পিইসি ইইসি জেএসসি জেডিসির ফল প্রকাশ : হাসি-আনন্দে শুরু শিশুদের বছর

চুয়াডাঙ্গায় জেএসসি ৮৭ জেডিসি ৮১ প্রাথমিকে ৯৬ ও এবতেদায়িতে ৯৩ ভাগ পরীক্ষার্র্থী পাস

স্টাফ রিপোর্টার: শিশুদের বছরশিশু-কিশোরদের সবচেয়ে বড় চার পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার একযোগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (ইইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এবার প্রাথমিক সমাপনী ও ইবতেদায়িতে পাসের হার কমেছে। যদিও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় পাসের হারের সঙ্গে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। যা গতবার ছিল ৮৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ পাসের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৭৮ হাজার ৪২৯ জন। গত বছর ছিল ৬৮ হাজার ৯৫ জন। গতবারের চেয়ে জিপিএ-৫ বেড়েছে ১০ হাজার ৩৩৪ জন।

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে (পিইসি) পাসের হার এবার ৯৫ দশমিক ৫০ এবং ইবতেদায়িতে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গতবার পিইসি ও ইবতেদায়িতে পাসের হার ছিল ৯৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এবার প্রাথমিক সমাপনীতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৮ জন। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৩ জন শিক্ষার্থী। এবার জিপিএ-৫ কমেছে ২২ হাজার ১০৫ জন।

জেএসসিতে জিপিএ-৫ বেড়েছে। কিন্তু কমেছে জেডিসিতে। পিইসি এবং ইইসিতে জিপিএ-৫ কমেছে। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ছোট শিক্ষার্থীদের এই বড় পরীক্ষায় এবার কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। বিশেষ করে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে চারটির মধ্যে তিন পরীক্ষায়। জিপিএ-৫ দিয়ে সমাপনী ও পাবলিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে বিবেচনা হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভালো ফল করায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আভা। ফলে তারা হাসি-আনন্দে শুরু করছে নতুন বছর।

মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে চার পরীক্ষার ফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে সারসংক্ষেপ তুলে দেয়ার মাধ্যমে ফল প্রকাশ প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষামন্ত্রী এবং দুপুর ১টায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এরপরই বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীদের ফল জানানো হয়। এছাড়া ওয়েবসাইট এবং এসএমএসের মাধ্যমেও ফল প্রকাশের ব্যবস্থা ছিল।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৩৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪ হাজার ৮৫৬জন জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৪ হাজার ২৪৩জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬১৩ শিক্ষার্থী। এসব বিদ্যালয়ে গড় পাসের হার শতকরা ৮৭ ভাগ। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সব পরীক্ষার্থীই পাস করেছে। এ তিনটি বিদ্যালয়ের পাসের হার শতকরা একশ’ ভাগ। চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩০৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে দুজন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। বাকি ৩০২জন পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং সবাই পাস করেছে। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭৯জন। চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫৯ জন পরীক্ষার্থীর সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮৬ জন। চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১২ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করলেও কেউ জিপিএ ৫ পায়নি।
চুয়াডাঙ্গা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৩৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৩৫ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ জন। চুয়াডাঙ্গা একাডেমীর ১২৪ জনের মধ্যে পাস করেছে ১০৯ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ জন। এমএ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৭৭ জনে পাস করেছে ১৩৭। রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমীর ৮৭ ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ৮২ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ জন। চুয়াডাঙ্গা আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ১০২ জনের মধ্যে পাস করেছে ৮৬ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক ছাত্রী। ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ১৪৯ জনের মধ্যে পাস করেছে ১৩৭। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩ ছাত্রী। আল হেলাল মাধ্যমিক ইসলামি একাডেমীর ৪২ জনে পাস করেছে ২৯জন। হাজরাহাটি তালতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৫৭জনে ১২৬জন পাস। সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৬০ জনের মধ্যে ৩৩৮জন পাস করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৯জন। নীলমণিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩২৫ জনের মধ্যে পাস করেছে ২৯০ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫জন। খাড়াগোদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৮২ জনে পাস করেছে ১৩৮ জন। সোহরাওয়ার্দী স্মরণী বিদ্যাপীঠের ১৯৫ জনে পাস ১৬৪, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩ জন। আলিয়ারপুর আজিজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৪০ জনে পাস করেছে ২২০, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭ জন। হিজলগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৭৪ জনে পাস করেছে ২৩৮, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯ জন। আলোকদিয়া রোমেলা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ১৪২ জনে পাস করেছে ১২৫ ছাত্রী। জিপিএ ৫ পেয়েছে একজন। সড়াবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১২৭ জনে পাস ১০৫, জিপি ৫ পেয়েছে একজন। কুতুবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫৩ জনে পাস ৪২জন। মাখালডাঙ্গা-দীননাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১১৬ জনে ৯২ জন পাস করেছে। তিতুদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৩২ জনে ৯৭ জন পাস করেছে। সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮৬ জনে পাস ৭১জন। নীলমণিগঞ্জ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৮০ জনে পাস করেছে ৭১ জন। কাথুলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০০ জনে পাস ৮৫, জিপিএ ৫ পেয়েছে একজন। বেগমপুর যদুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮৩ জনে পাস ৭০ জন। সরোজগঞ্জের ছাদেমান নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ১২৮ জনে ১১৬ পাস, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫ জন। ডিঙ্গেদহ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ১০২ জনে পাস ৭৭ জন। কুকিয়াচাঁদপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৭৪ জনে ৫০ জন পাস। শ্রীকোল বোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১২০ জনে ১০৮ জন পাস। জিপিএ ৫ পেয়েছে দুজন। গিরীশনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২৫ জনে ১০৪ পাস। মহাম্মদজমা ডিএএসএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮০ জনে ৬৬ জন পাস করেছে। কোটালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০০ জনে ৯২ জন পাস। আরাফাত হোসেন স্মরণী বিদ্যাপীঠের ৪৬ জনে পাস করেছে ৪০ জন। এছাড়া গাইদঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিম্নমাধ্যমিক শাখার ৩৪জনে পাস করেছে ৩০ জন।
অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ১০ মাদরাসার ৩২০ শিক্ষার্থী জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। উত্তীর্ণ হয়েছে ২৬০ জন। পাসের হার শতকরা ৮১ ভাগ। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই জিপিএ ৫ পায়নি। চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদরাসার ২৬ জনে ২৪জন পাস। চুয়াডাঙ্গা মহিলা মাদরাসার বদরগঞ্জ বাকী বিল্লাহ কামিল মাদরাসার ৩৩ জনে পাস ৩২। সড়াবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার ৩৮ জনে ২৭ জন পাস। হাজরাহাটি দারুল ইসলাম দাখিল মাদরাসার ৩১ জনের মধ্যে পাস করেছে ১৫ জন। যুগিরহুদা আবুল হোসেন দাখিল মাদরাসার ৪৯ জনে পাস ৪১ জন। বেগমপুর দাখিল মাদরাসার ৪৪ জনে ৪২ জন পাস করেছে। ৬২ নং আড়িয়া দাখিল মাদরাসার ৩৬ জনে পাস করেছে ২৮ জন। তবে দশমী মহিলা দাখিল মাদরাসার ৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে তিনজনই ফেল করেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার ১৮ হাজার ২৭ পরীক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ৪১৮জন বালক এবং ৯ হাজার ৬০৯ জন বালিকা। পাস করেছে ৭ হাজার ৮৮৪ বালক ও ৯ হাজার ২৯ জন বালিকা। জেলায় জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮৭৩ জন বালক ও এক হাজার ৩২ জন বালিকা। জেলায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় আলমডাঙ্গায় ৫ হাজার ৮৮৭, জীবননগরে ২ হাজার ৯৯৬, দামুড়হুদায় ৪ হাজার ১৩৪ ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৫ হাজার ১০ জন পরীক্ষায় অংশ নেয় বলে জানান জেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান।
চুয়াডাঙ্গায় ২০১৯ সালের এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় মোট ১৩ হাজার ৮ জন পরীক্ষা দেয়। এর মধ্যে ৬৪১ বালক ও ৬৬৭ জন বালিকা। পাস করেছে ৬২৩ বালক ও ৬৪৫ বালিকা। পাসের হার ৯৬ দশমিক ৯৪। আলমডাঙ্গায় ২৪৮, জীবননগরে ২২৩, দামুড়হুদায় ৫৫৩ ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৮৪ জন এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়।