প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বানান ভুল হলেও নম্বর দেয়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলা বানান ভুল হলেও নম্বর দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে পরীক্ষকদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অভিভাবক সংগঠনগুলো। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে একের পর এক কেলেঙ্কারি হচ্ছে। এ বছর সবকটি পরীক্ষার প্রশ্নই গণহারে ফাঁস হয়েছে। পরীক্ষার আগের দিন বিভিন্ন সংবাদপত্রে ফাঁস হওয়া হুবহু প্রশ্ন প্রকাশিত হওয়ার পরও ওই প্রশ্নেই পরীক্ষা হয়েছে।

অভিযোগ তদন্তে কমিটির রিপোর্টেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তার পরও পরীক্ষা বাতিল হয়নি। এমনকি জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রশ্ন ফাঁসের সাথে সরকারি সংস্থা ও লোকজন জড়িত থাকার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। প্রশ্ন ফাঁস ও অবরোধের মধ্যদিয়ে সম্প্রতি সমাপ্ত হয়েছে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা। এরপর উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ‘বাংলা বানানে ভুল হলেও নম্বর না কাটার জন্য’। চাকরি রক্ষার খাতিরে শিক্ষকরাও সে নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। একজন শিক্ষক বলেন, এ ধরনের নির্দেশের কারণে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন সমাপ্তির পথে। বিগত দু বছরের  মতো এবারও উপজেলা সদরে সব উত্তরপত্র জড়ো করে একসাথে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হচ্ছে। উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষকদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া রয়েছে আগে থেকেই। তারসাথে যুক্ত হয়েছে ‘বাংলা বানানে ভুল হলেও নম্বর না কাটার জন্য। এটি এবার থেকে লিখিত আকারে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা  মন্ত্রণালয় এবং  প্রাথমিক শিক্ষা  অধিদপ্তর (ডিপিই) স্বীকার করেছেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রিত হয় এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির অধীনে। এ কমিটির সভাপতি হচ্ছেন মন্ত্রী নিজে। সেখানে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেভাবেই পরীক্ষা গ্রহণসহ সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতি অনুসরণ করার সময় থেকে সব ধরনের বানানে ভুল হলেও নম্বর না কাটার অলিখিত নির্দেশনা রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজেই স্বীকার করেছেন সমাপনীর প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। মন্ত্রী বলেছেন, বাংলা প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে। বাংলা বানানের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রমিত বানান ও বাংলা একাডেমীর বানান অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। দেশে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কর্মরত সবচেয়ে বড় বেসরকারি দাতা সংস্থা ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’-র নির্বাহী প্রধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক স্তরে বানানরীতি অনুসরণ না করা উদ্বেগজনক। বানান রীতি না মেনে শিক্ষার মান বাড়ানোর আকাঙ্ক্ষা হোঁচট খাবে এবং বেশি দূর এগুতে পারবে না। এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, লেখাপড়ার বিষয়টিকে এতোই সোজা করে দেখা উচিত নয়। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়াটা অন্যায়। একটা প্রহসন ও ভয়ঙ্কর দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে। এর মাধ্যমে মেধাহীন প্রজন্ম সৃষ্টি হবে। এর মাধ্যমে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাই ধ্বংস হয়ে পড়বে। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। অনেকে মনে করবে, না-পড়েই যেহেতু নম্বর পাওয়া যায় তাই পড়ালেখাই করবে না।