মেসি-জাদুতে টানা তৃতীয় ফাইনালে আর্জেন্টিনা

তিন বছর তিন নম্বর ফাইনালে উঠে গেল আর্জেন্টিনা। আজ কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিল লিওনেল মেসির দল। মেসি নিজে এক গোল করে, দুটি করিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন। এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডও গড়েছেন মেসি।

যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছিল। কিন্তু তাই বলে ম্যাচটা এমন একতরফা হবে! ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই মেসির আলতো বাতাসে ভাসানো বলে দারুণ হেড করে দলকে এগিয়ে দেন এজেকিয়েল লাভেজ্জি।
৩২ মিনিটে এল ইতিহাস গড়া সেই মুহূর্ত। বল নিয়ে ঝড়ের বেগে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণে ঢুকছিলেন মেসি। তাঁকে থামাতে বিকল্প পথ বেছে নিতেই হলো। ফাউল করেই মেসিকে থামাল যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণ। আগের দিনই জেরার্ডো মার্টিনো বলেছিলেন, মেসিকে থামাতে ন্যায়-অন্যায় বহু উপায় নেয় দলগুলো, কিন্তু থামাতে পারে কি? আজও পারল না শেষ পর্যন্ত।
নিজেই আদায় করে নেওয়া ফ্রি কিক থেকে মাঝারি দূরত্বের শটে ডান পোস্ট ঘেঁষে বল পাঠালেন জালে। আর এই গোল দিয়েই পেরিয়ে গেলেন গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে। আর্জেন্টিনার হয়ে মেসির গোল এখন ৫৫টি, বাতিগোলের ৫৪টি। আর কারও ৫০ গোলও নেই, এমনকি দ্য গ্রেট ডিয়েগো ম্যারাডোনারও। ম্যারাডোনার অবশ্য আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর কীর্তি আছে। মেসি সেখানে কিছুই জেতাতে পারেননি। পারবেন কি এবার?
আর্জেন্টিনা ট্রফি না জেতা পর্যন্ত দাঁড়ি কাটবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করা মেসিকে প্রতিটা পদক্ষেপেই মনে হচ্ছে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচে ফিরতে দ্রুতই এক গোল প্রয়োজন ছিল। কিন্তু উল্টো আর্জেন্টিনাই দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটে গোল করে যুক্তরাষ্ট্রের অঘটনের শেষ সম্ভাবনাও শেষ করে দিল। নিখুঁত গোলশিকারির মতো বল জালে পাঠালেন হিগুয়েইন। ৮৬ মিনিটে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করলেন এই স্ট্রাইকার। এবারও গোল বানিয়ে দিয়েছেন মেসি।
ম্যাচের তখন আর কয়েক মিনিট বাকি। ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা নিশ্চিত জয় পেতে যাচ্ছে। গোলমুখ থেকে মেসি শটটা নিতেই পারতেন। গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ডিফেন্ডার অবশ্য সহজে গোলে শট নিতে দিত না। যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষকও এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু মেসি একটা সুযোগ নিয়ে দেখলেও ক্ষতি ছিল না। গোলটা হয়ে গেলে আবারও টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনটা ফিরে পেতেন, গত ম্যাচেই চার গোল করে যেটি এখন চিলির এদুয়ার্দো ভারগাসের দখলে।

কিন্তু মেসি ঝুঁকি নেওয়ার বদলে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা হিগুয়েইনের দিকেই বল ঠেললেন। নিজে সর্বোচ্চ গোলাদাতা হওয়ার চেয়ে সতীর্থকে দিয়ে একটি গোল করানোতেই তাঁর বেশি আনন্দ! ৪-০!
এবারে আসরে এটি মেসির চতুর্থ অ্যাসিস্ট। পাঁচ গোল করে, চারটি করিয়ে মেসি এক্সপ্রেস ছুটছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। আর তাতেই ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ, ২০১৫ সালের কোপা আমেরিকার পর এ বছরের বিশেষ কোপার ফাইনালেও উঠে গেলে আর্জেন্টিনা। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হতে পারে চিলি নয়তো কলম্বিয়া। আগামীকাল দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ঠিক হবে সেটি।
তবে এবার যেভাবে ভারমুক্ত হয়ে খেলছেন মেসি, যেভাবে গোলের বন্যা ছুটিয়েছে আর্জেন্টিনা; ফাইনালের ট্রফিটাও কি ঠিক করে রাখাই আছে উঠবে কার হাতে?