জীবননগরে মাদরাসা ছাত্রকে মারধর শেষে ৩ দিন ধরে আটকে রাখার অভিযোগ 

দামুড়হুদা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সুয়াইব হোসেন নামের এক মাদরাসা ছাত্রকে দু’শিক্ষক মিলে বেধড়ক মারধর শেষে ঘরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। মাদরাসারই একটি ঘরে তালাবন্দি রাখার ৩ দিনের মাথায় লজিং বাড়িতে খাবার খেতে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে এসে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (চিৎলা হাসপাতালে) ভর্তি হয়েছে আহত ছাত্র সুয়াইব। সে দামুড়হুদা উপজেলার কালিয়াবকরি গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। গত ২৫ জানুয়ারি শনিবার সকালে তাকে মারধর করে ঘরে আটকে রাখার পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মাদরাসা থেকে নিজ বাড়ি দামুড়হুদার কালিয়াবকরি গ্রামে পালিয়ে আসে মাদরাসা ছাত্র সুয়াইব হোসেন। পরে রাত ৯টার দিকে তাকে চিৎলা হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন।
আহত ছাত্রের শয্যাপাশে থাকা মা রেকসোনা পারভীন বলেছেন, আমার ছেলেকে শুধু মারধরই করা হয়েছে তা কিন্তু নয়, তাকে কয়রাডাঙ্গার মতো মেরে ফেলারও হুমকি দেয় অভিযুক্ত ওই দুই শিক্ষক। ঘটনাটি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ওই মাদরাসা ছাত্রের মাসহ পরিবারের লোকজন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কালিয়াবকরি গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে সুয়াইব হোসেন (১৭) ৭-৮ মাস আগে জীবননগর রাজনগর-ইসলামপাড়াস্থ জামিয়া ক্বারীমিয়া আশরাফুল উলুম বালক বালিকা কওমী মাদরাসায় ভর্তি হয়। কালিয়াবকরি গ্রামের মুফতি শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে ওই মাদরাসায় ভর্তি হয় সে। মাদরাসা ছাত্র সুয়াইব সম্প্রতি হাফেজি পড়া শেষ করেছে। গত ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি ওই মাদরাসায় ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওয়াজ মাহফিল শেষে মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা সাজিদুর রহমান থালা-বাসন ধুয়ে পরিষ্কার করতে বলে ছাত্র সুয়াইবকে। সুয়াইব থালা-বাসন ধুতে না চাইলে তাকে প্রথমে চড়-থাপ্পড় মারে ওই শিক্ষক। এর কিছুক্ষণ অভিযুক্ত শিক্ষক সাজিদুর রহমান একই মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ রবিউল ইসলামকে ডেকে আনে এবং দুজনে মিলে তাকে বেত দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। ছাত্র সুয়াইব জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তাকে ওই ঘরেই তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়। ঘটনাক্রমে ছেলেকে দেখতে মা রোকসানা পারভীন ওইদিন মাদরাসায় গেলেও মায়ের সাথে দেখা করতে দেয়া হয়নি। তারা জানায় সুয়াইব কাজে ব্যস্ত আছে। এখন তার সাথে দেখা করা যাবে না। কয়েকদিন পরে আসেন। কয়েক দফা চেষ্টার পরও ছেলের সাথে দেখা করতে না পেরে মা রোকসানা পারভীন বাড়ি ফিরে আসেন। এদিকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখার ৩ দিনের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্র সুয়াইব হোসেন লজিং বাড়িতে খেতে যাওয়ার কথা বলে মাদরাসা থেকে পালিয়ে আসে নিজ বাড়ি কালিয়াবকরি গ্রামে। বাড়িতে পৌছে সে পরিবারের লোকজনকে ঘটনাটি জানায়। এসময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আহত ছাত্র সুয়াইব বলেছে, শিক্ষক সাজিদুর রহমান তাকে বেত দিয়ে বেধড়ক মারধর করে এবং হুমকি দিয়ে বলে কয়রাডাঙ্গার কথা মনে নেই? আমরা যেভাবে বলবো সেভাবে চলবি। না হলে কেউ তোর লাশও খুঁজে পাবে না। মা রোকসানা পারভীন জানান, আমি ছেলের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ওই দুই শিক্ষক ছেলেকে শিখিয়ে দেয়- বলবি পড়ে গিয়ে আঘাত লেগেছে। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেছেন, আমার ছেলেকে যারা বিনা অপরাধে মারধর করে ৩ দিন ঘরে আটকে রেখেছিলো তাদের বিচার চাই। তিনি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনাও করেছেন।