শোভন-রাব্বানী বাদ, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে জয়-লেখক

স্টাফ রিপোর্টার: চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার দশ মাস আগেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ হারালেন। তীব্র বিতর্কের মুখে তারা পদত্যাগপত্র জমা দিলে তা গ্রহণ করা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানেই সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুই বছর। সে হিসেবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ আরও দশ মাস বাকি আছে। এই সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এই দু’জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী সম্মেলনের আগ পর্যন্ত তারা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এর আগে ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল। আর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি যশোর।

এর আগে ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ২৯তম জাতীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করেন। শুরু থেকেই দুই নেতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দরজা খোলা ছিল। এর ফলে অতীতের মতো আওয়ামী লীগের জাতীয় বা স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী কেউ চাইলেই ছাত্রলীগে সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ পাননি। কিন্তু শোভন-রাব্বানী এই ইতিবাচক দিকটির সদ্ব্যবহার না করে এটিকে নেতিবাচক বিষয়ে পরিণত করেছেন বলে অভিযোগ করেন অনেক নেতা।

কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ১ বছর না পেরোতেই শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা উঠে আসে। এর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা, অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতা, নেতাকর্মীদের প্রত্যাশিত মূল্যায়ন না করা অন্যতম। এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপেক্ষা, ফোন রিসিভ না করার অভিযোগও ছিল। এর বাইরে রাতজাগা ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, কর্মসূচিতে বিলম্বে যাওয়া, প্রধান অতিথিদের বসিয়ে রাখা, জেলা সম্মেলন করতে না পারা, বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ও এ তালিকায় রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগও আছে। এসব দেখে এবং শুনে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিতে বলেন।

ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী কমিটি দেয়ায় শোভন-রাব্বানীর প্রতি আলাদা নজর ছিল আওয়ামী লীগের সব মহলের। তারা ছাত্রলীগকে শেখ হাসিনার প্রত্যাশা অনুযায়ী ‘নতুন ধারায়’ ফিরিয়ে আনবেন এমন আশা ছিল সংশ্লিষ্টদের। অথচ সে আশায় গুড়ে বালি। একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন তারা। সংগঠনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পহেলা বৈশাখের কনসার্টে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে পার পায়। ইতিমধ্যে গণভবনে শোভন-রাব্বানীর প্রবেশের স্থায়ী পাস স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে শোভন-রাব্বানীর পিছু ছেড়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় একটি অংশ। সংগঠনের সহসভাপতি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাও শোভন-রাব্বানীকে পাশ কাটিয়ে চলছেন। এমনকি ফেসবুকেও আগের মতো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে সে ধরনের প্রচারণা নেই।