রাজনৈতিক বিবেচনায় ৭২টি মামলা প্রত্যাহারে সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজনৈতিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্যের নামে দায়ের হওয়া মামলাসহ ৭২টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এবারের বৈঠকেও বিরোধী দলের কোনো নেতাকর্মীর নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির ৩১তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মুসতাক আহমেদ, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ মোহাম্মদ জহুরুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৈঠক শেষে আইন প্রতমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সভায় ২৭৭টি মামলা প্রত্যহারের সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। এরমধ্যে নতুন ১৬৬ ও পুরনো ১১১টি মামলা রয়েছে। মোট ৭২টি মামালা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে কুমিল্লা দাউদকান্দি এলাকার সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূইয়া ও টাঙ্গাইলের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার মামলা রয়েছে। তাছাড়া সুপারিশে কয়েকটি হত্যা মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জোট সরকারের আমলে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যহার করা হয়েছে। ফেনীর আলোচিত সাংবাদিক টিপু সুলতান হত্যা চেষ্টা মামলার যেসব আসামির নাম প্রত্যহার করা হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। ওই মামলায় জয়নাল হাজারীর নাম ছিল। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন প্রতিমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো হয়রাণিমূলক মামলা দেয়া হয়নি। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ হিংসার রাজনীতি করে না। বিএনপির আমলে তো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে প্লেট চুরি থেকে শুরু করে সব ধরনের মামলা দেয়া হয়েছিল। এজাহারে নাম ছিল না। তবু আসামি করা হয়েছিল। জামায়াত-বিএনপির মতো আমরা কিন্তু তা করিনি। বিরোধী জোট দেশে যেভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে তা বরদাশত করা হবে না বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার একমাস পরই ২০০৯ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক মামলা প্রত্যাহারসংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করে। মামলা প্রত্যাহারের জন্য ভুক্তভোগীদের স্ব স্ব জেলার ডিসির কাছে আবেদন করতে বলা হয়। এ বিষয়ে ডিসির নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ের কমিটি সুপারিশ করলে তা কেন্দ্রীয় কমিটির বিবেচনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত ৩০টি বৈঠকে ১১ হাজার ১১৩টি মামলার মধ্যে দণ্ডবিধির নয় হাজার ৯৪৮টি, দুর্নীতি দমন আইনের ৫২০টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। দণ্ডবিধি ও অন্যান্য আইনে ছয় হাজার ৭৫৬টি এবং দুদক আইনে করা ৩৪৫টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। তারমধ্যে কমিটির সুপারিশে অন্যান্য মামলা প্রত্যাহার হলেও সম্মতি না দেয়ায় দুদক আইনের মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হচ্ছে না। কমিটির কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৩০টি বৈঠকে মামলা প্রত্যাহারের সুযোগে খুন, অগ্নিসংযোগ ও ডাকাতির মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও দলীয় বিবেচনায় মুক্তি পেয়েছেন। একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ খুন বা ডাকাতির মতো ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হওয়ায় এর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।