চুয়াডাঙ্গা জেলার চাঞ্চল্যকর ও রোমহর্ষক ১১টি মামলার মধ্যে ১০টি বিচারাধীন চাঞ্চল্যকর ১১টি মামলার হালচিত্র

আলম আশরাফ: চুয়াডাঙ্গা জেলার চাঞ্চল্যকর ও রোমহর্ষক মামলা হিসেবে সংশ্লিষ্ট কমিটির আমলে নেয়া ১১টি মামলার মধ্যে ১০টি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। দামুড়হুদার নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান হত্যা মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন।

চাঞ্চল্যকর ও রোমহর্ষক মামলা হিসেবে আমলে নেয়া মামলার মধ্যে যে ১০টি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন সেগুলো হলো- চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জে নাবিলা হত্যা, চুয়াডাঙ্গার পুলিশ কনস্টেবল ইছাহক হত্যা, ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলা, দর্শনা শ্যামপুরের সাইফুল হত্যা, আলুকদিয়ার গফফার কবিরাজ হত্যা, আলমডাঙ্গা ঘোষবিলার শাফায়েত হোসেন স্বাধীন হত্যা, ঢাকা সাভারের কলেজছাত্র জুবায়েরকে চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়ায় নিয়ে হত্যা, চুয়াডাঙ্গা যুবলীগ নেতা বাহারুল হায়াত হত্যা, চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ায় মা-মেয়েকে কুপিয়ে খুন ও আলমডাঙ্গা উদয়পুরের জোড়া হত্যা মামলা। এসব মামলাগুলোই মূলত জেলার চাঞ্চল্যকর ও রোমহর্ষক মামলা হিসেবে কমিটি আমলে নেয়। কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে মামলাগুলোর যে হালচিত্র তুলে ধরা হয় তা হলো-

ইছাহক হত্যা মামলা: পুলিশ কনষ্টেবল ইছাহক আলীকে ২০০৫ সালের ৫ মে দীননাথপুর বেলগাছি রাস্তার পশ্চিম মাঠের মধ্যে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা ৩৬৪/৩০২/৩৭৯/৩৪ দণ্ড বিধিতে মামলাটি ২০০৯ সালের ১৬ এপ্রিল তদন্ত শেষে ৮ জন আসামির বিরুদ্ধে ৩৬৪/৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি অভিযোগ দাখিল করে। মামলাটি চুয়াডাঙ্গা বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন আছে। আদালতে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে বিচারের জন্য দিন ধার্য্য আছে। সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিজ্ঞ পিপি ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে অনুরোধ করেছে জেলা চাঞ্চল্যকর ও রোমহর্ষক মামলা পর্যালোচনা কমিটি।

সিরিজ বোমা হামলা: ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট সারা দেশব্যাপি সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই মোতালেব হোসেন বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দণ্ডবিধির ৩২৬/৩০৭/৩৪ ধারায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে ২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। মামলাটি চুয়াডাঙ্গা বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতে বিচারাধীন আছে। চার্জশিটভুক্ত ২ আসামিই জেলহাজতে আটক আছে। ওই মামলার দণ্ডবিধির অংশ বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল আদালতে বিচারাধীন আছে। আগামী ১৩ জানুয়ারি ২০১৪ সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিত নিশ্চিত করতে বিজ্ঞ পিপি ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে অনুরোধ জানিয়েছে পর্যালোচনা কমিটি।

সাইফুল হত্যামামলা: দর্শনা শ্যামপুরের মহসিন আলীর ছেলে সাইফুল ইসলামকে ২০০৭ সালের ১ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে গ্রামেই জোড়াবটতলা নামকস্থানে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা গুলি করে খুন করে। দামুড়হুদা থানায় ৩০২/৩৪ ধারায় মামলাটি রুজু হয়। ২০১০ সালের ১৪ অক্টোবর তদন্ত শেষে  ১৯ আসামির বিরুদ্ধে ৩০২/৩২৬/২০১/৩৪ দণ্ডবিধি ধারায় অভিযোগ দাখিল করে। ওই আসামিদের মধ্যে ৯ জন জামিনে, ৩ জন জেলহাজতে ও ৭ জন পলাতক রয়েছে। মামলাটি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতে বিচারাধীন আছে। মামলার নথি হাইকোর্টে তলব করা হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

