বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা চতুর্থ দফা অবরোধের আজ দ্বিতীয় দিন রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষিপ্ত অগ্নিসংযোগ : চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে সড়কে গাছ

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা চতুর্থ দফা অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষিপ্ত অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে মিছিল করেছে অবরোধকারীদের একাধিক অংশ। গতরাত ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের ডিঙ্গেদহ-হায়দারপুর মধ্যবর্তী ব্রিজের নিকট গাছ ফেলে বেরিকেডে শবজিবহন করা মিনি ট্রাক আটকালে তাতে আগুন দেয়া হয়। আংশিক ভাঙচুরও করা হয়। তবে স্থানীয়রা আগুন দ্রুত নিভিয়ে ফেলে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গাছ সরিয়ে সড়ক বাধামুক্ত করে। মেহেরপুরের রাজনগরসহ ৪টি স্থানে ব্যাপকহারে ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। গাছ ফেলে ১৮ দলীয় জোট নেতাকর্মীরা সড়ক অবারোধ করে রাখে।

অপদিকে জয়পুরহাটে রোববারের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত এক জামায়াত কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে দু বিএনপি কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে ভোর থেকে অবরোধকারীরা ঝটিকা মিছিল বের করে। এ সময় তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিরো টলারেন্সের কারণে অবরোধকারীরা কোথাও দাঁড়াতেই পারেনি। সকালের দিকে অবরোধকারীদের কিছুটা তৎপরতা দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা কমতে থাকে। বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই প্রথম দিনের অবরোধ শেষ হয়। একতরফা নির্বাচনের তফশিল স্থগিত ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে ১৮ দলীয় জোট সোমবার টানা ৭২ ঘণ্টার সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে।

প্রথমদিন রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। যাত্রী কম থাকায় রেল ও লঞ্চের সিডিউল বিপর্যয় ঘটে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা মেরেহরপুর ও ঝিনাইদহের প্রধান প্রধান সড়ক ছিলো মূলত অবৈধ যান আলমসাধু, করিমন নছিমন আর থ্রি হুইলারের দখলে।

নীল নকশার নির্বাচনের তফশিল বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার এবং আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে ১৮ দলের ডাকে ৭২ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শহীদ হাসান চত্বরে পুলিশের বাধার মুখে মিছিল জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশ করে। সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি এম. জেনারেল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, শহিদুল ইসলাম রতন, মজিবুল হক মালিক মজু, আবু জাফর মন্টু, রবিউল ইসলাম লিটন, আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, মনিরুজ্জামান মনি, অধ্যাপক আতিয়ার রহমান, গোলাম কিবরিয়া তিস্তা, আতিয়ার রহমান লিটন, এমএ তালহা, মঞ্জুরুল জাহিদ, সুজন মালিক, আব্দুস সাত্তার মুন্সী, ফারুক আহ্মেদ, জাভেদ ইকবাল মিজান প্রমুখ।                সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং অর্থবহ নির্বাচনের আহ্বান করে দেশে গণতন্ত্র রক্ষার দাবি জানান।

১৮ দলীয় জোট ঘোষিত বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে ৭২ ঘণ্টার অবরোধের সমর্থনে চুয়াডাঙ্গা ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি সকাল ১১টার দিকে জেলা বিএনপি একাংশের কোর্টমোড় থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কোর্টমোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা পৌর ১৮ দলীয় জোটের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম মনি। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জেলা বিএনপি একাংশের সভাপতি মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক মাহামুদুল হক পল্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক রউফুন নাহার রীনা, দফতর সম্পাদক আবু আলা সামছুজ্জামান, জেলা জামায়াত ইসলামীর শুরা সদস্য অ্যাড. আসাদুজ্জামান, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খালিদ মাহমুদ মিল্টন, সদস্য সচিব সাইফুর রশিদ ঝন্টু, পৌর জামায়াতে ইসলামীর আমির মফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল, জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক শাহাজাহান খান, জেলা তৃণমূল দলের আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক আবু প্রমুখ।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিনে মুজিবনগর উপজেলা জামায়াতের আমির মশিউর রহমানের নেতৃত্বে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের গৌরীনগর খালের ধার নামক স্থানে সড়ক অবরোধ করা হয়। এ সময় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়া হয়।

