আইনশৃঙ্খলা বাহিনির পরিচয়ে তিওরবিলার কৃষক রস্তন আলীকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর আর হদিস মেলেনিঃ দুর্ভাবনা আর আতঙ্কে পরিবার

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আইনশৃঙ্খলা বাহিনির পরিচয়ে আলমডাঙ্গার তিওরবিলা গ্রামের যুবক দরিদ্র কৃষক রস্তন আলীকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর আর হদিস মেলেনি। গত মঙ্গলবার দিনগত গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। একই রাতে একই গ্রামের আরও কয়েক জনের বাড়ি গিয়ে খোঁজাখুঁজি করার ও রবজেল আলীর বাড়ি থেকে ২টি মোবাইলফোনসেট নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার তিওরবিলা গ্রামের মৃত আত্তাব আলীর ছেলে কৃষক রস্তন আলীকে (২৫) তুলে নিয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনির পরিচয়ে ১৩ জনের একটি দল তাকে তুলে নিয়ে যান। এদের মধ্যে দুজন র‌্যাবের পোষাক পরিহিত ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ উপস্থিত ছিলেন।

বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া যুবক রস্তন আলীর বড় ভাই ইকলাস আলী বলেন, একদল মানুষ রাত ৩টার দিকে তাদের বাড়ি ঢুকে রস্তনকে নাম ধরে ডাকতে শুরু করলে রস্তনসহ বাড়ির সকলেই ঘুম থেকে জেগে ঘরের বাইরে বের হন। উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকা একদল মানুষ নিজেদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির লোক পরিচয় দেন। ঘর থেকে বের হয়ে রস্তন বলে যে, স্যার আমার নামে তো কোনো কেস নেই। তারপরও রস্তনকে তারা হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে কুতুবপুর গ্রামের দিকে নিয়ে যায়। রস্তন আলীর বড় ভাই আরও বলেন ঘরের বাইরে উঠোনে বৈদ্যুতিক আলোয় তিনি দেখেন মোট ১৩ জন উঠোনে দাঁড়িয়ে। তাদের মধ্যে দুজনের গায়ে র‌্যাবের পোশাক। ১ জনের নিকট রাইফেল, দুজনের গামছা দিয়ে মুখ ঢাকা ও লুঙ্গি উল্টো করে বাঁধা ও বাকিরা জ্যাকেট এবং টাউজার পরিহিত ছিলো। তাদের হাতে হকিস্টিক ও লাঠি ছিলো। গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা ২ ব্যক্তি তাদের গ্রামের যাদেরকে তিনি চিনে ফেলেছেন বলে দাবিও করেন। তখন কোনো উপায় না দেখে তিনি বিষয়টি এলাকার মেম্বারকে ওই রাতেই জানান।

মোবাইলফোনে তিওরবিলা গ্রামের আশরাফুল ইসলাম মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই রাতেই রস্তনের ভাই তাকে ঘটনাটি জানান। তিনি দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে খোঁজ-খবর করেন। তিনি বলেন, রস্তনের ধরে নিয়ে যাওয়ার আগে রাত ২টার পর তারা প্রথমে তিওরবিলা গ্রামের মৃত শুকুর আলীর ২ ছেলে বদর আলী ও ঠাণ্ডুর বাড়ি যায়। তাদের না পেয়ে একই গ্রামের মৃত ঝড়ু মণ্ডলের ছেলে আলী হকের বাড়িতে যায়। তাকেও না পেয়ে যায় তোরাপ মণ্ডলের ছেলে রবজেল আলীর বাড়ি। রবজেল বাড়িতে উপস্থিত না থাকায় তার স্ত্রীকে ডেকে তুলে ঘরের ভেতর ঢুকে খোঁজাখুঁজি করে। না পেয়ে টেবিলের ওপর রাখা ২টি মোবাইলফোনসেট নিয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন। শেষে যায় রস্তনের বাড়ি।

তিনি আরও জানান, রাতেই পুলিশ ফাঁড়ি, আলমডাঙ্গা ও হরিণাকুণ্ডু থানায় খোঁজ নেন। এমনকি ডিবি অফিসেও খোঁজ নেন। কিন্তু তারা হদিস দিতে পারেন নি। পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন। এরপর মেম্বার আশরাফ আলী অন্যকে দিয়ে ঝিনাইদহ র‌্যাবের নিকট ফোন করেও খোঁজ নেন। অথচ র‌্যাবের পক্ষ থেকেও কোনো হদিস দিতে পারেনি বলে উল্লেখ করেছেন।

আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন বলেন, তিনি বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পুলিশ অফিসার পাঠিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে পুলিশ বসে নেই, কাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে, ২ সন্তানের জনক দরিদ্র কৃষক রস্তন আলীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পুরো পরিবার মহা সঙ্কটে নিপতিত হয়েছে। দুর্ভাবনায় চোখের ঘুম হারাম হয়েছে পরিজনের।