গাফফার কবিরাজ হত্যামামলা: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরে আলুকদিয়ার আব্দুল গাফফার কবিরাজকে আলুকদিয়া রোমেলা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অদূরে ২০০৮ সালের ২ মে রাতে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করা হয়। পরদিন গাফফার কবিরাজের ছেলে মাহাবুব আলম পল্টু বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় পেনাল কোড ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্তকালে জানা যায়, আলুকদিয়া গ্রামের সন্ত্রাসী আরিফ বাহিনী গাফফার কবিরাজের নিকট ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৪ আসামি বিজ্ঞ আদালতে সিআরপিসি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে। মামলাটি ২০০৯ সালের ২২ মার্চ তদন্ত শেষে ১২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়।  ১২ আসামির মধ্যে মাসুদ নামের এক আসামি মারা গেছে। পলাতক অপর আসামির বিরুদ্ধে ক্রোকি পরোয়ানা ইস্যূ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ১০ জনের মধ্যে ২ জন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছে। ৮ জন জেলহাজতে আটক আছে। আগামী ৯ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য্য আছে।

সাফায়েত হোসেন হত্যামামলা: আলমডাঙ্গা ঘোষবিলা গ্রামের খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলে সাফায়েত হোসেন স্বাধীনকে ২০০৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে জামজামি বাজারে একটি ফলের দোকানের সামনে এক অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারী ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। স্থানীয়রা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা সেফা ক্লিনিকে নেয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সাফায়েত হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন সাফায়েতের ভাই মিজানুর বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। মামলাটি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় রুজু হয়। পরবর্তীতে মামলাটি শাহজাহান (ওসি ডিবি) তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ৩০২/৩৪ ধারায় পেনালকোডে ৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। আগামি ১২ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য্য আছে। ওয়ারেন্ট তামিলপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল নিশ্চত করতে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জকে অনুরোধ জানিয়েছে চাঞ্চল্যকর ও রোমহর্ষক মামলা পার্যালোচনা কমিটি।

জুবাইর হত্যামামলা: চুয়াডাঙ্গার বহুল আলোচিত জুবাইর হত্যামামলা। ২০০৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে আলুকদিয়া বায়তুল মামুন কবরস্থানের একটি পুরাতন কবর থেকে জুবাইরের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। মামলাটি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতে বিচারাধীন আছে। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা সাভারের লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র জুবায়ের মাহমুদের সাথে একই শ্রেণির ছাত্রী চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মনিরামপুর গ্রামের নাজির আহমদের মেয়ে বর্তমানে ঢাকা জেলার সাভারে বসবাসরত নুসরাত জাহান পিয়ার সাথে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই প্রেমের কারণে পিয়া ঘুমের বড়ি খেয়ে অসুস্থ অবস্থায় জুবায়েরের বাড়িতে ওঠে। জুবায়েরের পিতা পিয়ার পিতাকে ডেকে তার মেয়েকে বুঝিয়ে দেন। পিয়ার পিতা নাজির আহমদ জুবাইয়ের সাথে পিয়ার বিয়ে প্রস্তাব দেন। জুবায়েরের পিতা বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এ কারণে পিয়াকে গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার মনিরামপুরে পাঠিয়ে দিয়ে কুখ্যাত কিলার রশিদ ও নজু গংদের সাথে পরিকল্পনা করে মোবাইলফোনে জুবাইয়েরকে কৌশলে ডেকে নিয়ে আসে এবং পিয়ার সাথে দেখা করিয়ে আটক রেখে জুবাইয়েরের পিতার নিকট ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। জুবাইরকে খোঁজ করতে তার পিতা মনিমারপুরে ছুটে আসেন। কোনো খোঁজ না পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলা তদন্তকালে ৬ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসা শেষে আদালতে সোপর্দ করা হয়। গেফতারকৃত টেইপুরের হাসানের স্বীকারোক্তিতে ২০০৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে আলুকদিয়া বায়তুল মামুন কবরস্থানের একটি পুরাতন কবর থেকে জুবাইরের লাশ উদ্ধার করা হয়। জুবাইরের প্রেমিকা পিয়াকে গ্রেফতার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। মামলাটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দণ্ডবিধির ৩৬৪/৩৮৫/৩৮৭/৩০২/২০১/৩৪ ধারায় দাখিল করেন। মামলাটি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতে বিচারাধীন আছে। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মামলা বিচারের জন্য দিন ধার্য্য আছে।

