আকন্দবাড়িয়ায় চলছে সার উৎপাদন কার্যক্রম : বাজারজাত করণের অপেক্ষা

বর্জ্যপদার্থ ব্যবহার করে দেশে প্রথম জৈব সার কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ

হানিফ মন্ডল/নজরুল ইসলাম: কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পেরিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কেরুজ চিনিকলের বর্জ্যপদার্থ পরিবেশ দূষণ করে আসছিলো বলেই এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিলো। সে সময় পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ নানামুখি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলো। ওই বর্জ্যপদার্থ দিয়েই এখন তৈরি হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব জৈবসার। এ মিলটি বাড়তি আয় গুনবে বছর বছর। এ উদ্যোগে সফল হয়েছে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ। মিল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ও এলাকার চাষিদের চাহিদা পূরণ এবং জমির উর্বরতা ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা ভেবেই প্রতিষ্ঠা করেছে জৈবসার উৎপাদন কারখানা। কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জৈব সার কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। চিনিকলের দর্শনার পার্শ্ববর্তী আকন্দবাড়িয়া বীজ উৎপাদন খামারের নিজস্ব জমির ওপর সার কারখানা নির্মাণকাজ শুরু করে। চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সার্বিক সহযোগিতায় দ্রুত নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। ভারতের টরিও চিম টেকনো লিগ্যাল সার্ভিস প্রা. লিমিটেডের কারিগরি সহায়তায় মেশিনারিজ স্থাপনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। চলতি বছরের মে মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করা হয় আকন্দবাড়িয়ার সার কারখানায়।

DARSANA PIC (3)

কেরুজ চিনিকলসূত্রে জানা গেছে, এ কারখানায় বছরে ৯ হাজার মেট্রিক টন সার উৎপাদন করা যাবে। এ সার তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে চিনি কারখানার উপজাত প্রেসমাড। কাঁচামাল হিসেবে প্রতিবছর ১৮ হাজার মেট্রিক টন প্রেসমাড ও ৪০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য স্প্রেন্টওয়াশ ব্যবহার করা যাবে। কেরুজ চিনিকল থেকেই প্রেসমার্ড পাওয়া যাবে ২ হাজার মেট্রিক টন, বাকি প্রেসমাড দেশের অন্যান্য চিনি কারখানা থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এ দুটি বর্জ্য সার কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে অ্যারোবিক কম্পোস্টিং পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব জৈবসার উৎপাদন করা হচ্ছে। ইতঃপূর্বে এ বর্জ্য পরিবেশ দূষণের কারণে ফেলা দেয়া হতো মাথাভাঙ্গা নদীতে। এ সার রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করে চাষিকুল হবে লাভবান। এতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমবে। সাশ্রয়ী হবে বৈদেশিক মুদ্রা। কেরুজ আকন্দবাড়িয়া সার কারখানায় উৎপাদিত সারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে হ্রাস পায় জমির উর্বরতা ক্ষমতা। যার কারণে প্রতিবছর একই জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়াতে হয়। কেরুজ উৎপাদিত জৈবসার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, দূর করে মাটির বিষাক্ততা। সর্বোপরি জৈবসার ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি করে।

কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সার উৎপাদন করা হয়েছে ৩শ মেট্রিক ট্রন। ৫০ কেজি প্যাকেটের এ সার বাজারজাত করা হলে ব্যাপক সাড়া মিলবে বলে চাষিকুল মনে করছে। এরই মধ্যে কেরুজ উৎপাদিত সার বাজারজাতকরণ, মূল্য নির্ধারণ ও গুণগতমান পরীক্ষার অনুমোদনের জন্য প্রায় দেড় মাস আগে এসআরডিআই বরাবর পাঠানো হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ফলাফল পাওয়া গেলেও এ সার বাজারজাত করবে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ। তবে পরিপূর্ণভাবে কারখানাটি চালু হলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণরোধ হবে। অন্যদিকে কেরুজ চিনিকলের স্প্রেন্টওয়াশের কারণে মাথাভাঙ্গা নদীর পানি দূষিত হবে না। সার কারখানায় বিদ্যুত সংযোগ না থাকায় নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে মেশিনপত্র। এতে যেমন বাড়ছে খরচ, তেমনি বিঘ্নিত হচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম।

এ বিষয়ে কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুদর্শন মল্লিক বলেছেন, প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম জৈবসার কারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য শিল্প মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হাজি আলী আজগার টগরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আন্তরিক চিন্তাধারা। তার চেষ্টা ও পরিশ্রমের ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ কারখানা। এছাড়া তিনি ইতোমধ্যেই কেরুজ চিনিকলকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছেন। ইতোমধ্যে ওই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০১২ সালে কেরুজ ডিস্টিলারিতে ২য় ডিস্টিলেশনপ্লান্ট চালু হওয়ায় ওই বিভাগের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া হাতে নেয়া হয়েছে কেরুজ বায়োগ্যাস প্রকল্প। ফলে বয়লার চালাতে বাইরে থেকে কিনতে হবে না মূল্যবান ফার্নেসওয়েল।