জীবননগর ব্যুরো/আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগর উপজেলার আনসারবাড়িয়া রেলস্টেশনের অদূরে খুলনা থেকে ঢাকাগামী রেললাইনে গাছ ফেলে ট্রেন অবরোধ করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে ১৮ দলীয় জোটের পিকেটাররা রেললাইনের পাশের গাছ কেটে রেললাইনের ওপরে ফেললে এ অবরোধের সৃষ্টি করে। এর ফলে রাত ২টার দিকে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস আটকা পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, সোমবার গভীররাতে পিকেটাররা আনসারবাড়িয়া রেললাইনের অদূরে রাস্তার গাছ কেটে লাইনের ওপর ফেলে। রেললাইনের ওপরে গাছ দিয়ে অবরোধ করার ফলে খুলনা থেকে সৈয়দপুর-ভায়া-ঢাকাগামী লাইনে চলাচলকারী ট্রেন আটকে পড়ে। বিশেষ করে রাত ২টার দিকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস অবরোধে আটকা পড়ে। এ সময় সৈয়দপুর ও রাজশাহীগামী সকল ট্রেন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। পরে রেল লাইনের ওপর থেকে গাছ সরিয়ে নিলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, অবরোধের প্রথম দিনে মেহেরপুর ও মুজিবনগরের ৪টি স্থানে অবরোধ করে জোটের নেতাকর্মীরা। ওই সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় অবরোধকারীরা। ভোর থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে আমঝুপি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল জাব্বারের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমর্থক মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর এলাকায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় গাছ ফেলে অবরোধ করেছে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। এ সময় মহিলা জমায়াতের কর্মীরা একটি লাঠি মিছিল করে। ফলে ভোর থেকেই মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। আমঝুপি খামার এলাকা থেকে রাজনগর ঘোড়ামারা ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার দু পাশের গাছ কেটে এ অবরোধ করে রাখে ১৮ দলীয় নেতা-কর্মীরা। সড়ক অবরোধ করার কারণে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর প্রধান সড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্দর মোড়ে বিএনপির সাবেক এমপি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে অবরোধ করেন জোটের নেতাকর্মীরা। ওই সময় কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। লাঠি হাতে অবরোধ করে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয় অবরোধকারীরা। মেহেরপুর জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ফারুক হুসাইন, সদর উপজেলা জামায়াতের আমির কাজী রুহুল আমীন, সদর উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সাহাবুদ্দিন মোল্লা, জেলা ছাত্রদল নেতা সোহেল হোসেন প্রমুখ বিক্ষোভ মিছিল ও অবরোধে অংশ নেন।

এদিকে কায়েমকাটার মোড়ে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সড়ক অবরোধ করে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় মেহেরপুর-কাথুলী সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জামায়াত-শিবিরেরর বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং সেখানে বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক আব্দুর রহিমসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে মুজিবনগর উপজেলা জামায়াতের আমির মশিউর রহমানের নেতৃত্বে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের গৌরিনগরে অবরোধ করে ১৮ দলীয় অবরোধকারীরা। এ সময় তারা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়া হয়। বিক্ষোভসহ দফায় দফায় চলে বিভিন্ন স্লোগান।

এদিকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই তিনটি স্থানে অবরোধ উঠে গেলে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল শুরু হয়। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে রাজনগর এলাকায় গাছের গুঁড়ি পড়ে থাকায় মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। সন্ধ্যায় সদর থানার সেকেন্ড অফিসার উপপরিদর্শক (এসএই) মিজানুর রহমান সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় আমঝুপি মাঠ থেকে ঘোড়ামারা ব্রিজ পর্যন্ত কয়েকটি গাছ সরিয়ে দেন। এতে সন্ধ্যার পর থেকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম। এদিকে অবরোধের জন্য ভোর থেকেই আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

মেহেরপুর অফিস আরও জানিয়েছে, মেহেরপুর শহরের হাসপাতাল সড়কে ২টি ইজিবাইক ও ১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত আকস্মিক ভাঙচুর চালিয়ে পালিয়ে যায়।

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতাল সড়কের অস্থায়ী ট্রাক টার্মিনালের সামনে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছিলো। এ সময় অজ্ঞাত ৪/৫ জন যুবক হঠাত রাস্তায় ভাঙচুর শুরু করে। জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল আলম সাজ্জাদের শ্যালক শহরের হটাতপাড়ার খালিদ মোহাম্মদ খানের মোটরসাইকেল এবং দুটি ইজিবাইকে ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে জানান সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম। পুলিশ বলেছে, এটা জামায়াত-শিবিরের নাশকতা।

আলমডাঙ্গা ব্যরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা ১৮ দলের পক্ষ থেকে আলমডাঙ্গার- ঝাউদিয়া–কুষ্টিয়া সড়ক অবরোধ করে। পরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসরাফ হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল জব্বার। প্রধান বক্তা ছিলেন উপজেলা জামায়াতের আমির নূর মোহাম্মদ টিপু। বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর বিএনপির সম্পাদক আজিজুর রহমান পিন্টু, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এমদাদুল হক ডাবু। উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের অফিস বিষয়ক সম্পাদক মামুন রেজা, ডাউকি আমির আব্দুল মান্নান, হারদী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মহিনুল ইসলাম, বেলগাছির সভাপতি আমজাদ হোসেন, ১ নং পৌর ওর্য়াড বিএনপির সম্পাদক একরামুল হক বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম, রকিবুল ইসলাম, শওকত খান, রহিদুর ইসলাম, উপজেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মাগরিবুর রহমান, ওহিদুল ইসলাম, জামায়াত নেতা আশরাফুর আলম, আবু বকর সিদ্দিক, সেলিম রেজা, জহুরুল ইসলাম, যুবদল নেতা মুকুল, গোলাম, চিনিরদ্দিন, সলক, লাল্টু, সোয়েব খাজা করিম, বাকি বিল্লাহ, ছাত্রদল নেতা সৈয়দ লিমন, রহিদ প্রমুখ।