বাহরুল হায়াত হত্যামামলা: চুয়াডাঙ্গা সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার মৃত ভিকু শেখের ছেলে বাহারুল হায়াত ২০০৯ সালের ১৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে কোর্টসংলগ্ন মাবুদ মিয়ার আড়তের দক্ষিণে একটি চায়ের দোকানে বসে বন্ধুদের সাথে গল্প করার সময় ৩ জন সন্ত্রাসী একটি মোটরসাইকেলযোগে এসে আকস্মিকভাবে বোমা নিক্ষেপ করলে বাহারুল হায়াত বোমার আঘাতে মারাত্মক জখম হন। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় বাহারুলের বোন সোহানা সুলতানা রিতা বাদী হয়ে পলাশপাড়া জয়নাল আবেদীনের ছেলে জামাল ও বুজরুক গড়গড়ির জহুরুল ইসলামের ছেলে শাহিনসহ অজ্ঞাত অনেকের বিরুদ্ধে লিখিত এজাহার দাখিল করেন। ‌১৯ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মামলাটি দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ তৎসহ বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে  ৩/৪ ধারায় রুজু হয়। মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায়  এবং সম্পুরক বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ৩/৪ ধারায় অভিযোগ দাখিল করেন। বর্তমানে মামলাটি চুয়াডাঙ্গা বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতে বিচারাধীন আছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য্য আছে।

অন্তঃস্বত্তা মা ও মেয়ে হত্যামামলা: চুয়াডাঙ্গার একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার উত্তর বারিখাল এলাকার আব্দুল হাকিম খানের ছেলে হাবিবুর রহমান। তিনি দীর্ঘদিন চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার ইয়াকুব হোসেনের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বাসা নিয়ে ভাড়ায় বসবাস করে আসছিলেন। ইয়াকুব হোসেনের ছোট ভাই লিপু হাবিবুর রহমানের অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী রিনা খাতুন ও মেয়ে আয়েশা খাতুনকে ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে। এ ঘটনায় হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে পরদিনে ১৬ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় রেলপাড়ার গোলাম হোসেনের ছেলে আসামি লিপুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দণ্ডবিধির ৩৮৫/৩০২ ধারায় রুজু করে এসআই আমির আব্বাসকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। মামলা রুজু হওয়ার আগেই লোকমুখে শুনে পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার সার্কেল, সদর থানা অফিনার ইনর্চাজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মামলা এজাহারভুক্ত আসামি লিপু পালানোর চেষ্টাকালে ট্রেন থেকে পড়ে তার ডান পা কেটে জখম হওয়া অবস্থায় পুলিশ গ্রেফতার করে। চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আসামি লিপু গ্রেফতার হওয়ার পর হাসপাতালেই লোকজনের সামনে অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী ও মেয়ে খুনের কথা স্বীকার করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে দণ্ডবিধির ৩৮৫/৩০২ ধারায় আদালতে দাখিল করেন। বর্তমানে মামলাটি চুয়াডাঙ্গা বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ-২ আদালতে বিচারাধীন আছে। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিজ্ঞ পিপিকে অনুরোধ করেন। আগামী ১৪ মার্চ ২০১৪ তারিখে বিচারের জন্য দিন ধার্য্য আছে।

