আজ ৬ ডিসেম্বর : মেহেরপুর মুক্ত দিবস

মেহেরপুর অফিস: আজ ৬ ডিসেম্বর। মেহেরপুর মুক্ত দিবস। মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে দাঁড়াতে না পেরে ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর রাত থেকে ৬ ডিসেম্বর ভোর পর্যন্ত হানাদারবাহিনী মেহেরপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়। সকালে উল্লাস করতে করতে সর্বস্তরের মানুষ নেমে আসে রাস্তায়। মেহেরপুর মুক্ত ঘোষণা করেন মুক্তিকামী সেনারা।

Meherpur Mukto diboash pic_05.12.13_(1)

মুক্তিযোদ্ধাসহ ওই সময়ের প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে স্বাধীনতার শপথ ভূমি মুজিবনগর তথা মেহেরপুরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তৎকালীন এসডিও তৌফিক এলাহির সক্রিয় ভূমিকায় ছাত্র, আনসার-মুজাহিদদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা হয়। ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তি বাহিনী মেহেরপুর প্রবেশ করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। এরই মাঝে পাকবাহিনী নাটুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মেহেরপুর সরকারি কলেজে ঘাটি গড়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। দীর্ঘ সময় ধরে পাকসেনারা রাজাকার ও পিচ কমিটির সহায়তায় সাধারণ মানুষসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর নির্মম অত্যাচার নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট চালাতে থাকে। আমঝুপি, ওয়াপদা মোড়, পিরোজপুর, বুড়িপোতা, গোভীপুর, শলিকা, রাজাপুর, কাজিপুর, তেরাইল, জোড়পুকুরিয়া, বাগোয়ান-রতনপুর, ভাটপাড়া কুঠি, সাহেবনগর, কোলা, হিন্দা ও বাড়িবাঁকাসহ বিভিন্ন গ্রামে নৃশংস গণহত্যা চালায়। যেখানেই গণহত্যা সেখানেই বধ্যভূমি রয়েছে। জেলায় অন্তঃত ১৫টি বধ্যভূমি সন্ধান পাওয়া গেছে। তার মধ্যে মেহেরপুর কলেজের উত্তরে বিস্তৃত খোলা মাঠ, কালাচাঁদপুর ঘাট ও ভাটপাড়া কুঠি অন্যতম। পাকহানাদার বাহিনীর নির্যাতনের অন্যতম স্থান মেহেরপুর টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে আটক অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। বেঁচে ফিরেছেন সামান্য কিছু মানুষ। তাদেরই একজন মেহেরপুর শহরের বোসপাড়ার আবু সুফিয়ান। তিনি রোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে জানালেন, আমি বেঁচে ফিরতে পারবো এমন বিশ্বাস ছিলো না।

নভেম্বরের শেষের দিকে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। অবস্থা বেগতিক দেখে ৫ ডিসেম্বর রাত থেকেই পাকবাহিনী মেহেরপুর ছেড়ে পিছু হটতে শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর সকালে আর কোনো পাকবাহিনীর সদস্যকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই দিন সকাল থেকেই মানুষ উল্লাস করতে করতে রাজপথে নেমে আসে। মুক্ত হয় মেহেরপুর। সরকারি কলেজের পেছনের বধ্যভূমি থেকে অনেক নাম না জানা ব্যক্তির লাশ এনে কলেজ মোড়ে গণকবর দেয়া হয়। পরে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। এ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে প্রতি বছর মেহেরপুর মুক্ত দিবস পালন করে জেলাবাসী।

তবে স্বাধীনতার অকুতোভয় সৈনিক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ও দুর্নীতিমুক্ত, শোষন ও রাজাকারমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করলেও সে আশা আজও পূর্ণ হয়নি বলে জানালেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার মতিয়ার রহমান বাচ্চু। এদিকে দিনটি উদযাপনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মেহেরপুর জেলা কমান্ডসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।