অপচিকিৎসা : মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর কিশোর হিমেল

বড় ছেলের মৃত্যুতে ভাঙেনি ভুল : ছোট ছেলেকেও নেয়া হয় কবিরাজের কাছে!

 

কামরুজ্জামান বেল্টু/উজ্জ্বল মাসুদ: খেলতে গিয়ে পা ভেঙে অপচিকিৎসায় মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র হিমেল। ভাঙা পায়ে অপচিকিৎসা দেয়া হয়েছে, যন্ত্রণা কমাতে ভুল ওষুধ খাওয়ানোর পর পেটের নাড়িই ফুটো হয়ে গেছে তার। অবস্থা বেগতিক দেখে গতকাল অবরোধ ঝুঁকির মধ্যে ট্রেনযোগে তাকে নেয়া হয়েছে রাজাশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে রাজশাহী নেয়া হয়।

হিমেলের বড় ভাই তানজিল জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে সুচিকিৎসা না পেয়ে কয়েক বছর আগেই মারা গেছে। হাসপাতালের বদলে কবিরাজের দাওয়ায় খেয়েই তার মৃত্যু হয় বলে তানজিলের পিতা চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারের জাম্মা ড্রাইভারের অভিযোগ। বড় ছেলের মৃত্যুর পর ছোট ছেলে হিমেলকে কেন কবিরাজের নিকট নিয়ে অপচিকিৎসা করানো হলো? হিমেলের মা নাসিমার কাছে জুম্মা ড্রাইভারের এ প্রশ্ন। নাসিমার অভিমত অবশ্য ভিন্ন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার জুম্মা ড্রাইভারের প্রথম স্ত্রী নাসিমা খাতুন তার ছোট ছেলে হিমেলকে নিয়ে গাড়াবাড়িয়া বাগানপাড়ায় বসবাস করেন। জুম্মা তার দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে থাকেন চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার বাড়িতে। ৬ দিন আগে হিমেল খেলতে গিয়ে পড়ে পা ভাঙে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে এক্স-রে করানো হলেও পরে নেয়া হয় কবিরাজের নিকট। অপচিকিৎসায় যন্ত্রণা যখন তীব্রতর হয়ে ওঠে তখনই হিমেলকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে একটি পাউডার অষুধ সেবন করানো হয়। পায়ের যন্ত্রণার সাথে কিশোর হিমেলের পেটের যন্ত্রণাযুক্ত হয়ে প্রাণ যায় অবস্থা হয়ে ওঠে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভুল ওষুধ খাওয়ানো হলো কেন? হিমেলের মা নাসিমা অভিযোগ করে বলেছেন, বুঝিনি। আমার সতিন বিনা খাতুনই তো ওই ওষুধ হাতে দিয়ে বলেছিলো খাইয়ে দিতে। খাওয়ানোর পর যে এমন হবে বুঝিনি। বুঝলে কি আর নিজের সন্তানকে এ অবস্থার মধ্যে ফেলি? হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, ভাঙা পায়ের চিকিৎসার জন্য কবিরাজের নিকট নিয়ে অপচিকিৎসা করানো হয়েছে। এরপর এমন কিছু খাওয়ানো হয়েছে যার কারণে পেটের নাড়িই ফুটো হয়ে গেছে। একদিকে পায়ের যন্ত্রণায় কাতর, সেইসাথে পেটের অসহনীয় যন্ত্রণা। খবর পেয়ে জুম্মা ড্রাইভার গতকাল দুপুরে হাসপাতালে হাজির হয়ে ছেলের দশা দেখে তার প্রথম স্ত্রীকেই দোষারোপ করেন। বাগবিতণ্ডায়ও জড়িয়ে পড়েন তিনি। বলেন, যে ভুলের কারণে মরলো বড় ছেলে, সেই একই ভুলে ছোট ছেলেটাও মরতে বসেছে। সব দোষ ওই নাসিমার। পক্ষান্তরে কেউ কেউ বলেছেন, নাসিমা তো নারি। তাকে বিতাড়িত করে তুমি নতুন বউ নিয়ে দিব্যি সংসার পেতেছো, তোমারও কি কম দোষ? তা ছাড়া বিনা খাতুনই বা ওই ওষুধ কেন খেতে দিলো? তাও তো ক্ষতিয়ে দেখা দরকার।

কিশোর হিমেলের অবস্থা যখন সঙ্কটাপূর্ণ, তখন হাসপাতালের সার্জিকেল কনসালটেন্ট ও অর্থপেডিক কনসালটেন্ট দেখে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। গতকালই ট্রেনযোগে হিমেলেকে তার মা ও ফুফু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। নাসিমা ও জুম্মা দুজনের কেউই কথিত ওই কবিরাজের পরিচয় প্রকাশ করেনি।