মহান বিজয় দিবস আজ

স্টাফ রিপোর্টার: আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। লাখো শহীদের রক্তস্নাত বিজয়ের দিন। বিশ্বের মানচিত্রে নতুন স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৪২ বছর পূর্তি আজ। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের কুহেলিকা ভেদ করে ১৯৭১ সালের এ দিনে বিজয়ের প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠেছিলো বাংলাদেশের শিশির ভেজা মাটি। চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে মহান বিজয় দিবসের বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো সেটির উদয় ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়ের মহামুহূর্তটি সূচিত হয়েছিলো আজকের এ দিনে। ৯১ হাজার ৫৪৯ পাকিস্তানি সৈন্য প্রকাশ্যে আত্মসমর্পণ করেছিলো। ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিত্ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন। আর এ বিজয়ের মহানায়ক হিসেবে যিনি ইতিহাসে চির অম্লান ও ভাস্বর হয়ে আছেন তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাঙালি রক্ত দিয়েছে। সোয়া ২শ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম ও লড়াইয়ে রক্ত দিয়েছে এ বাঙালি জাতি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনেও ছিলো বাঙালিদের বড় ভূমিকা। কিন্তু কয়েক বছরেই বাঙালির মোহভঙ্গ হয়। যে শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির আশায় তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়েছিল, নতুন রাষ্ট্র কাঠামোয় একই রকম শোষণ বঞ্চনার মুখোমুখি হতে হয় কয়েক বছরের মধ্যেই। শুরু হয় সংগ্রামের নতুন যুগ। পাকিস্তানিরা এ ভূ-খণ্ডের মানুষকে তাদের তাঁবেদার মনে করতো। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই তারা বঞ্চিত করতো বাঙালিদের। এমনকি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতেও তারা অস্বীকার করতো। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এ সবই ইতিহাসের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচন সব পরিণতিকে দিয়ে দেয় চূড়ান্ত রূপ। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে আসে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ ঘোষণা-এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই ঘোষণা জাতির মনে বয়ে আনে অন্য এক প্রেরণা, জাগিয়ে তোলে মুক্তির উন্মাদনা।
আজ প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের সূচনা হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামবে শহীদদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ জনতার ঢল। দেশব্যাপি আজ বিভিন্ন ভবনের ছাদে উড়বে আমাদের জাতীয় পতাকা।

চুয়াডাঙ্গায় আজ সকাল ৬টার সময় চুয়াডাঙ্গা সদর থানা চত্বরে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হবে, সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সড়ক ও সড়ক দ্বীপ সমূহ জাতীয় পতাকা ও রঙ্গিন পতাকা দিয়ে সাজানো হবে, সকাল সাড়ে ৬টায়  শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি-আধাসরকারী স্বায়ত্বশাসিত বেসরকারী ভবন সঠিক মাপ ও রঙের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে, সকাল ৮টায় চুয়াডাঙ্গা ষ্টেডিয়াম মাঠে জেলা প্রশাসক কর্তৃক জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে তার পরপরই পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, ফায়র সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, বিএনসিসি,গার্লস গাইড, স্কাউট, শিশু পরিবার  নিবাসী ছাত্র-ছাত্রী, মুকুল ফৌজ, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ক্লাবের সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবে। বেলা ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মুক্ত মঞ্চে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা, বেলা ১২টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রঙ্গণে শিশুদের সঙ্গীত, নৃত্য ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত পান্না মুভিজে মেয়েদের জন্য ও নান্টুরাজ সিনেমা হলে ছেলেদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করা হবে, সুবিধা মতো সময়ে হাসপাতাল, কারাগার, শিশু পরিবার, অন্ধ স্কুল, ভবভব ঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রে উন্নত মঅনের খাবার পরিবেশন করা হবে। বাদ জোহর সকল মসজিদে জাতির শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হবে, সুবিধা মতো সময়ে সকল মন্দির গীর্জা প্যাগোডায় জাতির শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে প্রার্থনা করা হবে। বেলা আড়াইটায় চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়াম মাঠে সাংবাদিকদের রশি টানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা ষ্টেডিয়াম মাঠে প্রাক্তন খেলোয়াড় একাদশ বনাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা একাদশ,মুক্তিযোদ্ধা একাদশ বনাম সোনালী অতীত একাদশ ও জেলা প্রশাসন একাদশ বনাম পৌরসভা একাদশের নিয়ে প্রীতি ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়েছে। একই সময়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মহিলাদের আলোচনাসভা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় চুয়াডাঙ্গা হাটকালুগঞ্জের কেরু অ্যান্ড কোম্পানির সাবজোনমাঠে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করা হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মুক্ত মঞ্চে সুখী, সমৃদ্ধি, ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির সার্বজনীন ব্যবহার এবং মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এদিকে গতকাল রোববার সকাল ৭টায় দর্শনা রেলগেট থেকে জেলা প্রশাসকের কার্য্যালয়ে পর্যন্ত ম্যারাথন দৌঁড়ের আয়োজন করা হয়। সকাল ১০টায় ও বিকেল ৪টায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজমাঠে অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় ইসলামী ফাউণ্ডেশনের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা, সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১টায় পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ভবনে আলোকসজ্জ করা হয়েছে।