আইনি লড়ায়ে হলমার্ক-সোনালী ব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার: সোনালী ব্যাংক আর হলমার্ক গ্রুপের যোগসাজশে দেশের বৃহত্তম ব্যাংকঋণ জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটনের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করলেও এতো দিন পুরনো মিত্রের বিপক্ষে হাঁটেনি সোনালী ব্যাংক। অগত্যা নানামুখী চাপে পড়ে অপকর্মের দোসর হলমার্কের সাথে অর্থ আদায়ের লড়াইয়ে নামছে ব্যাংকটি। পাওনা আদায়ে গ্রুপটির কিছু বন্ধকী জমি ও তার ওপর স্থাপিত ছয়টি কারখানা নিলামে তুলেছে সোনালী ব্যাংক। এতেও আদায় না হলে হলমার্কের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করবে ব্যাংক। ওদিকে ব্যাংকের নিলাম উদ্যোগের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে হলমার্ক গ্রুপ।

জানা গেছে, গ্রুপটির ছয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া ৭১০ কোটি টাকা ফান্ডেড (নগদ) দায়ের বিপরীতে ১৫৭২ শতাংশ বন্ধকী জমি ও সম্পত্তি নিলামের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে সোনালী ব্যাংক। আর জমি বিক্রি করে অর্থ আদায় না হলে কারখানাগুলোর নামে অর্থঋণ আদালতে মামলা করবে সোনালী ব্যাংক। সে জন্য ১০ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে ব্যাংকটি। মামলা করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এ নিলাম ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

ওদিকে ব্যাংকের এ উদ্যোগ আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে যাচ্ছে আলোচিত হলমার্ক গ্রুপ। আগামীকাল রোববারই নিলামের ওপর স্থগিতাদেশ চাইবে গ্রুপটির পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। এ জন্য গত বৃহস্পতিবার রাতেই রফিক-উল হকসহ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করেছেন হলমার্ক গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রদীপ কুমার দত্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হলমার্কের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য মামলা করার বিষয়ে ব্যাংকের পর্ষদে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। মামলার প্রয়োজনে উকিলের পরামর্শ নিয়ে আমরা এই নিলামের আহ্বান করেছি। অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩-এর ১২(৩) ধারা মোতাবেক গ্রুপটির বন্ধকী জমি নিলামে তুলেছে সোনালী ব্যাংক। তবে নিলামের মাধ্যমে কী পরিমাণ টাকা আসবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’ তিনি আরো বলেন, হলমার্ক গ্রুপের সব সম্পতি নিলামে তোলা হয়নি। যেসব ঋণের হিসাব চূড়ান্ত হয়েছে, সেগুলোর বন্ধকী জমি নিলামে তোলা হয়েছে। এই জমি বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ হলে মামলার আর প্রয়োজন হবে না। আর তা না হলে তখন অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হবে।

হলমার্ক গ্রুপের জিএম শামীম আল মামুন বলেন, ‘আমরা সব সময়ই সোনালী ব্যাংকে দায় পরিশোধের সুযোগ চেয়েছি। কারখানা চালু রেখে, শ্রমিকের কর্মসংস্থান রেখে, আয় করে দায় পরিশোধের জন্য সরকারের কাছে অনেক আবেদন করেছি। সবগুলো কারখানা চালু হলে প্রতি তিন মাস অন্তর ৮০ কোটি টাকা করে কিস্তি পরিশোধ করার সক্ষমতা হলমার্কের রয়েছে। আমরা এখনো সরকারের কাছে একই অনুরোধ করছি। আশা করি, সরকার ৪৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে সে সুযোগ দেবে।’

তিনি বলেন, অনিয়ম যা হয়েছে, তার বড় অংশের দায় সোনালী ব্যাংকের। আর যেখানে অনেক ব্যবসায়ীকে কোটি কোটি টাকার জালিয়াতি ও খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ দেয়া হচ্ছে, সেখানে হলমার্ক গ্রুপের সম্পত্তি নিলামে ডাকা হচ্ছে, যা কোনোমতেই কাম্য নয়। ব্যাংকের এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাবে হলমার্ক গ্রুপ।

সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, রূপসী বাংলা শাখা ও হলমার্ক গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা উদ্ঘাটনের পর গ্রুপটির কাছ থেকে এখন পর্যন্ত নগদ ৪১০ কোটি টাকা আদায় করেছে সোনালী ব্যাংক। ৭১০ কোটি ১৯ লাখ টাকা আদায়ে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ও কালামপুর ইউনিয়নে হলমার্ক গ্রুপের ১৫৭২ শতাংশ জমি নিলামের জন্য ছয়টি আলাদা দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। জমির সাথে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও নিলামে তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে ব্যাংকটি।