কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় মিকি ও হামিদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত

স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহের মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শরিফুননেছা মিকি ও ময়জদ্দীন হামিদ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে বিএনপির প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক ও শাহজাহান মোহন ভোট বর্জন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। উভয় প্রার্থী নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা, বাইরের উপজেলা থেকে সন্ত্রাসী এনে স্থানীয় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া, পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ না করতে দেয়ার অভিযোগ করেন। এছাড়া এক প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্টকে ভোটের আগের দিন মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানোসহ নানা অভিযোগও করেন। তারা দাবি করেন, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া, পাড়ায় পাড়ায় ত্রাস সৃষ্টি করা, রাস্তা থেকে ভোটারদের ফেরত পাঠানো, কেন্দ্রে ধানের শীষের পক্ষের পোলিং এজেন্ট না থাকাসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়ে তাদের চোখে। এ বিষয়গুলো প্রশাসনের নজরে আনলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে তারা বুঝে নিয়েছেন, নির্বাচনে থাকার আর কোনো পরিবেশ নেই। তাই তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগ প্রার্থী শরিফুননেছা মিকি ২৪ হাজার ৪ শ’ ৩০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক পেয়েছেন ৩ হাজার ৫শ’ ৫২ ভোট। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ফারুক হোসেন রিয়াজ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তৃতীয় লিঙ্গের সাদিয়া আখতার পিংকী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কোটচাঁদপুর নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ২৭%। এ উপজেলায় ইভিএম-এ ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোটচাঁদপুর আ.লীগের প্রার্থী শরিফুননেছা মিকি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিএনপি প্রার্থীরা ভোটে নিশ্চিত পরাজয় জেনে তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্য অপবাদ ছড়াচ্ছে। তিনি ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবী করেন ।
ধানের শীষের প্রার্থী কোটচাঁদপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে সরকারি দলের পক্ষ থেকে এলাকায় নানাভাবে ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছিলো। কিন্তু তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আশ্বাসে ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন তাদের কোনো কথা রাখেনি। ভোটের নামে প্রহসন করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ছিলো খুবই কম। কোটচাঁদপুরের গুড়পাড়া সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বিএনপি সমর্থিত ভোটার সাবদার আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, কয়েকদিন আগে থেকেই আমাদেরকে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন।
মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের প্রার্থী ময়জদ্দীন হামিদ নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫৭২০৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতীদ্বন্দ্বি বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষ মার্কা নিয়ে এসএম শাহাজাহান মহন ১৫৪২৪ ভোট পেয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আজিজুর রহমান আজা টিউবয়েল মার্কা নিয়ে ২৩০৫৫ ভোট পেয়ে বেসারকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতীদ্বন্দ্বি মুকুল গাজী চশমা মার্কা নিয়ে ১৯৭৫৩ ভোট পেয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাসিনা খাতুন হেনা হাঁস মার্কা নিয়ে ২৯৯৫১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতীদ্বন্দ্বি শামীমা সুলতানা শিউলী ফুটবল মার্কা নিয়ে ১৪৮৬৪ ভোট পেয়েছেন। সর্বমোট ভোট পোল হয়েছে ৭৪৭৬৭। এর মধ্য বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৭২৯৪৫টি ভোট এবং বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে ১১২২টি ভোট। মহেশপুরে উপজেলার মোট ভোটর ২৫২০৯১ জন। মহেশপুর উপজেলার প্রার্থী জেলা বিএনপির সদস্য শাহজাহান মোহন দাবি করেন, গোটা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের কোনো কেন্দ্রেই তার পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় ভোটের মাঠে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তাই তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং অফিসার রোকনুজ্জান বলেন, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরের দু’জন বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন বলে আমি লোক মুখে শুনেছি। তবে তারা লিখিতভাবে আমার কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।