অকারণে বিদ্যুত অপচয়ের দিন শেষ : চুয়াডাঙ্গার ছেলে সুব্রত’র আবিষ্কার

 

 

স্বয়ংক্রিয়ভাবে অফ অন হবে বিদ্যুতিক সুইচ

আহাদ আলী মোল্লা: বিদ্যুত অপচয়ের দিন শেষ। এবার আর হাত দিতে হবে না সুইচে; স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুতের সুইচ অন-অফ হবে। রুমে কেউ নেই অথচ লাইট,ফ্যান,এসি,টেলিভিশন,কম্পিউটার অকারণে চলছে। এ অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি দিতে আমাদের চুয়াডাঙ্গার ছেলে সুব্রত একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছে। শিগগিরই আমরা এর সুফল পাবো। বাংলাদেশ তথা বিশ্ব বাঁচবে বিদ্যুত অপচয়ের হাত থেকে।

রুমে কেউ নেই অথচ ইলেক্ট্রিক আর ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলো বেমালুম চলে। প্রয়োজন ছাড়াই খরচ হচ্ছে বিদ্যুত।বাংলাদেশের অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা ও ঘর-বাড়িতে এ চিত্র হরহামেশাই চোখে পড়ে। বিশেষ করে সরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দিন-রাত বিদ্যুতের অপচয় হয়। দরজায় বড় বড় করে লেখা থাকে আসুন আমরা বিদ্যুত সাশ্রয়ী হই; কিন্তু বিধি-বিধান কেউ তোয়াক্কা করে না। বাংলাদেশে গড়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বিদ্যুত এভাবে অপচয় হয় কেবল আমাদের সামান্য উদাসিনতার কারণে। কাজ করতে করতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ চালু রেখে হঠাত বাইরে যাওয়া বা অফিস ছুটির পর সবকিছু বন্ধ না করে বাড়ি চলে যাওয়া আমাদের একটা বদঅভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ বদঅভ্যাস ভাঙতে সুখবর নিয়ে এসেছে সুব্রত।বিদ্যুত অপচয়ের এই অবস্থা শেষ হতে চলেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিঙের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুব্রত দেবনাথ। সে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের খুদিয়াখালী গ্রামের রতন কুমার দেবনাথের ছেলে। সুব্রত ২০০৮ সালে জেহালা ইউনিয়নের সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে। পরবর্তীতে তার কাকা সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পবন কুমার দেবনাথের তত্ত্বাবধান ও অনুপ্রেরণায় সে ২০১১ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

সুব্রত দেবনাথ যে যন্ত্রটিআবিষ্কার করেছে তাকক্ষে মানুষের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারবে। অর্থাৎ রুমে কোনো মানুষ না থাকলে যন্ত্রটি মাত্র দু মিনিটের মধ্যে অটোমেটিক রুমের সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ যেমন লাইট,ফ্যান,এসি,টেলিভিশন,কম্পিউটার সব বন্ধ করে দেবে।এছাড়া রুমে মানুষ ফেরার সাথে সাথে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যেপুনরায় সব চালু করে দেবে। পুরোপুরি অটোমেটিক সিস্টেম হওয়ার ফলে আপনার আর মনে রাখার দরকার নেই যে; আপনি বেরুনের সময় আপনার বাসা বা অফিসের সবকিছু বন্ধ করে এসেছেন কিনা। আর এ যন্ত্রের দামও খুব কম।বৈদ্যুতিক লাইনের লোড অনুযায়ী যন্ত্রটির দাম পড়বে মাত্র দেড় থেকে ২ হাজার টাকা।

কোন প্রযুক্তিতে কাজ করে যন্ত্রটি?

মানুষ বা কোনো উষ্ণ রক্তের প্রাণীর শরীর থেকে নিষ্ক্রিয় অবলহিত রশ্মি(Passive Infrared Ray) বিকিরিত হয়। সুব্রত’র তৈরি এ যন্ত্র একটি রুমের মধ্যে ১২০ ডিগ্রি কোণের সমগ্র অঞ্চলজুড়ে এই নিষ্ক্রিয় অবলহিত রশ্মি ট্র্যাক করে। রুমে কোনো মানুষের উপস্থিতি থাকলে সেন্সর, ডিকোডারে সংকেত পাঠায়। ডিকোডার থেকে অ্যানালগ ডাটা একটি মাইক্রোকট্রোলারে যায়, মাইক্রোকন্ট্রোলারে লেখা সফটওয়্যার সিদ্ধান্ত নেয় রুমে মানুষ আছে কী নেই। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি ডিজিটাল সুইচিং সেকশন পাওয়ার অন বা অফ করে। খুব শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে সুব্রত দেবনাথের এ আবিষ্কারের স্বীকৃতি দেবে বলে একটি বিশ্বস্তসূত্র জানায়।

সুব্রত’র সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত কয়েক মাস সে এই যন্ত্রটি ডিজাইনের জন্য পরিশ্রম করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই সে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজে আসবে আমাদের দেশে ব্যবহার উপযোগী এরকম যন্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করে আসছে। সুব্রত জানায়, সবসময় সকল কাজে সহায়তা ও আমাকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ডিসিপ্লিনের শিক্ষক সৈকত মণ্ডল স্যার। এজন্য সুব্রত তার স্যারের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। এই যন্ত্র ছাড়াও সুব্রত বর্তমানে পানির নিচে ডুবে যাওয়া লঞ্চ বা জাহাজের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য দেশীয় প্রযুক্তির যন্ত্র, সোলার অ্যানার্জি ব্যবহার করে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য লবণাক্ততামুক্ত সুপেয় পানি পরিশোধন যন্ত্র, ফুলি অটোনোমাস অ্যাটেন্ড্যান্স সিস্টেম ও ফিঙ্গার প্রিন্ট বেজড সিকিউরড ডিজিটাল ভোটিং মেশিন তৈরির জন্য কাজ করছে। ভবিষ্যতে সে অটোমেশন ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স(রোবোটিক্স) ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিতে চায়। এ জন্য চুয়াডাঙ্গাবাসীসহ দেশের মানুষের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছে সুব্রত।