ না থাকা, অনুমোদিত ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অধিক পণ্য বা যাত্রী পরিবহনের জন্য চালক ও কন্টাক্টরকে নির্দেশ দেয়া, শ্রমিকদের দিয়ে অধিক পরিশ্রম করানো ও স্বল্প পারিশ্রমিক দেয়া, বেতনভিত্তিক চালক নিয়োগ না দিয়ে চুক্তিভিত্তিক চালক নিয়োগ দেয়া, শ্রমিকদের পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করা, যাত্রা শুরুর আগে চালককে গন্তব্য স্থান সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহিত না করা, সময় নিয়ন্ত্রণ গাড়ি পরিচালনা পদ্ধতি অনুসরণ ও সময়ক্ষেপণ হলে জরিমানা করা, লাইসেন্স প্রদানে মালিক পক্ষের হস্তক্ষেপ ও প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করা ইত্যাদি। সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংস্থা ও কমিটির সদস্যদের কার কী দায়িত্ব সে সম্পর্কে দিক-নির্দেশনার অভাবে কমিটিগুলো কার্যকর হচ্ছে না।

সম্প্রতি ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে বৈশ্বিক মন্ত্রিপর্যায়ের সম্মেলনে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিশন, ইউএনইসিই এবং সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সড়কে মৃত্যু ও জখম হওয়া কমানোর চেষ্টায় সড়কের নিরাপত্তায় আরও বেশি নজর দেয়ার জন্য বিশ্বের সব দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে দেড় লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু হচ্ছে এবং আহত হচ্ছেন আরও পাঁচ কোটি মানুষ। বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে অষ্টম প্রধান কারণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ডব্লিএইচওর এক সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সড়কে মৃত্যুর নব্বই শতাংশই ঘটছে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যদিও বিশ্বের মোট যানবাহনের মাত্র ৫৪ শতাংশ আছে এসব দেশে। ইউএনইসিই বলছে, অধিকাংশ গাড়ি প্রস্তুতকারকের তৈরি গাড়িগুলোর যেসব মডেল ইউরোপ এবং আমেরিকায় বিক্রি হয় মধ্যম আয়ের দেশে বিক্রি হওয়া সেই একই মডেলের গাড়ি অপেক্ষাকৃত কম নিরাপদ। যদি আপনি এমন একটি গাড়িতে থাকেন যার নিরাপত্তার মান কিছুটা কম তাহলে পঞ্চাশ থেকে ষাট কিলোমিটার বেড়ে চলা অবস্থায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঝুঁকি থাকবে সবচেয়ে বেশি। আর যেখানে গাড়িতে নিরাপত্তার মানগুলো অনুসৃত হয়েছে সেখানে দুর্ঘটনায় আপনার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সুতরাং, পার্থক্যটি খুবই সহজ, পার্থক্যটি হচ্ছে জীবন এবং মৃত্যুর। সম্প্রতি গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য।- সংকলিত।