প্রধানমন্ত্রীর চিঠি শীর্ষেন্দুর হাতে

স্টাফ রিপোর্টার: সকাল থেকেই প্রাণচঞ্চল হয়ে পড়ে পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। দলে দলে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। প্রভাতি ও দিবা উভয় শাখার। পিছিয়ে ছিলেন না অভিভাবকেরাও। তাঁরাও আসতে থাকেন। ব্যস্ততা বাড়তে থাকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে কর্মচারীদের। কেউ ব্যানার টাঙানো তদারক করছেন, কেউ অতিথিদের জন্য আসনের ব্যবস্থা করছেন। কারও মুখে বিরক্তি নেই, সবাই আনন্দিত-উচ্ছ্বসিত। এক অন্য রকম উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সবার মধ্যে।

এই সবকিছু বিদ্যালয়টির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের জন্য। সে নিজের পরিবারসহ মানুষের কষ্টের কথা জানিয়ে পায়রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলো। সেই চিঠির জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে আশ্বস্ত করেছেন, সেতু হবে। গতকাল সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি শীর্ষেন্দুর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়ার জন্য ছিলো এসব আয়োজন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে বিদ্যালয়ের মিলনায়তন। জেলা প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত হন মঞ্চে। শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর চিঠি হস্তান্তর অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে শীর্ষেন্দুর সাথে আসেন তার মা শীলা রানী ও দাদু মুক্তিযোদ্ধা অবিনাশ চন্দ্র।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শীর্ষেন্দুর আনন্দ যেন আর ধরে না। পটুয়াখালীবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে। এ সময় করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মিলনায়তন।

শীর্ষেন্দুর মা শীলা রানী প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীর কাছে ছেলের জন্য দোয়া-আশীর্বাদ চেয়েছেন। ছেলে যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে পারে, এটাই চাওয়া মায়ের। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি শীর্ষেন্দুর হাতে তুলে দেন। তিনি বলেন, আজকের এই দিনটি আনন্দের দিন। পটুয়াখালীবাসী শীর্ষেন্দুকে নিয়ে গর্বিত। গর্বিত শীর্ষেন্দুর মা-বাবা। এই বয়সে শীর্ষেন্দু মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। সেই চিঠির জবাব এসেছে। পায়রা নদীর ওপর সেতু হবে। এটি অনেক বড় পাওয়া। শীর্ষেন্দু অনেক বড় হবে, দেশের সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এই আশা প্রকাশ করেন তিনি। পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় শীর্ষেন্দুর লেখাপড়ার ব্যয় বহন করবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

পটুয়াখালী জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান মোশারফ হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই মমতা আমাদের মুগ্ধ করেছে। শুধু চিঠির জবাবই নয়, শীর্ষেন্দু যে মানুষের জন্য সেতু চেয়েছে, তা তিনি উপলব্ধি করতে পেরে সেতুটি নির্মাণ হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।’ তিনি শীর্ষেন্দুর লেখাপড়ার জন্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সুলতান আহমেদ মৃধা শীর্ষেন্দুর লেখাপড়ার জন্য ১০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলের ছাত্র হিসেবে শীর্ষেন্দু যে কাজটি করে দেখাল, তা আমাদের গর্বিত করেছে।’

শীর্ষেন্দু বিশ্বাস পায়রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছিলো। চিঠির জবাবে ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘স্নেহের শীর্ষেন্দু, তোমার চিঠি পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। নিজের পিতা-মাতাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই নদীকেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তা সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি।’