তাবিথের প্রচারে হামলায় সাংবাদিকসহ আহত ২০

টার্গেট করেই আক্রমণ : তাবিথ, ঘটনা নিজেদের সৃষ্টি : আতিক

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের গণসংযোগে হামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলীতে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তাবিথ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ ১৫-২০ জন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার পর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফের গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। হামলার পরপরই রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাবিথ অভিযোগ করেন, ঢাকা উত্তরের ৯নং ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ঠেলাগাড়ি প্রতীকের মুজিব সারোয়ার মাসুমের নেতৃত্বে তার কর্মী-সমর্থকরা এ হামলা চালিয়েছে। মাসুমের গুণ্ডাবাহিনী আমার মাথায় মেরেছে ও আমার কর্মীদের মেরেছে। তাবিথের বক্তব্য শেষ হতে না হতেই আবার ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তাদের ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তাবিথ আউয়াল। অভিযোগে তিনি দারুস সালাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে তাবিথ সাংবাদিকদের বলেন, পেছন থেকে কাপুরুষের মতো আমাকে টার্গেট করে মারা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, আমাদের পক্ষে গণজোয়ারে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষ হামলা করেছে। আমরা পাল্টা আঘাত করিনি। যতই হামলা হোক আমাদের দাবিয়ে রাখা যাবে না। তাবিথ আউয়াল বলেন, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক এবং এলাকাবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখুন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের গণসংযোগ চালিয়ে যাব। কোনো ভয়ভীতি, হামলায় পিছু হটব না।

ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশের উদ্দেশে তাবিথ বলেন, সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হল- এই হামলা কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সামনে হয়েছে। আমি পুলিশ কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই ওনারা দায়িত্ব পালন করছেন। ওনারা নিজের চোখে দেখেছেন এই হামলা এলাকার ঠেলাগাড়ি প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী ও তার দলবল করেছে। ওনারা যেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

এদিকে তাবিথের গণসংযোগে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর লালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর হিংস তা যেন ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও ভয়ভীতিমুক্ত করতে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর আহ্বান জানান তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে গাবতলীর পর্বত সিনেমা হলের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহদফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাইদুল ইসলামসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাবিথ গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের পেছনে বাজারপাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে যান। এলাকাটি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। সেখানে গণসংযোগ শুরুর পরপরই পেছন দিক থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করেন একদল লোক। তারা তাবিথ ও তার সঙ্গীদের ওপর ইটপাটকেল এবং ডিম ছুড়ে মারেন। তাবিথের গায়ে ও মাথায়ও লাগে ঢিল। একপর্যায়ে হামলাকারীরা তাবিথকে কিলঘুষি মারতে থাকে। উপস্থিত নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে তিনি রক্ষা পান। হামলায় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ গণমাধ্যমের কয়েকজন কর্মীও আহত হন। এ সময় ওই এলাকায় দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার সময় সেখানে পুলিশ ছিল। একপর্যায়ে তারা হামলাকারী ও তাবিথের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে যায়। হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় দুই পক্ষ থেকে নৌকা ও ধানের শীষের পক্ষে স্লোগান দেয়া হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

হামলার পর তাবিথ ও আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। এরপর নেতাকর্মীদের নিয়ে তাবিথ ১১নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ শুরু করেন। সেখানে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড, লেকভিউ, দক্ষিণ পাইকপাড়া, বটতলা, মধ্য পাইকপাড়া, লালওয়াল, নতুন বাজার, ডি টাইপ কলোনি, কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেট, পোড়াবস্তি, শহীদ মিনার রোডে গণসংযোগ করেন। এরপর ১৪নং ওয়ার্ডের শেওড়াপাড়া, ইব্রাহিমপুর, রোকেয়া সরণি, পশ্চিম কাজীপাড়া, কাফরুলে প্রচার চালান তিনি।

বিকাল পাঁচটায় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে তাবিথের গণসংযোগে যোগ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও ধানের শীষে ভোট চান মওদুদ। এ সময় বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবুর রহমান রাব্বীও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে কল্যাণপুরে গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাবিথ বলেন, আমরা আমাদের কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি, কথা বলছি। গণজোয়ার থেকে বোঝা যাচ্ছে ১ ফেব্রুয়ারি অবশ্যই বিজয়ী হব। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি, আমাদের সঙ্গে থাকা অবস্থায় মিডিয়ার কিছু ভাইবোনরা আহত হয়েছেন। আশা করি তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। একই সঙ্গে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করি। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করবেন কিনা জানতে চাইলে তাবিথ বলেন, পুরো ঘটনাটা মিডিয়ার সামনে ঘটেছে, লাইভ হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশন যদি এসব বিষয়ে নিশ্চুপ থাকে তাহলে বলব, ঘটনাটি দুঃখজনক। আমাদের পক্ষ থেকে ঘটনার তথ্য, ভিডিও প্রমাণ বারবার দিচ্ছি। এবার আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আমার ওপর হামলা করেছে। এখানে অভিযোগ করার কিছু নেই। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা দায়িত্ব পালন করবেন- এটাই চাই। আজ বুধবার ৪৯নং ওয়ার্ডের হাজীক্যাম্পের সামনে থেকে পথসভার মধ্য দিয়ে গণসংযোগ শুরু করবেন তাবিথ আউয়াল। এরপর ৪৮, ৪৪, ৫০ ও ১নং ওয়ার্ডে প্রচার চালাবেন তিনি।