পিতা শিশু সুরুজের মাকেও কেড়ে নিলো ঘাতক ট্রাক

বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে আলমডাঙ্গা যাওয়ার পথে নওদাপাড়ায় দুর্ঘটনা

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: জন্মের ৪ মাস পর বাবাকে হারিয়ে মায়ের কোলে চড়ে নানা বাড়িতে আসা সুরুজ মিয়ার মাকেও কেড়ে নিলো ঘাতক ট্রাক। আলমডাঙ্গা কুষ্টিয়া সড়কে নওদাপাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মধুমালা নামের এক গৃহপরিচারিকা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে মোটরসাইকেলযোগে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া গৃহকর্তার শ্যালক হাবিবুর রহমান। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে গৃহকর্তার শ্যালকের মোটরসাইকেলযোগে জগন্নাথপুর থেকে ফেরার সময় ট্রাকের সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান মধুমালা। গুরুতর আহত অবস্থায় মোটরসাইকেল চালক হাবিবুর রহমানকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের মৃত আরজেত আলীর মেয়ে মধুবালা (২৫) ১ সন্তানের জননী। ৭-৮ বছর আগে মধুমালার কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার পুটিমারী গ্রামে আহসানের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের বছর দেড়েক পর তাদের ঘরে জন্ম নেয় একটি পুত্র সন্তান। সন্তান জন্মের ৪ মাস পর সাপের কামড়ে মধুমালার স্বামী আহসানের মৃত্যু হয়। আহসানের মৃত্যুর পর মধুমালা ছেলেকে নিয়ে পিতার বাড়ি জগন্নাথপুর চলে আসেন। ছেলেকে মানুষ করতে মধুমালার মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। বেশ কিছুদিন ধরে আলমডাঙ্গা শহরের আক্তার জোয়ার্দ্দারের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন তিনি। গতকাল বিকেলে গৃহকর্তার বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিলো। অনুষ্ঠানে কাজ সেরে বাড়িতে যেতে সন্ধ্যা হতে পারে। সেজন্য ছেলে খাবার খাওয়ানো ও জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পের ঘরে জন্য আবেদন করতে ভোটার আইডিকার্ড ও ছবি নিয়ে আসার জন্য গৃহকর্তার শ্যালককে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মধুমালা গৃহকর্তার শ্যালক হাবিবুর রহমানের মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি গিতে কাজ সেরে আলমডাঙ্গায় ফিরছিলেন। ফেরার পথে আলমডাঙ্গা কুষ্টিয়া সড়কের নওদাপাড়া ইটভাটার নিকটবর্তী স্থানে দ্রুতগতির ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। দ্রুতগতির ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মধুমালা। পথচারীরা তাদেরকে উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে নিলে মধুমালাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। মধুমালার পিতার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অবুঝ ছেলে সুরুজ মিয়া (৬) মায়ের লাশের পাশে বসে আছে। কেউ লাশ দেখতে চাইলে সুরুজ নিজেই মায়ের মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দেখাচ্ছে।
এসময় ট্রাকের ধাক্কায় মারাত্মক জখম হয় মোটরসাইকেল চালক গৃহকর্তার শ্যালক আলমডাঙ্গা পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমানকে প্রথমে স্থাণীয় ক্লিনিকে নিলে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার করে। হাবিবুর রহমানের বুকের হাড় ভেঙে গেছে বলে জানা গেছে।