উদয়পুর গ্রামের জোড়া খুন মামলা: আলমডাঙ্গার উদয়পুর গ্রামের মাঠ থেকে ২০১০ সালের ২৬ মার্চ সকালে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ মেহেরপুর গাংনীর ভোমরদাহ গ্রামের মহিউদ্দীনের ছেলে মজিবর ও ধর্মচাকী গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে নাজমুলের জবাই করা ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা দলীয় দ্বন্দ্বের কারণে তাদের খুন করে রেখে যায়। এ ঘটনায় হারদী ইউনিয়নর ৯ নং ওয়ার্ডে চৌকিদার হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ওই দিনই আলমডাঙ্গা থানায় অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের নামে অভিযোগ দাখিল করেন। মামলাটি ৩০২/৩৪ ধারায় পেনালকোডে রুজু করে এ বদরুজ্জামানের নিকট তদন্তভার দেন। বদরুজ্জামান তদন্তকালে সন্দেহভাজন ১৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মেহেরপুর গাংনীর নওয়াপাড়া গ্রামের রহমত আলী উল্লাহর মেয়ে জোস্না ও আলমডাঙ্গা কাগমারী গ্রামের মৃত ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে শাহিন আলী বিজ্ঞ আদালতে সিআরপিসি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বদলি হওয়ার কারণে বর্তমানে এসআই জিয়াউর রহমান ( ডিবি) চুয়াডাঙ্গা তদন্ত করছেন। এসআই জিয়াউর রহমান মামলাটি তদন্ত শেষে ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৭ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন।

মিজান চেয়ারম্যান হত্যামামলা: দামুড়হুদার নতিপোতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হোগলডাঙ্গা গ্রামের মিজান চেয়ারম্যান গত ১২ অক্টোবর ২০১০ তারিখে নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকাকালে অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ সন্ত্রাসী বোমাসহ মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে প্রবেশ করে। ঘরের জানালা-দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে স্ত্রী ও কন্যার সামনেই রামদা ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে খুন করে এবং ঘরে থাকা ১ লাখ টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে যায়। গ্রামবাসী চেয়ারম্যানকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পরপর দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনার পর পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, অফিসার ইনচার্জ দামুড়হুদা থানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের নির্দেশে অফিসার ইনচার্জ (ডিবি) চুয়াডাঙ্গার শাহাজাহান আলী মামলাটি তদন্তভার গ্রহণ করেন। তার বদলিজনিত কারণে এসআই জিয়াউর রহমান (ডিবি) চুয়াডাঙ্গা তদন্ত করছেন। আগামী ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য্য আছে। মামলাটির তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করতে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানিয়েছে মামলা পর্যালোচনা কমিটি।

নাবিলা খাতুন হত্যামামলা: চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জ বাজার যুগিরহুদার জহিরুল ইসলামের মেয়ে সরোজগঞ্জ ছাদেমান নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী নাবিলা খাতুন গত ৯ মে ২০১২ তারিখ রাতে নিজ ঘরে ঘুমাতে যায়। পরদিন সকালে ঘুম থেকে না উঠলে বাড়ির লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে নাবিলা খাতুনকে ওয়ালের সাথে হেলান দেয়া গলায় ওড়না পেঁচানো শ্বাসরোধ অবস্থায় মৃত দেখতে পায়। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে। এ ঘটনায় নাবিলার পিতা জহিরুল  ইসলাম বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে উল্লেখ করেন সরোজগঞ্জ যুগিরহুদার শফির ছেলে শরীফুল ইসলাম ও আবুর ছেলে তাহামুল নাবিলাকে বিরক্ত করতো। তাই নাবিলার পিতা জহিরুল  ইসলামের সন্দেহ হয় যে, তারা অজ্ঞাতনামা আসামিদের সহযোগিতায় পরিকল্পিতভাবে নাবিলাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। বাদীর এজাহার পেয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এরশাদুল কবির ওই দিনই ৩০২/৩৪ ধারায় পেনালকোডে মামলাটি রুজু করে (ওসি তদন্ত) পুলিশ পরিদর্শক ফারুক হোসেনকে তদন্তভার গ্রহণ করে প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে ১১ অক্টোবর ২০১২ তারিখে ৩০২/৩৪ ধারায় পেনালকোড ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। চুয়াডাঙ্গা বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য নথি জমা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতে আগামী ৭ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য্য আছে।